দীর্ঘ বিরতির পর আবার আয়োজিত হতে যাচ্ছে ফোক ফেস্টের জমকালো আসর। আসছে জানুয়ারিতে দেশ–বিদেশের লোকগানের শিল্পীদের নিয়ে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। ফোক ফেস্ট আয়োজনের এই ঘোষণায়, অন্য আরেকটি উৎসবের খবর পেতে কৌতুহলী হয়ে পড়েছে সঙ্গীতপ্রেমীরা। আর তা হলো বেঙ্গল ক্লাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। কবে ফিরবে উৎসবটি?
২০১৭ সালে শেষবারের মতো বসেছিল ধ্রুপদী সঙ্গীতের জনপ্রিয় এই আসরটি। এরপর নানা জটিলতায় এর আয়োজন আর সম্ভব হয়নি। তবে ফোক ফেস্ট আয়োজনের খবরে আশায় বুক বেঁধেছেন অনেকেই। তাদের আশা, বেঙ্গল ক্লাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল নিয়েও হয়তো শোনা যাবে ইতিবাচক খবর।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ২০১২ সালে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল ক্লাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। আর্মি স্টেডিয়ামে এই আয়োজন প্রথমবারেই পেয়েছিল অভাবনীয় সাড়া। সে আসরে শ্রোতাদের মোহিত করেছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনন্য সব শিল্পীরা। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সঙ্গীতের এই ধারার ‘মায়েস্ত্রো’। প্রথমবারের আয়োজনে সেবার ঢাকায় এসেছিলেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর এবং পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী এবং শাস্ত্রীয় ঘরানার কিংবদন্তী বাঁশিবাদক হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া।
২০১৩ সালে বসে দ্বিতীয় আসর। এতে মাতাতে এসেছিলেন বিদুষী গিরিজা দেবী, ওস্তাদ রশীদ খান এবং কৌশিকি চক্রবর্তীসহ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বহু বড় নাম। সেবার দর্শক সংখ্যা প্রথম আসরকে ছাড়িয়ে যায়। এক অভূতপুর্ব সাড়া ফেলে দেয় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ধ্রুপদী সঙ্গীতের এই আসরটি। একে একে এই উৎসবের আরও চারটি আসর বসেছিল রাজধানী ঢাকায়। প্রতিবারই দর্শক সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে থাকে তার পূর্বের আয়োজনের চেয়ে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছিল এই উৎসবের মধ্য দিয়ে।
তরুণ প্রজন্মের অনেকেই যারা আদৌ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুরাগী ছিলেন না, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে তাদের একটি বড় অংশই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুরাগীতে পরিণত হন।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ষষ্ঠ আসরটি বসে ২০১৭ সালে। নানা অনিশ্চয়তার কারণে আয়োজক কর্তৃপক্ষ সেবার ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব মাঠে উৎসব স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়। এর আগে টানা পাঁচটি আসরই বসেছিল আর্মি স্টেডিয়ামে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল করা হয় উৎসবটি। এরপর ২০১৯ সালে আবাহনী মাঠের সংস্কার চলছিল বলে আয়োজনটি সেখানেও আর স্থান পায়নি।
এরপর করোনা মহামারী শুরু হলে এই আয়োজন আর ফেরানো যায়নি। তবে বাংলাদেশে করোনা মহামারীর প্রকোপ অনেকটাই কমে এলে এই আয়োজন নিয়ে বেশ কয়েকবার গুঞ্জন উঠেছিল। সঙ্গীতপ্রেমীদের আশা এবার গুঞ্জন সত্যি হবে।
তবে আশার মাঝে আশঙ্কাও আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান’ এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশে তীব্র ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছে। ক্লাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রিত শিল্পীরা ছিলেন মূলত ভারতের। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আয়োজকরা দেশের এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকেই শিল্পীদের নিয়ে আসবেন কিনা। এরই মাঝে শোনা যাচ্ছে, এবার হয়তো কেবল ভারত নয়, সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের উৎসবে নিয়ে আসা হতে পারে।