Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ভোটের হাওয়ায় উড়ছে টাকা

পোস্টার
সারাদেশের অলিগলি ছেয়ে গেছে নির্বাচনী পোস্টারে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ভোটের বাতাসে না কি কাড়ি কাড়ি টাকা ওড়ে- এমনটাই ধারণা রিকশাচালক মো. মোকবুলের। এবার তা ধরতে না পারার খেদ আছে তার মনে।

ঢাকার পল্টন-মতিঝিল এলাকায় রিকশা চালান মোকবুল। নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধে রাজধানীর কর্মব্যস্ত ওই এলাকায় মানুষের উপস্থিতি কম হওয়ায় আয় কমেছে তার। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বললেন, “গ্রামে চইল্যা গ্যালে মাস চুক্তিতে মিছিল-মিটিংয়ে ক্ষ্যাপ খাটতে পারতাম। সাথে দুই বেলা খাবারও ফ্রি। কী যে ভুল করলাম!”

চলতি পথে কথা হয় মোকবুলের সঙ্গে। জানা গেল তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে।

গত ভোটের সময় মাস চুক্তিতে নেতা-কর্মীদের আনা-নেওয়া করেছেন, তার রিকশায় চড়ে ভোটের লিফলেট বিলি করেছেন নেতা-কর্মীরা। পোস্টার লাগানোর কাজও করেছেন কখনও কখনও। খাওয়া বাদেই সেবার মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করেছেন বলে জানান মোকবুল।

এদিকে ঢাকার গুলশানের পাশের নর্দা এলাকার গৃহকর্মী জোবেদা আকতার গত ৮-১০দিন ধরে নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচারের কাজে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়িয়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। এ কারণে সঙ্গে মেয়েকেও নিয়ে যান লিফলেট বিলি করতে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করলে ১ হাজার টাকা পান বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানান জোবেদা।

জোবেদা বা মোকবুল এদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, যারা কোনও না কোনও এলাকার ভোটার। তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ ঘটছে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে।

খরচের যে হিসাব মেলে

এবার নির্বাচন আয়োজনে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করছে নির্বাচন কমিশন। এই অর্থের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়।

এবার ভোট আয়োজনের খরচ বেড়ে আগের বারের দ্বিগুণ হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বরাদ্দ ছিল ৭০০ কোটি টাকা। এবার দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

তবে ভোট ঘিরে অর্থ ব্যয়ের বড় অংশ হয় প্রার্থীদের প্রচারে। ভোটে প্রার্থীরা কত খরচ করতে পারবেন, তার একটি সীমা বেঁধে দেয় ইসি। আগের মতো এবারও ভোটার প্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ টাকা। তবে ভোটার যতই হোক না কেন, একটি সংসদীয় আসনে একজন প্রার্থী ২৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে পারবেন না।

সংসদীয় আসনগুলোর ভোটার সংখ্যার দিকে চোখ বোলালে দেখা যায়, ঝালকাঠি-১ ও পিরোজপুর-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজারের নিচে। অর্থাৎ এই দুটি আসনে যে কোনো প্রার্থীর ব্যয় সীমা ২৫ লাখ টাকার নিচে থাকছে। বাকি সব আসনে একেকজন প্রার্থীর ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করার অনুমোদন রয়েছে।

এই হিসাবে ৩০০ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় কিংবা সমর্থিত ৩০০ প্রার্থী ২৫ লাখ টাকা করে ব্যয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। তাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৭৫ কোটি টাকা খরচ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৮২ আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে, তার মধ্যে ২৬টি আসন আবার আওয়ামী লীগ তাদের ছেড়ে দিয়েছে। ২৬টি বাদ দিলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকে ২৫৬ জন। তারা প্রতিজন ২৫ লাখ টাকা খরচ করলে লাঙ্গলের প্রার্থীদের অনুমোদিত খরচের অঙ্ক দাঁড়ায় ৬৪ কোটি টাকা।

এদের বাইরে আওয়ামী লীগের বহু নেতা এবার শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের এবং অন্য দলগুলোর এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১০০ ধরে নিলেও তাদের নির্বাচনী খরচের অঙ্ক দাঁড়ায় ২৫ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রার্থীদের ইসি অনুমোদিত নির্বাচনী ব্যয়ে অঙ্ক দাঁড়ায় ১৬৪ কোটি টাকা।

খরচের যে হিসাব মেলে না

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩-৪টি নির্বাচনী ক্যাম্প বসিয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে কর্মী বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসে সরগরম রাখেন ক্যাম্পগুলো। প্রার্থীর মনোনীন ওয়ার্ড নেতা রাত ১০টার সময় ক্যাম্প অফিসে এসে প্রত্যেককে গুনে গুনে ৩০০ টাকা করে দিয়ে দেন। এর বাইরে সন্ধ্যায় রুটি-কলা ও চা-নাস্তার বিল দেন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। কোনও কোনও ক্যাম্পে স্পিকার দিয়ে প্রার্থীর গান বাজানোর খরচও বহন করতে হয়। 

প্রার্থীদের এই খরচ নিয়ে রয়েছে বড় প্রশ্ন। বর্তমান সময়ে একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকার অনেক বেশি হয়। কিন্তু সেই হিসাব তারা প্রকাশ করেন না। নির্বাচন কমিশনে তারা যে তথ্য দেন, তা মূল খরচের একটি অংশ মাত্র।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকার পাশের একটি আসনে ভোট করেছেন এমন একজন রাজনৈতিক নেতা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নির্বাচনের সর্বনিম্ন খরচও ২৫ লাখ টাকার বেশি। ফলে বাধ্য হয়েই প্রার্থীরা প্রকৃত খরচ গোপন করে। তাছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের আয়ের উৎস নিয়েও অনেক প্রশ্ন থাকে। একারণে তারা কখনোই প্রকৃত খরচের কথা প্রকাশ্যে বলতে চান না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, প্রার্থীদের খরচের দুটি প্রধান খাত। একটি ভোটারদের পেছনে প্রচার-প্রচারণার খরচ এবং অন্যটি হল বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতা আদায়ের খরচ। তবে সব আসনের প্রার্থীর খরচ এক রকম নয়। ঢাকা বা এর পাশের এলাকার ভোটের খরচ এবং অন্যান্য জেলার সব আসনের খরচ এক রকম নয়।

খরচের মূল খাত ভোটের আগে পোস্টার ছাপানো থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণা, জনসংযোগ, কর্মীদের চা-নাস্তার বিল, এলাকাভিত্তিক নির্বাচনী অফিস ভাড়া ও পরিচালনা, ভোটের দিন রিকশা ভাড়া করে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই অর্থের অধিকাংশ খরচ হয় প্রার্থী ও তার দলীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে।

ঢাকা ও আশপাশের আসনে বর্তমানে নির্বাচন করতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ১ কোটি টাকা খরচ করতে হবে বলে মনে করেন ওই রাজনৈতিক নেতা।

তিনি বলেন, “বর্তমানে একটি সংসদীয় আসনের সব এলাকায় ভোটারদেরকে প্রার্থীর পোস্টার দেখাতে হলে একই সময়ে মোট ১ লাখ পোস্টার লাগাতে হবে। তবে পোস্টার লাগানো শুরু হয় মনোনায়ন পাওয়ারও আগে, প্রার্থী হতে চাই এমন শিরোনামে। এরপর মোট তিন দফায় নির্বাচনী পোস্টার লাগাতে হয়। প্রতিদিনই কিছু না কিছু পোস্টার নষ্ট হয়, ছিঁড়ে ফেলা হয়। ফলে ভোটের আগের রাত পর্যন্ত পোস্টার সাঁটতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে একজন প্রার্থীকে ৩ লাখ পোস্টার কমপক্ষে ছাপতে হয়।”

ঢাকা ১০ আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। তিনি পোস্টার ছেপেছেন মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডের এনএন প্রিন্টার্স থেকে। এই প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি ১৮ বাই ২৩ ইঞ্চি সাদা-কালো পোস্টার ছাপতে ৫ টাকার বেশি নিচ্ছে। লেমিনেশনসহ পোস্টার ছাপানোর খরচ পড়ছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। সেই হিসেবে এখন ৩ লাখ পোস্টার ছাপতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়।

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টারে। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

এনএন প্রিন্টার্সের মালিক মো. শাহীন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘বর্তমানে কাজের চাপ বেশি। ভোটের আগে আর নতুন করে কোনো পোস্টার ছাপানোর অর্ডার নিচ্ছি না। সারা রাত কাজ করেও শেষ করতে পারছি না। ভোটের পর আবার আগের মতো অন্যান্য কাজের অর্ডার নেব।”

ঢাকা-১১ আসনে ৪ লাখ ২৫ হাজারের বেশি ভোটার। ওই আসনের প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পে কর্মীদের দিয়ে ভোটারদের নাম ও নম্বর লেখাচ্ছেন। এই ভোটার নম্বর সরবরাহের জন্য একটি লিফলেট ছাপতে হয়। এক টাকা করে খরচ এই লিফলেট ছাপাতে। সেই হিসেবে ওই আসনের প্রত্যেক প্রার্থীর ভোটার নম্বরসহ লিফলেটের খরচ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি। কারণ অনেক লিফলেট লিখতে গিয়ে নষ্টও হয়। এছাড়া ভোটারদের নাম ও নম্বরসহ অন্যান্য তথ্যের ওয়ার্ড ও পৌরসভাভিত্তিক সিডি প্রার্থীদের সরবরাহ করে ইসি। এই সিডি প্রতিটি ৫০০ টাকা করে দাম। এরও খরচ আছে প্রত্যেক প্রার্থীর ৫০ হাজার টাকার বেশি।

এছাড়া পিভিসি ব্যানার ও ফেস্টুনের খরচ ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা প্রতিটি। একটি নির্বাচনী আসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০টি করে পিভিসি ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটাতে হলে দেড়শ থেকে ২০০ পিভিসি ব্যানার ও ফেস্টুন লাগবে। এর পেছনে প্রার্থীদের ব্যয় করতে হবে অন্তত ২ লাখ টাকা।

গত বার গাজীপুরের একটি আসনে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে ওই প্রার্থী বলেন, ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একেক প্রার্থীর কমপক্ষে ২-৩টি নির্বাচনী ক্যাম্প বসাতে হয়। ফলে একটি আসনে ৫০-৬০টির বেশি নির্বাচনী অফিস থাকবে একজন প্রার্থীর। প্রতিদিন সেখানকার চেয়ার-টেবিল ভাড়া, নেতাকর্মীদের চায়ের বিল, কর্মীদের হাজিরা বাবদ টাকা খরচ হবে। নির্বাচনের শেষ ১০ দিন এই অফিসগুলি চালানোর জন্য একজন প্রার্থীকে ২০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে।

এছাড়া ডিজিটাল প্রচারণাতেও এখন রাজনৈতিক নেতারা খরচ করছেন। নির্বাচনী এসএমএস পাঠাচ্ছেন। গান রেকর্ড করছেন। এ ধরনের একটি গান রেকর্ডিংয়ের সর্বনিম্ন খরচ ২০ হাজার টাকা। এখানে ভোটার প্রতি ৫০ পয়সা খরচ করলেও ঢাকার একটি আসনে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা সর্বনিম্ন খরচ হবে একজন প্রার্থীর।

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মাইকিং করতে রিকশা ভাড়া ও মাইকের খরচ অন্তত আড়াই হাজার টাকা। একটি ওয়ার্ডে একটি করে রিকশা নামালেও একটি নির্বাচনী আসনে প্রতিদিন ১৫-২০টি মাইক ভাড়া ৫০ হাজার টাকার ওপরে খরচ হবে একজন প্রার্থীর।

ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী পোলিং এজেন্ট দিতে হয় প্রার্থীদের। প্রত্যেক এজেন্টকে অন্তত ১ হাজার করে টাকা দিতে হয় এই দায়িত্ব পালনের জন্য। একটি নির্বাচনী আসনে ১২০টি ভোট কেন্দ্র থাকলে ওই প্রার্থীর প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে খরচ হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এছাড়া ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি যাওয়া, নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের জন্য মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার ভাড়া, দলের কর্মীদের মোটরসাইকেলের তেলের খরচ সব মিলিয়ে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ১ লাখ টাকা করে ব্যয় হতে পারে।

এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা, ভোটের দিন নেতা-কর্মীদের দুপুরের খাবার ও চা-নাস্তার বিল দেওয়া, ভোটার আনার জন্য রিকশা ভাড়া-এসব খরচ নির্ভর করে প্রার্থী কী পরিমাণ জনসমাগম দেখাতে চান তার ওপর।

খুলনার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইয়াসিন আরাফাতের মটরসাইকেল আছে। তিনি জানান, ওই ওয়ার্ডের এক রাজনৈতিক নেতা তাকে ওই আসনের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের জন্য প্রায়ই ডেকে নিয়ে যান। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি মটরসাইকেল এভাবে ডেকে আনা হয়। দুই-তিন ঘণ্টা মহড়া দিয়ে যে যার মোটরসাইকেল নিয়ে বাসায় চলে যান। এ জন্য ওয়ার্ড নেতা ইয়াসিন আরাফাতসহ প্রত্যেক মোটরসাইকেলচালককে ১০০ টাকা তেল ও ১০০ টাকা নাস্তার বিল দেন।

এই সব খরচ যোগ করলে বর্তমানে একটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনের খরচ কোনোভাবেই ১ কোটির টাকার কম হবে না বলে মনে করেন দুই দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক ছাত্রনেতা।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভোটের খরচ ২৫ লাখ টাকাও দেখান না প্রার্থীরা। কারণ এই খরচের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। একারণে খরচ দেখাতে হয় ২৪ লাখেরও কম। তা না হলে ভ্যাটসহ খরচ ২৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেলে জরিমানা গুণতে হবে।”

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। তা অমান্য করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে। এছাড়া ভোটের পর নিজ দায়িত্বে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন নামিয়ে ফেলতে হয়।

এবারের নির্বাচনে সবমিলিয়ে প্রার্থী মোট ১ হাজার ৮৯৬ জন, যার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৮ শতাংশ। আর দলীয় প্রার্থী ৮২ শতাংশ।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩০০ প্রার্থীদের প্রত্যেকের ভোটের খরচ ১ কোটি টাকা করে হলে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে নির্বাচনকে ঘিরে। কিন্তু তারা দেখাতে পারবেন ৭৫ কোটি টাকা খরচ।

অর্থনীতিতে কী প্রভাব?

নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের ব্যয়ের বড় অংশ সরাসরি তৃণমুল জনগণের হাতে যাচ্ছে। কেননা, প্রতিদিনই চলছে পোস্টার লাগানো, নির্বাচনী ক্যাম্পে বসা, জনসমাগম করা, পিকআপ বা রিকশায় করে মাইকিং করা, ভোটাদের নাম ও নম্বর লেখা, লিফলেট বিলি করাসহ নানা কাজ।

নগদ অর্থের এই প্রবাহ মূল ধারার অর্থনীতিতে সরাসরি বড় ধরনের প্রভাব না রাখলেও এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব থাকে বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। 

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দুই হাজার কোটি টাকার অনেক বেশি খরচ হবে এই নির্বাচনে। এতে ছোট ছোট কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়বে। যেমন, প্রিন্টিং ব্যবসা, মাইকিং ও ডেকোরেশনের ব্যবসা এমনকি বিড়ি-সিগারেটের ব্যবসা ভালো হবে।

“এতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনো প্রভাব থাকে না। তবে জনগণের হাতে বাড়তি কিছু টাকা যাওয়ায় সেই টাকা দিয়ে তারা তো কিছু কেনাকাটা করবে। তাতে চাহিদা বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করবে।”

তবে এই টাকাগুলি অর্থনীতিতে যোগ হওয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন তিনি। কেননা, বর্তমানে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টে কিছুটা চাপ আছে। টাকা সিন্দুকে বা বালিশের নিচে পড়ে থাকলে তা অর্থনীতিতে কোনও কাজে আসে না, মত তার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত