রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ যেসব সংস্কারে কমিশনগুলো সুপারিশ দেবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন—এই চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়।
এরপর বিকালে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা এসব প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গতবছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্কারে এ পর্যন্ত ১৫টি কমিশন গঠন করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলে আসছে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
বুধবার মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনগুলোর দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে যাবে সরকার। এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ওপর।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে ন্যূনতম সংস্কার, নাকি প্রত্যাশিত মাত্রায় বিস্তৃত সংস্কার করা হবে। আর ন্যূনতম সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে তখন ন্যূনতম সংস্কারের ক্ষেত্রে কোন কোন সুপারিশ প্রাধান্য পাবে, তা চিহ্নিত করা হবে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পুরো কাজটা অন্তর্বর্তী সরকার সম্পন্ন করে যেতে পারবে বলে আশা এই উপদেষ্টার।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা যেন বাস্তবায়ন হয়, সেদিকে সব অংশীজন গুরুত্ব দেবে বলে আশা প্রকাশ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কার কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত প্রস্তাবনা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে তাদের সঙ্গে এক ধরনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
প্রতিটি কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ (১৫ জানুয়ারি) চারটি কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছে এবং অন্য দুটি কমিশন বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। প্রতিবেদনের কোথায় কোথায় প্রাধান্য দেওয়া উচিত, সেটি চিহ্নিত করে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) একটা প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টগুলো ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে।
কয়েকটি ধাপে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার আইন ও বিধি প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে বলে জানান আসিফ নজরুল।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সব অংশীজনের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা চিরতরে বিলুপ্তি করা জুলাই বিপ্লবের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। আশা করি, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা বাস্তবায়ন হবে।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
