Beta
শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

দল করতে চাইলে ছাত্রদের সরকার ছাড়া উচিৎ : ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থেকে রাজনীতিতে জড়ালে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে- একথা বলার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বললেন, রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে ছাত্রদের উপদেষ্টার পদ ছাড়া উচিৎ।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি। বুধবার সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয় সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশ।

প্রথম অংশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন তোলার পর তার প্রতিক্রিয়া আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টার পদ নেওয়া দুই ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পক্ষ থেকে।

ফখরুলের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশ প্রকাশের আগেই তা নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, তারা দল গঠনে যুক্ত হলে সরকারে আর থাকবেন না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসন অবসানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে উপদেষ্টা হয়েছেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের তিনজন।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ কিছু বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভিন্নমত দেখা দেয়। পাশাপাশি অভ্যুত্থানের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াও সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপির নেতারা।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেছিলেন, ছাত্ররা যদি সরকারে পদ নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে, তবে নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষতার স্বার্থে অন্য সরকারের প্রয়োজন হবে।

বুধবার সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর তার প্রতিক্রিয়ায় বৈমস্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনের সময়কার মুখপাত্র এবং বর্তমান সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ দেড় যুগ আগে দেশে রাজনৈতিক সংকটের মুখে সেনা সমর্থনে অনির্বাচিত সরকার গঠনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

তিনি ফেইসবুকে লেখেন, “১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।”

মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশ প্রকাশের পর দেখা যায়, সেখানে তিনি ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আরও সরাসরি কথা বলছেন, একে কিংস পার্টির সঙ্গেও তুলনা করেছেন।

ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকে কীভাবে দেখছেন- এই প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা তো তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সেক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাব।

“কিন্তু একটা কথা অলরেডি উঠে আসছে মিডিয়াতে। কিংস পার্টি বলে একটা কথা উঠছে। আমি মনে করি, এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিৎ। অর্থাৎ সরকারের কোনও সাহায্য না নিয়ে তারা যদি দল গঠন করতে চায়, সেটা তাদের জন্যই ভালো হবে।”

সরকারে যারা পদে রয়েছেন, দলে যুক্ত হলে তাদের সরে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়ে ফখরুল বলেন, “সরকারের কোনও সুবিধাই তাদের নেওয়া উচিৎ না।

“দল তো তারা গঠন করছে, তাদের প্রতিনিধিরা সরকারে আছে। দ্যাটস এনাফ। হেলিকপ্টারে করে গিয়ে আপনার শীতবস্ত্র দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকাতে। আপনার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওপরে, জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওপরে নানা রকম প্রভাব তো তারা বিস্তার করছেই।”

তার এই বক্তব্য প্রকাশের আগেই ফেইসবুকে এক পোস্টে এর উত্তর দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টা হওয়া আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তিনি লিখেছেন, “সরকারে থেকে রাজনৈতিক দলের সাথে কোনও প্রকার সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে আমরাও। উপদেষ্টাদের কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়েই করবে।”

একই সঙ্গে তিনি কোনও দলের নাম না ধরে লিখেছেন, “রাজনৈতিক দলেরও সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা অনুচিৎ। বিভিন্ন সরকারি ও সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে তদবির বা চাপ প্রয়োগ করা অনুচিৎ।”

আন্দোলনে বিজয়ের পরপরই বিএনপির নির্বাচনের দাবি তোলা নিয়ে সমালোচনামুখর হয়েছিল অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা। তারা তখন এটাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছর চেষ্টা চালিয়েও আওয়ামী লীগকে হটাতে পারেনি। কিন্তু তারা সফল হয়েছে। পাল্টায় বিএনপি নেতাদের মধ্য থেকে এখন এই কথা আসছে, ৩৬ দিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়নি, বিএনপির দীর্ঘ আন্দোলনও এতে প্রভাব রেখেছে।

সাক্ষাৎকারে ফখরুল বাংলাদেশের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তরুণ-যুবক-ছাত্ররা যখন আপনার ফাইনালি নেমে আসে, তখনই আন্দোলন সফল হয়। এটা সত্য কথা আমরা গভর্নমেন্টকে ফেলে দিতে পারিনি। তার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ যেটা ছিল বলে আমার মনে হয়েছে যে ছাত্র বা তরুণরা তখন পর্যন্ত সেভাবে আন্দোলনে নেমে আসেনি।”

জুলাই আন্দোলনের শুরুটা মনে করিয়ে দিয়ে ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ফখরুল বলেন, “চাকরির জন্যে কোটা সিস্টেম নিয়ে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত। একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে হাসিনার পতন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবার দাবি নিয়ে কিন্তু আন্দোলন শুরু হয়নি। এটা সবশেষে তিন-চার দিন আগে থেকে তারা হাসিনার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে।

“সুতরাং এই বিষয়ে কেন জানি না, মিডিয়া থেকেও একটা কথা উঠছে যে, জুলাই-আগস্টেই একমাত্র আন্দোলন হয়েছে। এটা তৈরি হয়েছে, স্পার্ক একটা। একটা স্ফুলিঙ্গের দরকার ছিল। সেই স্ফুলিঙ্গটা ছাত্ররা জ্বালিয়েছে।”

এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সঙ্গে তখন যোগাযোগ ছিল বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

নাহিদ ফেইসবুকে লিখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছিল।  

“আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়ত সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেকদিন স্থায়ী হবে, এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয় নাই।”

অভ্যুত্থানের পর বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে নাহিদ লিখেছেন, “৫ অগাস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছে, তখন আমাদের আপসকামী অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন।”

নাহিদ বলেন, তাদের বর্তমান সরকার জাতীয় সরকার না হলেও তাতে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশগ্রহণ রয়েছে।

“সব পক্ষই নানান সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ অগাস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানান স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত