Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

গভর্নরের কাছে যেসব সুবিধা চাইল বিসিআই

ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল রবিবার বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল রবিবার বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ব্যাংক ঋণ-সংক্রান্ত সুবিদাধি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। সংগঠনটি বলছে, ঋণ পরিশোধের সুবিধার্থে এক্সিট নীতিমালায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। বড় শিল্পের জন্য ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১২ বছরের জন্য এক্সিটের সুবিধা থাকা দরকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ডাউনপেমেন্ট ১ শতাংশ এবং ১৫ বছরে এক্সিটের সুবিধা থাকা দরকার। তাছাড়া ঋণ পরিশোধের সুবিধার্থে বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রিরও অনুমতি থাকা দরকার।

রবিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এসব দাবি জানায়।

এ সময় তারা ঋণ শ্রেণিকরণের নীতিমালাও সংশোধন করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসার দাবি জানান।

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) বলেন, দেশে বর্তমানে উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোনও প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ। চাহিদামত এলসি খোলা যাচ্ছে না, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.৬৬ শতাংশ। নতুন গ্যাস সংযোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর/মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে।

“আমাদের কোন এক্সিট পলিসি নাই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের এক্সিট পলিসি থাকা দরকার।”

বিসিআই সভাপতি বলেন, “রপ্তানিমুখী শিল্পের নগদ সহায়তা পেতে আবেদনের পর ৯ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগছে। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ সময় মত তাদের অপারেশন কস্ট মেটানো, তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি, নগদ সহায়তা প্রদানের সময়সীমা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।”

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) বলেন, “ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার ফান্ডেড ১৫ শতাংশ এবং ননফান্ডেড ১০ শতাংশ করা হয়েছে এখানে টাকার অবমূল্যায়নকেও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। আমার মনে হয় এটা আগের মত ২৫ শতাংশে রাখা উচিত। ঋণ শ্রেণিকরণের প্রথম ধাপ ৩ মাসে থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস এবং এর দ্বিতীয় ধাপ ৯ মাস করা দরকার।”

তিনি বলেন, “সিঙ্গেল কোম্পানি একটি সিঙ্গেল আইডেনটিটি। আন্তর্জাতিক প্রাকটিস হচ্ছে কেউ যদি গ্রুপ অব কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করে তবে তাদের গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গ্রুপ হিসেবে নিবন্ধন না করা হলেও ৩-৪ জন পরিচালক কমন হলে তাদেরকে গ্রুপ হিসেবে দেখা হয় এবং কোনও একজন পরিচালক কোম্পানি থেকে বের হয়ে গেলেও সে অন্য কোথাও যদি কোনোভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে তার লায়াবিলিটি নিতে হয়। এই প্রক্রিয়াটির একটি স্বচ্ছতা থাকা দরকার।

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সিএমএসই খাত সব থেকে ক্ষতির মূখে পড়েছে। আমাদের সিএমএসই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি, সিএমএসই খাতের বিশেষ তহবিল এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ খাতে একটি জেলা বা একটি ক্লাস্টারকে পাইলট ধরে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থায়ন করা যেতে পারে।”

সভায় উপস্থিত থেকে নিজ নিজ সেক্টরের সমস্যা তুলে ধরেন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান সোহেল, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, উত্তরা মোটর করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক, বিসিআইয়ের পরিচালক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাদাব আহমেদ, বিসিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মন্নু গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম স্বপন, বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. শাহরিয়ার।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরাও মনে করি এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য এখন মূদ্রাস্ফীতি কমানো– একথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি আগামী জুন নাগাদ মূদ্রাস্ফীতি ৭-৮ (শতাংশ) এর মধ্যে থাকবে। আমাদের বেসরকারি খাতকে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। আমরা সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য সূপারিশ করছি, যাতে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে পারি। কিন্তু আমানত বাড়ছে না। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে হলে আমানত বাড়াতে হবে।”

গভর্নর বলেন, “বর্তমানে ডলারের সংকট নেই। অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে কিন্তু একটু সময় লাগবে। আগামী রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত না হয় সে দিকে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। আমি মনে করি দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটে যেতে হবে, আমাদের করপোরেট বন্ডের জন্য কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত