Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫

তন্তুতে আটকে বিশ্বকাপ জার্সি

শেষ পর্ব
[publishpress_authors_box]

অলিম্পিক ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা পদকের ধারেকাছেই থাকেন না। কিন্তু এ দেশের তৈরি ক্রীড়া সরঞ্জামের সদর্প উপস্থিতি থাকে ওসব ক্রীড়া মহাযজ্ঞে। দেখা যায়, এখানকার তৈরি আর্চারি তীর, গলফ শ্যাফট বা জার্সি পরে পদক জিতছেন বিশ্ব তারকারা। অথচ দেশে তৈরি ওসব উন্নত ক্রীড়া সরঞ্জামের খবরই জানেন না দেশি তারকারা। এ নিয়েই সকাল সন্ধ্যার রাহেনুর ইসলাম – এর চার পর্বের ধারবাহিক। আজ শেষ পর্বে থাকছে ফুটবল জার্সি।

বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলা বাংলাদেশের জন্য আকাশ কুসুম কল্পনা। তবু সরাসরি না থেকেও বাংলাদেশ অন্যভাবে উপস্থিতি থাকে বিশ্বকাপে। ২০১৪ বিশ্বকাপেই যেমন ব্রাজিলের জার্সির নিচে লেখা ছিল ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। ব্রাজিলের পাশাপাশি সেই বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া অনেক দেশের জার্সিই তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশে।

সাধারণত জার্সি কোন দেশ থেকে আসে সেটা গোপনই রাখে দলগুলো। তবে ২০১৪ সালে ব্রাজিল তাদের জার্সির নিচে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লিখেছিল অন্য কারণে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টস ট্র্যাজেডিতে সহস্রাধিক পোশাক কর্মীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিলো ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনকে (সিবিএফ)। তারা সেসব পোশাক শ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানিয়েই জার্সির নিচে লিখেছিল বাংলাদেশের নাম।

শুধু ২০১৪ নয়, এর আগে অনুষ্ঠিত কয়েকটা বিশ্বকাপে অনেক দল খেলেছে বাংলাদেশে তৈরি জার্সিতে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও ছিল বাংলাদেশের উপস্থিতি। ব্যতিক্রম সবশেষ অনুষ্ঠিত ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ। সেবার বাংলাদেশে তৈরি জার্সি দেখা যায়নি ৩২ দলের কোন খেলোয়াড়ের গায়ে।

২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিল খেলেছিল বাংলাদেশে তৈরি জার্সিতে। ছবি : সংগৃহীত

তন্তুতে আটকে গেছে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩: কি ইনসাইটস অ্যান্ড ট্রেন্ডস’শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৪ সালের আগস্টে। তাতে টানা দ্বিতীয় বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখে বাংলাদেশ।

ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তারপরও বাংলাদেশে তৈরি জার্সিতে কাতার বিশ্বকাপে দলগুলোর না খেলার কারণ ফিফার নীতি।

জলবায়ু সচেতনতাকে প্রাধান্য দিয়ে ফিফা সেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল খেলোয়াড়দের জার্সি তৈরি হবে বিশেষ তন্তু দিয়ে। এই কৃত্রিম তন্তু তৈরি হয় প্লাস্টিকের বোতল পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের (রিসাইকেল) মাধ্যমে। এ কারণে বিশ্বকাপ জার্সি উৎপাদনের সব আদেশই পায় চীন ও ভিয়েতনামের কারখানাগুলো। এই দুই দেশে ফিফার চাহিদা অনুযায়ী ওই কাঁচামাল সহজলভ্য, তাই যথাযথ মান নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরবরাহ করেছে তারা। বাংলাদেশে কৃত্রিম তন্তুর জার্সি তৈরিতে এখনো নবীন।

কাতার বিশ্বকাপের ৩২টি দলের জার্সি সরবরাহ করেছিল ৯টি ব্র্যান্ড। সবচেয়ে বেশি ১৩ দলের জার্সি সরবরাহ করে নাইকি। অ্যাডিডাস সাতটি আর পুমা ছয়টি দলের জার্সি সরবরাহ করে। বাকি ছয়টি দলের জার্সি সরবরাহ করেছে ছয়টি ব্র্যান্ড।

নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার পণ্য তৈরির ক্রয়াদেশ অনেক আগে থেকেই পেয়ে আসছে বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা। তবে ফিফার নীতির জন্য ২০২২ বিশ্বকাপে সেটা পায়নি।

টিশার্ট ও সমর্থকদের জার্সি ছিল বাংলাদেশের

কাতার বিশ্বকাপের ৩২ দলের জার্সি তৈরি না হলেও অফিসিয়াল টি–শার্ট ও সমর্থকদের জন্য জার্সি রপ্তানি হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। কাতার বিশ্বকাপে ফিফার অফিশিয়াল টি–শার্ট রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের গোসাইলডাঙ্গার সনেট টেক্সটাইল লিমিটেড।

কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল টি–শার্ট ও সমর্থকদের জন্য জার্সি রপ্তানি হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বকাপে ফিফার লাইসেন্স পেয়েছিল রাশিয়ার মস্কোভিত্তিক ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পোর্টস মাস্টার। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে গোসাইলডাঙ্গার সনেট টেক্সটাইল লিমিটেড থেকে নেয় ছয় লাখ টি-শার্ট। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক গাজী মো. শহীদ উল্লাহ জানালেন,‘‘আমরা শুধু ছয় লাখ টি-শার্টে রপ্তানি করেছি। এর বাজারমূল্য ছিল ১৫ লাখ মার্কিন ডলার। ফিফা কর্মকর্তা, রেফারি, বলবয় ও দর্শকরা পড়েছিলেন এগুলো।’’

উর্মি গ্রুপের ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড পুমার জন্য পোশাক সরবরাহ করে আসছে অনেক দিন থেকে। প্লাস্টিকের বোতল পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণে উৎপাদিত কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ের পোশাক তৈরি শুরু করেছে তারা। তাদের পাশাপাশি এএনজেড টেক্সটাইল গ্রুপসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও করছে এই কাজ।

তারপরেও ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ দলগুলোর জার্সি তৈরির কাজ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন  বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের গুটিকয়েক কারখানা কৃত্রিম তন্তুর কাপড় ও পোশাক উৎপাদন করে। তবে খেলোয়াড়দের জার্সির ক্রয়াদেশ পাওয়াটা সহজ নয়। কারণ এনবিআরের অসহযোগিতা। এডভান্স ট্যাক্স আর ভ্যাটের জন্য তন্তুজাত কাপড়ের খরচ বেড়ে যায় অনেক। অথচ এখনকার পোশাকশিল্পের ৭০ শতাংশই কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ের। এনবিআর সাহায্য না করলে বিশ্বকাপের জার্সি তো বটেই, পুরো পোশাক শিল্পে পিছিয়ে পড়ব আমরা।’’

বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ে নয়। তবে বাফুফে সূত্রের দাবি, ছেলেদের জার্সির মান অনেক ভাল। উন্নতমানের কাপড় দিয়েই এগুলো তৈরি করা হয়। মালেদা গ্রুপ জার্সি সরবরাহ করে বাফুফেকে।

মালেদা গ্রুপ জার্সি সরবরাহ করে বাফুফেকে। ছবি : সংগৃহীত

সাত বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলে এই জার্সির গুণগত মান বেশ উন্নত। তবে ফুটবল দলের জার্সি বেশি জনপ্রিয় নয়, স্থানীয় দোকানপাটেও পাওয়া যায় না এগুলো।

সেটার একটা কারণ হতে পারে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স। এই দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফ ওপরের দিকে উঠলে বাফুফে হয়তো লাল-সবুজের জার্সি মার্চেন্ডাইজিংয়ের দিকে ঝুঁকবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার হামজা চৌধুরীর প্রভাবে বাড়তে পারে এই জার্সির মূল্যমানও।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত