ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এটাই বুঝতে পেরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
সংলাপে কী বিষয়ে আলাপ হয়েছে- এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “কেবল বিএনপির কাছেই নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও আগামী নির্বাচনের আয়োজন এক নম্বর প্রায়োরিটি। আমরা নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি।”
বিএনপির সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই সংলাপের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করল সরকার। বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের এক সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর আগামী নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে কোনও কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “মাস, দিনকাল নিয়ে আমি কথা বলি না। ওনারা বলছেন নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। তারা সবকিছু দেখছেন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।
“আমরা নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা করেছি। নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের মতামত দিয়ে এসেছি।”
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে এসেছে বিএনপি।
ফখরুল বলেন, “আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কবে হবে সেই রোডম্যাপ দিতে বলেছি। আমরা এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেওয়ার জন্য যে আইন করা হয়েছে, অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা বাতিল করতে বলেছি।”
বিতর্কিত কোনও ব্যক্তি যেন কখনো নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে স্থান না পায়, সে কথাও প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আর কী কী বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে- জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য মূল হোতা বিচারপতি খায়রুল হক (সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক)। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার মূল নায়ক ছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।
“প্রশাসনে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারর দোসর হয়ে কাজ করেছে, সহায়তা করেছে, লুটপাট, অনাচার, অত্যাচার, গুম-খুনের ব্যাপারে তাদের বেশিরভাগই এখনো স্ব স্ব জায়গয় বহাল আছে। তাদের অবিলম্বে সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আনার কথা বলেছি।”
এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দু-একজনের প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানালেন ফখরুল। তিনি বলেন, “দু-একজন আছেন যারা বিপ্লবের মূল স্পিরিটকে ব্যাহত করছেন। তাদের সরানোর কথা বলেছি। গত ১৫ বছরের পদোন্নতি বঞ্চিত সরকারি কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিতেও প্রস্তাব করেছি।”
এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগে দলীয় নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, নতুন পিপি-জিপি নিয়োগ, ২০০৭ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হওয়া সব মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজানো মামলা প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি।
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী, সাবেক আমলা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে, কার সহায়তায় দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতা প্রসঙ্গেও গভীরভাবে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করেছে বিএনপি।
বিএনপি ছাড়াও একই দিনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজত ইসলাম ও এবি পার্টির সঙ্গে সরকারের সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।