দেশের বড় পর্দায় নতুন সিনেমার কোন খবর না থাকলেও দেশের বাইরে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিচ্ছে বেশ কিছু চলচ্চিত্র। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মোট চারটি উৎসবে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে ফুয়াদ চৌধুরীর ‘মেঘকন্যা’, লিসা গাজী পরিচালিত ‘বাড়ির নাম শাহানা’ এবং আবিদ মল্লিক পরিচালিত ‘বিলাই’।
তিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
বিবাহবিচ্ছেদকারী এক নারীর গল্প নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বাড়ির নাম শাহানা’। সত্য কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশের এক রক্ষণশীল মফস্সলের আবহের বিপরীতে দৃঢ়চেতা এক নারীর বেঁচে থাকার পথ অন্বেষণ করে। নারীকেন্দ্রিক গল্পটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।
এবার এটি প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে বিশ্বের তিনটি চলচ্চিত্র উৎসবে। উৎসবগুলো হলো- শিকাগো সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল, টরেন্টোর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল সাউথ এশিয়া ও সিয়াটলের তাসভির ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও মার্কেট। তথ্যটি সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করেছেন এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গুপি-বাঘা প্রোডাকশানের অন্যতম কর্ণধার আরিফুর রহমান।
এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল সাউথ এশিয়ায় ১৩ অক্টোবর, তাসভির ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও মার্কেট এ ১৮ অক্টোবর ও শিকাগো সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে চলতি মাসের ২২ সেপ্টেম্বর। আনন্দের খবর এই, একই দিন এ উৎসবে সৃজিত মুখার্জীর ‘পদাতিক’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে সকাল সন্ধ্যাকে প্রযোজক আরিফ বলেন, “মজার একটা তুলনা দিয়ে বলি, বৈশ্বিক চলচ্চিত্র প্রযোজনার ক্ষেত্রে ‘লং টেইল জার্নি অব আ ফিল্ম’ কথাটা অনেক জনপ্রিয়। সিনেমাকে আমরা কুমিরের সাথে তুলনা করি, যে কুমিরের ফেস্টিভ্যাল জার্নি যতো বড় সে কুমিরের লেজ তত বড়। ‘বাড়ির নাম শাহানা’ তেমনই একটি লম্বা লেজের ছবি। অসংখ্য ফেস্টিভালে যাচ্ছে, একেক সময় একসাথে দুটি তিনটি উৎসবেও যাচ্ছে। একজন প্রযোজক হিসেবে আমি খুবই গর্বিত, তখনই আসলে একজন প্রযোজকের মনটা ভালো হয়, যখন তার ছবি অনেক বেশি দর্শক দেখতে পায়। সামনে আরও কিছু উৎসবে যাচ্ছে ছবিটি। আমি এ ধরনের ‘লং টেইল মুভি ’ বেশি বেশি বানাতে চাই।”
সম্প্রতি জিও মামি মুম্বাই চলচ্চিত্র উৎসবে ‘জেন্ডার সেনসিটিভিটি অ্যাওয়ার্ড’ পায় লীসা গাজী পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি।
কমলা কালেকটিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন লিমিটেড প্রযোজিত সিনেমাটিতে দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দীকা। এ ছাড়া আছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, লুৎফর রহমান জর্জ, ইরেশ যাকের, কাজী রুমা, কামরুন্নাহার মুন্নী প্রমুখ। লীসা গাজীর সঙ্গে যৌথভাবে সিনেমাটির চিত্রনাট্য করেছেন আনান সিদ্দীকা।
প্যারিস ও টরেন্টোর দুই উৎসবে ‘বিলাই’
অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য দুটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে আবিদ মল্লিকের স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বিলাই’। এর মধ্যে নর্থ আমেরিকার টরেন্টোতে আগামী ১০-২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল সাউথ এশিয়ায় প্রদর্শিত হবে চলচ্চিত্রটি। অন্য উৎসবটি ফ্রান্সের প্যারিসে ২-৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ‘গ্যাং সুর সিনে’ ফিল্ম ফেস্টিভাল। মূলত ভারতীয় চলচ্চিত্র ঘিরেই সাজানো হয়েছে এ উৎসব। এ উৎসবটিতেও ‘পদাতিক’ এর হয়ে বাংলাদেশের মুখ হয়ে বড়পর্দায় উপস্থিত থাকবেন চঞ্চল চৌধুরী।
‘বিলাই’-এর আগেও প্রায় সাতটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন নির্মাতা আবিদ মল্লিক। বাংলাদেশি ওয়েব প্লাটফর্ম চরকি’তে সিরিজ আকারে পাঁচটি চলচ্চিত্র ধারাবাহিকভাবে মুক্তি পাচ্ছে চলচ্চিত্রগুলো। তারই একটি ‘বিলাই’। সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের তো ওইরকম বিপনন ব্যবস্থা নেই আমাদের দেশে। সিনেমা হলগুলোতে দেখায় না। খুব বেশি আয় করা সম্ভব হয় না। আমাদের তাই টার্গেট থাকে দেশের বাইরের চলচ্চিত্র উৎসবগুলো। গ্লোবাল দর্শকদের কাছে দেশের চলচ্চিত্র পৌঁছে দেয়া আর হাজারও চলচ্চিত্রের ভিড়ে দেশের চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বিদেশি দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারলে ভালো লাগে। আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা গর্বের।”
চলচ্চিত্রটিতে ‘বিলাই’-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবদুল্লাহ আল সেন্টু। ২৩ মিনিটের এই চলচ্চিত্রের একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে ফারিন খানকে।
চীনের সিল্ক রোড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মেঘকন্যা’
উৎসবটির ১১তম আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর। ফুয়াদ চৌধুরী পরিচালিত ‘মেঘনা কন্যা’ সিনেমাটি এই উৎসবের জন্য দক্ষিণ এশিয়া থেকে নির্বাচিত একমাত্র চলচ্চিত্র। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন এর পরিচালক নিজেই।
মানবপাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক চলচ্চিত্র ‘মেঘনা কন্যা’ গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। এর আগে কানাডার টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেয়ারে (টিআইআইএফ) সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর সারাদেশের শিল্পকলা একাডেমিগুলোয় ও সীমান্তবর্তী জেলায় (যেখান থেকে পাচারের সম্ভাবনা বেশি হয়) দেখানো হয় ‘মেঘনা কন্যা’।
নারী প্রধান গল্পের চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ। নিজের অভিনীত চলচ্চিত্রটি প্রসঙ্গে নওশাবা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মেঘনা কন্যা শুধু একটি চলচ্চিত্র নয় এটা আমাদের জন্য একটা মুভমেন্টও ছিল। আমরা সচেতনতামূলক জায়গা থেকেও চলচ্চিত্রটি বানিয়েছিলাম। বিশেষ করে নারীদের গল্পটা খুব ছুঁয়ে গেছে। এ সিনেমাটা করে মনে হয়েছে মানুষ শুধু বিনোদন না সাথে কিছু ভাবনাও নিয়ে যেতে চায়। চলচ্চিত্রটি এমন একটি সম্মানজনক উৎসবে যাচ্ছে তা আমাদের পুরো টিমের জন্য আনন্দের। ভালো লাগছে- যা করতে চেয়েছি সবাই মিলে, তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে দেশে ও দেশের বাইরে। এটা আমাদের দেশের নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করবে-যারা এ ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান।”
উৎসবের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্র প্যানোরামা, চলচ্চিত্র ফোরাম এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ ও প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘গোল্ডেন সিল্ক রোড অ্যাওয়ার্ড’-এর বিচার পর্ব। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে সিল্ক রোডের দেশগুলোর মধ্যে সংস্কৃতির মেলবন্ধন দৃঢ় হবে।
২৫ সেপ্টেম্বর উৎসবের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবে অংশ নেবেন বেশ কিছু বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং বিশ্লেষক।