তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে নিয়মিত-ই নানা ঘটনা ঘটে। সেসবের অনেকটাই চলে যায় আড়ালে। খুব বড় কিছু না হলেও তা নিয়ে উচ্চাবাচ্চ্য হয় না। এবার সেই রকমই বড় কান্ড ঘটেছে ঢাকা তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে।
পূবেরগাঁও ক্রিকেট একাডেমি মাঠে সোমবার তেজগাঁও ক্রিকেট একাডেমি ও সাফফির স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচে মরামারির ঘটনা ঘটেছে। ম্যাচ চলাকালীন দুই দলের ক্রিকেটাররা অনবরত স্লেজিং করেছেন বিপক্ষকে।
ম্যাচ শেষে সৌজন্য বিনিময়ের সময়েও তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে। তর্ক গড়ায় মারামারিতে। জড়িয়ে পড়েন দুই দলের ক্রিকেটার ও কর্মকর্তারা। অভিযোগ উঠেছে মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে, শাস্তির মুখে পড়তে পারেন ৯ জন।
মাঠেই মারামারি এবং তাতে কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ায় বিসিবির শৃঙ্খলার লেভেল-৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। এতে দুই দলের ৮ জন খেলোয়াড় এবং একজন কর্মকর্তার সাজা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) টেকনিক্যাল কমিটি।
যেখানে সাফফির ক্লাবের চেয়ে তেজগাঁও ক্লাবের সদস্যদের বিশৃঙ্খলায় বেশি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আইন অনুযায়ী ৯ জনের মধ্যে ৪ জনকে ৩ বছরের জন্য এবং বাকি ৬ জনকে এক বছর করে সব ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও দিতে হবে।
তবে ক্রিকেটের স্বার্থে এখনই এতটা কঠোর হতে চাইছে না বিসিবি। ক্লাব ও ক্রিকেটারদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাস্তি দিতে বিসিবির সকল স্টেক হোল্ডাররা একটু সময় নিতে চাইছে। এছাড়া মানবিক দিকটাও সামনে রাখবে বিসিবি।
সিসিডিএমের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, “এই ঘটনার শুরুটা স্লেজিং থেকেই। যে ছেলেটার (সাফফির ক্লাবের পেসার হৃদয়) নামে বেশি অভিযোগ উঠেছে… সে জানিয়েছে দ্রুত সময়ের তার বাবা-মা দুজনই মারা যান। এজন্য আগে থেকেই সে একটু মানসিক অবসাদে ভুগছিল। ম্যাচে তাকে বেশি স্লেজিং করায় ম্যাচ শেষে সে জবাব দেয়। সেখান থেকে দুই দলে মারামারিটা ছড়িয়ে পড়ে। আমরা জেনেছি যে পুরো ম্যাচেই দুই দলের ক্রিকেটাররা নাকি খুব স্লেজিং করেছে একে-অপরকে।”
আইন ভঙ্গের কারণে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্রিকেটের স্বার্থে এখনই বড় পদক্ষেপ নিতে চাইছে না সিসিডিএম। মাসুদুজ্জামান জানিয়েছেন, “আসলে ঘটনাটা এত বড় যে এটা শুধু সিসিডিএমের বিষয় না। ইতিমধ্যে বিসিবি, আম্পারিং কমিটি, সিসিডিএম সবাই আমরা চিন্তিত। ক্রিকেটাররা তো বটেই কর্মকর্তারাও জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা হল আমাদের ক্রিকেটারদের দিকেও তো দেখতে হবে। কঠোর হলেওই তো হবে না মাঠের ক্রিকেটটাও বাঁচাতে হবে। তাই আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে একটু সময় নিচ্ছি ও ভাবছি।”
মাঠের ক্রিকেটের হিসাবে ঘটনা বেশ বড়। তবে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। আবার কঠো পদক্ষেপ নিলে দুই দলের ক্রিকেটারদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়ে যায়। বিসিবি তাই উভয় সংকটে। তবে অভিযুক্তরা দায় মেনে নেওয়ায় তাদের শাস্তির মাত্রা কিছুটা কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন সিসিডিএমের একজন সদস্য। তবে সেটা ক্লাবগুলোর জন্য কড়া বার্তা হয়ে থাকবে।