Beta
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

মিলেছে ডিএনএ, পশ্চিমবঙ্গে উদ্ধার দেহাবশেষ আনারেরই

মেয়ের সঙ্গে আনোয়ারুল আজীম আনার। ফাইল ছবি
মেয়ের সঙ্গে আনোয়ারুল আজীম আনার। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

ঝিনাইদহের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর উদ্ধার করা দেহাবশেষের সঙ্গে তার মেয়ের ডিএনএর মিল পাওয়ার কথা জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা বলছে, সেপটিক ট্যাঙ্ক ও খাল থেকে উদ্ধার করা দেহাবশেষ বাংলাদেশে সাবেক এমপি আনারেরই।

পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, “ডিএনএ রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্ক ও খাল থেকে উদ্ধার হওয়া মাংস ও হাড়গুলো বাংলাদেশি এমপির।”

ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনার গত ১২ মে ভারতে যাওয়ার পরদিনই কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ২২ মে জানায়। তার লাশের সন্ধান পায়নি তারা। কারণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হত্যার পর আনারের দেহ খণ্ড খণ্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে।

এ ঘটনায় গত ২২ মে বিকালে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন তার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে ডরিন লেখেন, মানিক মিয়া এভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের ফ্ল্যাট থেকে ৯ মে রাতে তার বাবা বেরিয়েছিলেন ঝিনাইদহের উদ্দেশে।

“গত ১১/০৫/২০২৪ বিকাল অনুমান ৪টা৪৫ মিনিটের দিকে আমার বাবার সাথে মোবাইল নম্বরে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাই।”

এরপর তার বাবার ভারতীয় সিম থেকে তার ‘উজির মামা’র নম্বরে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এসেছিল বলে জানান ডরিন। সেই মেসেজে লেখা ছিল- “আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে। আমি অমিত সাহার কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।”

এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ এসেছিল উল্লেখ করে এজাহারে ডরিন লেখেন, “মেসেজগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।”

সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা এই ব্যাগে করে আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের খণ্ডিত অংশ বাইরে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।

এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বরাগনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ডরিন।

তিনি বলেন, “আমরা আমার বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে আমার বাবাকে অপহরণ করেছে।”

থানায় মামলা করতে দেরির কারণ দেখিয়ে এজাহারে বলা হয়, “আমার বাবাকে সম্ভব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করিয়া কোথাও না পেয়ে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে সামান্য বিলম্ব হলো।”

আনার হত্যায় ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাতজনকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সন্দেহভাজন আসামি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তিনি স্বীকারোক্তি না দিলেও অন্য ছয় আসামি শিমুল ভুইয়া, তার ভাতিজা তানভির ভূইয়া, শিলাস্তি রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান ফকির, ফয়সাল আলী সাহাজী ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে জমা হয়েছে।

ওদিকে, ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার সেখানে রয়েছেন। নেপালে আত্মগোপনে থাকা সিয়াম হোসেন নামে একজনকেও গ্রেপ্তারের পর কলকাতায় নেওয়া হয়।

আসামিদের মধ্যে পলাতক আছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন। তিনিই এই খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে দাবি করে আসছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

জিহাদ ও সিয়ামকে গ্রেপ্তার করার পরে কলকাতার সিআইডি জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডের পর আনারের দেহের মাংস ও হাড় পৃথক করা হয়। মাংস ছোট ছোট খণ্ড করে কমোডের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয় সেপটিক ট্যাঙ্কে। আর হাড় নিয়ে ফেলা হয়েছিল ভাঙড়ের কাছে বাগজোলা খালে।

পরে আনার কলকাতার যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে খুন হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছিল, সেই ভবনের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মাংসের খণ্ড এবং বাগজোলা খাল থেকে মানুষের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। তবে মাংসের খণ্ড ও হাড়গোড় উদ্ধার করলেও আনারের পরিবারের কারও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে না পারায় সেগুলো আনারেই কিনা তা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।

এমন পরিস্থিতিতে গত ১৭ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের আদালতে আনার হত্যা মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দেয় কলকাতার অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই হত্যাকাণ্ডে প্রথম আসামি গ্রেপ্তারের ৮৭ দিনের মাথায় কলকাতার বারাসাত আদালতে ১২শ’ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিট জমা পড়ে।

আনার হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার ও মোহাম্মদ সিয়ামের নাম চার্জশিটে থাকলেও কেন আনারকে হত্যা করা হয়েছে, সে ব্যাপারে চার্জশিটে কিছু বলা হয়নি।

এর ব্যাখ্যায় তদন্তকারীদের একাংশ সে সময় জানান, তদন্ত শেষ না হলে হত্যাকাণ্ডের কারণ বলা যাবে না। তাছাড়া মামলার মূল অভিযুক্তকে এখনও জেরা করা যায়নি বলেও যুক্তি দেন তারা।

এ অবস্থায় গত নভেম্বরে কলকাতায় গিয়ে তদন্তকারীদের ডিএনএ নমুনা দিয়ে আসেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সেই ডিএনএ নমুনার সঙ্গে উদ্ধার মাংসের খণ্ড ও হাড়গোড়ের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে জানিয়েই পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এখন বলছে, উদ্ধার হাড়-মাংস বাংলাদেশের সাবেক এমপি আনারেরই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত