Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

আবার পানি বাড়ছে সিলেট-সুনামগঞ্জে

সারি গোয়াইন নদীর পানি সীমান্তবর্তী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার তোলা ছবি - সকাল সন্ধ্যা
সারি গোয়াইন নদীর পানি সীমান্তবর্তী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার তোলা ছবি - সকাল সন্ধ্যা
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

উজানের ঢল ও দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টির কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি আবার বাড়ছে। সুরমা, পিয়াইন, সারি, সারি গোয়াইন নদীর পানি সীমান্তবর্তী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় তৃতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর,  বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় চলমান বন্যায় এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সদর উপজেলা বাদে ১২ উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত রয়েছে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬ জন। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সকাল সন্ধ্যাকে জানান, “উজান থেকে ঢলের পানি নামায় নদীগুলোর সীমান্তবর্তী পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৩১৩ মিলিমিটার। ফলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকা উপজেলাগুলোতে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। আমরা সার্বিক পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।”

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি সোমবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

অতি বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানির কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাব বাড়ি ঘাট, তেঘরিয়া, বড়পাড়াসহ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। সেইসঙ্গে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক।

সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সোমবার তোলা ছবি – সকাল সন্ধ্যা

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দূর্গাপুর সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে আবারও তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ছাতক ও দোয়ারাবাজারসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক নতুন করে তলিয়ে গেছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ও অতিবৃষ্টির কারণে সুরমা, যাদুকাটা ও কালনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে বৃষ্টি কমে গেলে সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি কমে যাবে। আর এখন যেহেতু পানি বাড়ছে, সেক্ষেত্রে জেলায় স্বল্প মেয়াদি আরেকটি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সোমবার দুপুর ১২টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার ছিল বিপৎসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার নিচে।

কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন ছিল বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপরে।

নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় সুনামগঞ্জে স্বল্প মেয়াদি আরেকটি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার তোলা ছবি – সকাল সন্ধ্যা

বিয়ানীবাজারের শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছিল। শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার বিপৎসীমার ১৯ নিচ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৬৫ মিলিমিটার।

সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে জানান, ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় উপজেলার সকল নদ-নদীর পানি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে; যার ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলায় পুনরায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, যেহেতু নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী কয়েকদিন ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে, তাই  উপজেলায় আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলায় মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪৭টি নৌকা মাঝিসহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত