Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

সিলেটের অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নামলেও এখনও বন্যা কবলিত রয়েছেন ৮টি ওয়ার্ডের ১৫ হাজার মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সিলেটের অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নামলেও এখনও বন্যা কবলিত রয়েছেন ৮টি ওয়ার্ডের ১৫ হাজার মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট ও সুনামগঞ্জের নদীগুলোর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা বিস্তৃতি ঘটলেও মৌলভীবাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানির জন্য চালু করা হয়েছে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।

পাশাপাশি বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজও শুরু করেছে তারা। এরই মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর।

তবে সিলেট নগরের অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নামলেও এখনও বন্যা কবলিত রয়েছেন নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডের ১৫ হাজার মানুষ।

এছাড়া সুরমা, কুশিয়ারাসহ প্রতিটি নদীর পানি কমলেও বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ।

সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলায় বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ।

শনিবারের চেয়ে রবিবার এই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলার ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে রবিবার রাতে ৩ হাজার ১৬ জন অবস্থান করেন। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯০১।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ওসমানী নগর উপজেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন।

অন্যদিকে সুনামগঞ্জে এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন ছাতক উপজেলার মানুষ। এই উপজেলার ৫৪৭টি গ্রামের ৩ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হন। এছাড়া ৫ হাজার ৭৬ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন, যা সুনামগঞ্জের উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।  

সিলেটে বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সিলেট

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের সোমবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার ছিল বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপরে এবং সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচে, যা রবিবার ছিল বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।

কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার ছিল বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপরে।

জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার ছিল বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে।

বিয়ানীবাজারের শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার ছিল বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচে। শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার ছিল বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপরে।   

সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৪ দশমিক ১ মিলিমিটার। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এখানে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

সিলেট নগরের বন্যাকবলিত ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ড থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে নগরের ৮টি ওয়ার্ডের ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও ৬ হাজার ৩০০ মানুষ অবস্থান করছেন। নগর এলাকায় বন্যায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার।

নগরের অধিকাংশ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পানি নেমে যাওয়ায় এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ফেঞ্চুগঞ্জে জুড়ি নদী ও শেরপুরে মনু নদীর পানি কুশিয়ারাতে যুক্ত হয়। তাই কুশিয়ারা নদীর পানি ধীর গতিতে নামছে। তাছাড়া নিচের দিকে প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বৃষ্টি সেভাবে না হওয়ার পরও নদীর পানির নামার গতি ধীর।

সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নই বন্যায় কবলিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ওসমানী নগর উপজেলার ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩ হাজার ১৬ জন মানুষ। 

সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৩টি উপজেলার ১ হাজার ৪৪৯টি গ্রামে বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ জন। সিলেট নগরে ৪০টিসহ মোট ৩১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে আশ্রয়রত রয়েছেন ১৯ হাজার ৭৩৮ জন। রবিবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ২২ হাজার ৬২৩ জন। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গত তিন দিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। 

“আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।”

সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত সিলেটে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সুনামগঞ্জ 

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা রবিবার ছিল ২৮ সেন্টিমিটার নিচে।

শহরের বেশিরভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। পাশাপাশি হাওর এলাকার মানুষের মধ্যে সাপের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এছাড়া বাড়ির কাছে পানি থাকায় অনেক এলাকায় লোকজন ডাকাতের ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলার ১ হাজার ৩০২টি গ্রামে বন্যায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৭ জন।

রবিবার বিকালে এই জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছিলেন ১৩ হাজার ৬৪৯ জন মানুষ। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ১২৬। এর আগে শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ২২ হাজার ৬৩৭ জন মানুষ।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রতিটি উপজেলায় নদীর পানি কমছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে মানুষের বাড়ি ফেরা অব্যাহত রয়েছে।

“বন্যা দুর্গত প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম কাজ করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

ত্রাণের বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে প্রায় তিন লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন চাল, ২২ লাখ টাকা, ৫  হাজার ২৮৩ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং গোখাদ্য ও শিশুখাদ্যের জন্য প্রায় ১৭ লাখ টাকা উপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

সিলেটে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ৭ উপজেলা জুড়ি, বড়লেখা কুলাউড়া, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নে বন্যায় আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৫০।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কুলাউড়া উপজেলার ১১৬টি গ্রামে ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত রয়েছেন। জেলার ১৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৪৬ জন পুরুষ, ৩ হাজার ৮১০ জন নারী এবং ৩ হাজার ১৪টি শিশু রয়েছে। জেলার ৫৬২টি গ্রামে ৩ লাখ ৫১ হাজার ১২২ জন বন্যায় আক্রান্ত রয়েছেন।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.আব্দুস সালাম চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৫৪৭ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার ৫৩৫ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।”

তিনি জানান, মৌলভীবাজারের উপজেলাগুলোতে আরও ৮১৫ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার উপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ৫০টি মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করছে।  

সম্প্রতি উজানের ঢলে সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির বিস্তৃতি ঘটেছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি নবীগঞ্জ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উপজেলার ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা এরই মধ্যে বন্যার্তদের মধ্যে ১৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছি। জেলা প্রশাসন থেকে কিছু শুকনা খাবার পেয়েছি। সেসব বিতরণ করা হয়েছে।”  

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৯০২টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যা ৩ হাজার ৫৭৫।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রভাংশু সোম মহান সকাল সন্ধ্যাকে জানান, বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ৪১৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে ২ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫১০ মেট্রিক টন চাল উপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত