Beta
রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫

রপ্তানি আয় বাড়ছেই, ডিসেম্বরে বেড়েছে ১৮ শতাংশ

ডলার
মার্কিন ডলার
[publishpress_authors_box]

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের মতো বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের আরেক উৎস রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। টানা তিন মাস চার বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) চার মাসই চার বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়েছে।  

মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে যে খাত থেকে, সেই পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকরা।

সদ্য শেষ হওয়া ডিসেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৬২ কোটি ৭৫ লাখ (৪.৬২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের নভেম্বর মাসের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।

সবশেষ নভেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ (৪.১২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেন রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের নভেম্বর মাসের চেয়ে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এ নিয়ে টানা তিন মাস চার বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে আয় হয় যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য তিন ও ৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৬১ ও ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছয় মাসে (প্রথমার্ধ, জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ এসব তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, ইপিবি রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইপিবি।

এর পর রপ্তানি আয়ের সংশোধিত বা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করছে ইপিবি। গরমিল ধরা পরার পর গত ৯ অক্টোবর চলতি অর্থবছরের তিন মাসের (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করেছিল ইপিবি।

৪ ডিসেম্বর নভেম্বর মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়। বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে ডিসেম্বর মাসের তথ্য।

পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭.৪৫ শতাংশ

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এই ছয় মাসে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭ কোটি ৫৫ বিলিয়ন ডলার।

হিসাব বলছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এই ছয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৯ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

অন্যান্য খাত

ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য খাতের মধ্যে কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মাসে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ১০ কোটি ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে আয়ের অঙ্ক ছিল ৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।

ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাবে কৃষি পণ্য থেকে আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।

ডিসেম্বরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। ছয় মাসের হিসাবে বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

ডিসেম্বরে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ; তবে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কমেছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ।

ডিসেম্বরে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ; ছয় মাসে বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে; উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকাণ্ড।

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ গত ১৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অস্থিরতার মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “পোশাক রপ্তানির এখন ভরা মৌসুম (পিক সিজন) চলছে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি আমাদের পোশাক রপ্তানির পিক সিজন। সব সময় এই তিন মাস আমাদের রপ্তানি বাড়ে। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রপ্তানি আয়ের তথ্যে।

“জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও রপ্তানি আয় বাড়ায় আমরা খুশি। তবে আমাদের অর্ডার কিন্তু কমছে। জানি না আগামী মাসগুলোতে কী হবে।”

হাতেম বলেন, “চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। আমাদের হিসাবে জুলাই মাসের মধ্যে এক সপ্তাহেই পোশাক শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের উপরে। আর ব্যাংক বন্ধ থাকায় তো রপ্তানির উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।”

“এই অস্থিরতা-অনিশ্চতা না থাকলে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়ত”, বলেন বিকেএমইএ সভাপতি।

রিজার্ভ বাড়ছে

রিজার্ভের আরেক উৎস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও বাড়ছে বেশ ভালো গতিতে।

গতকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) রেমিটেন্স প্রবাহের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাতে দেখা যায়, দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে একদিনে দুই রেকর্ড হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ২৬৩ কোটি ৮৯ লাখ (২.৬৪ বিরিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা।

একক মাসের হিসাবে এই অঙ্ক অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

অন্যদিকে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিদায়ী ২০২৪ সালে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৮৬ লাখ (২৬.৮৯ বিলিয়ন) রেমিটেন্স দেশে এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। বছরের হিসাবে এর আগে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০২২ সালে, ২২ দশমিক শূন্য সাত (২২.০৭ বিলিয়ন) ডলার।

রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ায় রিজার্ভও বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

গত ১২ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

এক বছর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি রপ্তানি আয়, রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত