সিলেট বিভাগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ১৮ জনের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’।
সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শনিবার নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে অনুদানের চেক দেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এমবিএর ছাত্র ছিলেন মুগ্ধ।
চেক দেওয়ার সময় ফাউন্ডেশনের নেতারা জানান, সারাদেশ থেকে ১ হাজার ৬শ জনের বেশি শহীদ পরিবারের তালিকা তাদের কাছে এসেছে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে সিলেট বিভাগে নির্বাচিত ১৮ পরিবারকে অনুদানের চেক দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। সেগুলো হাতে এলে তাদের পরিবারকেও অনুদান দেওয়া হবে।
চেক দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, “শুধু নির্বাচনের জন্য হাজার হাজার মানুষ জীবন দেয়নি, এই অভ্যুত্থানও হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমে গত ১৬ বছর ধরে মানুষ বিরক্ত হতে হতে দেওয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে গিয়েছিল।
“ফ্যাসিস্ট সরকারকে ১৬ বছরে দেশের নামিদামি রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এক চুলও সরাতে পারেনি। এই অভ্যুত্থান কিছু লোক দিয়ে হয়নি। শেখ হাসিনা কিছু লোকের জন্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। পুরো দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছিল বলেই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, “এই নির্বাচন কমিশন সংস্কার করা না হলে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যাবে না। আর শুধু একটা নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে না। এর সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান জড়িত।
“এর মধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদেরও সংস্কার করতে হবে। তা না হলে নির্বাচন দিলে আবার জবরদখলের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে। আবার এই নির্বাচন ঘিরে কোনও সমস্যা দেখা দিলে সেজন্য একটা বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। তাই বিচারব্যবস্থারও সংস্কার প্রয়োজন।”
হাই কোর্টে এখনও আওয়ামী লীগের কিছু দোসর-ফ্যাসিস্ট রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা যোগ্যতাবলে সেখানে যায়নি। তোষামোদি আর তেলবাজি করে সেখানে গেছে। তাদের এই জায়গা থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যারা এই জায়গাগুলোর জন্য যোগ্য, তাদের সেখানে বসাতে হবে।”
রাষ্ট্র সংস্কারে কত সময় লাগবে এবং কতদিনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে- এই প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস বলেন, “রাষ্ট্রের সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া হবে- এমনটি নয়। আবার সংস্কার করতে ৫-৬ বছর লাগবে- বিষয়টিও তা নয়। কিন্তু সংস্কারের জন্য একটা যৌক্তিক সময় লাগবে।
“কোনও বিবেকবান মানুষ তার জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারবে না যে, এক বছরের মধ্যে সবকিছু সংস্কার হয়ে যাবে। ১৬ বছর ধরে যে সিস্টেমগুলো ধ্বংস করা হয়েছে, সেই সিস্টেমগুলো সংস্কার করতে একটা যৌক্তিক সময় প্রয়োজন।”
সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিগত ১৬ বছরসহ দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের সংবিধান মানুষকে একটি ‘জনতার সরকার’ উপহার দিতে পারেনি। তাই সংবিধান সংস্কারেরও প্রয়োজন আছে।”