Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

কামরুলের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নাজিরের কার্যালয় ভাংচুর

Nazir-Mamun-Office
[publishpress_authors_box]

সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করার অভিযোগ তুলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির শাহ্ মো. মামুনের কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে একদল আইনজীবী।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১টার পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় নাজির মামুনের কার্যালয়ে ভাংচুরের এ ঘটনা ঘটে।

এক সময়ের আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পিপি ছিলেন। ঢাকা বারেরও সদস্য তিনি।

নাজির মামুন বলছেন, কামরুল ইসলাম আগে যখন মহানগর আদালতে আসতেন তখন তার অফিসে বসতেন। মঙ্গলবার সকালে একটি কাজে সিএমএম আদালতে যান তিনি। সেখানে হঠাৎ করেই কামরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হলে তিনি কুশল বিনিময় করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আড়াই মাস পর গতকাল সোমবার ঢাকার উত্তরা থেকে কামরুলকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।

ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে তাকে হাজির করা হয় ঢাকার সিএমএম আদালতে। মামলায় তাকে ১০ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়।

সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়।
সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এ সময় আদালতে আসেন কামরুল ইসলামের ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিতও। আসেন নাজির মামুনও। এক পর্যায়ে কামরুল ইসলামকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেন মামুন।

মামুন সে সময় কামরুল ইসলামের ছেলেকে আদালতের ভেতরে প্রবেশের বিষয়ে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তখনই কয়েকজন আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এরপর দুপুরে আইনজীবীরা আদালতপাড়ায় বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা মহানগর দায়রা জজ আতালতের সামনে যান। পরে কয়েকজন আইনজীবী নাজিরের কার্যালয়ে গিয়ে ভাংচুর চালান। তখন কার্যালয়ে ছিলেন নাজির শাহ্ মো. মামুন।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নাজির মামুনের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনকে অবহিত করেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। পরে বিচারক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

এর আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী মারজিয়া হিরা নাজির মামুনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অভিযোগ দেন।

অভিযোগে বলা হয়, সকালে কামরুল ইসলামের রিমান্ড শুনানির সময় তার ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিত ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতের লাল সালুর ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিল।

তখন মহানগর আদালতের নাজির মামুন আসামি কামরুল ইসলামকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেন। আসামির ছেলেকে আদালতের ভেতরে প্রবেশের বিষয়ে সহযোগিতা করেন তিনি। নাজির গত ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আসামি কামরুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগিতা করেছিল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অফিস সহায়ক মিজানুর রহমান বলেন, “দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে কিছু আইনজীবী এসে নাজির স্যারের অফিসে ভাংচুর করে। নাজির স্যার তখন অফিসে ছিলেন না। কাজে বাইরে গেছেন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, “আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে কিছু একটা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমার ফোর্স সেখানে গেছে। তারা রিপোর্ট দিলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “আমি দেশের বাইরে রয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জানি না।”

ভাংচুরের কারণ ও বিষয়ে জানতে চাইলে নাজির শাহ্ মো. মামুন বলেন, “আমি অফিসে নেই। কাজে বাইরে আসছি। শুনেছি আমার অফিসে ভাংচুর করা হয়েছে। কে বা কারা কী কারণে হামলা করেছে কিছু জানি না।”

কামরুলের সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মহানগর আদালতে কামরুল ইসলাম যখন আসতেন তখন আমার অফিসে বসতেন। এইভাবে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। আজকে সকালে একটি কাজে সিএমএম আদালতে যাই।

“হঠাৎ করে সাবেক মন্ত্রী কামরুলের সঙ্গে দেখা হয়। তখন তিনি আমাকে ডেকে বলেন, এই নাজির কেমন আছো? আমি কাজ শেষে চলে এসেছি।”

কামরুল ইসলামের ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিতকে আদালতের ভেতরে প্রবেশে সহযোগিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাজির মামুন বলেন, “তার ছেলেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না।”

ঢাকা বারের আইনজীবী, এক সময়ের পিপি কামরুল ২০০৮ সালে প্রথম ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সরকারে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তখন তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালত নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল।

পরে ২০১৪ সালের সরকারে কামরুল খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এরপর মন্ত্রিত্ব না পেলেও ২০১৮ এবং এই বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও এমপি হন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতেও তার স্থান হয়।

মঙ্গলবার সেই আদালতে খুনের মামলার আসামি হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বর্তমান পরিস্থিতি চিরদিনের নয় বলে স্মরণ করিয়ে দেন কামরুল ইসলাম।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার এই আওয়ামী লীগ নেতা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, “সব দিন তো এক রকম যায় না। এই দিন দিন না।”

তার এই কথা শুনে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থিত আইনজীবীরা ক্ষেপে ওঠেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান আসামি কামরুলকে ৮ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আদেশ দেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত