নতুন বছরে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে? উন্নতিতে আশাবাদী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তবে সেই সম্পর্ক গিট্টু পাকিয়ে আছে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানে। তার কী হবে? উপদেষ্টা বললেন, তাতে ফেরতের চেষ্টাও চালাবেন তারা।
নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি এই বছরে কূটনীতিতে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে গত ৫ আগস্ট ভারতে গিয়ে ওঠার পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এরমধ্যে নানা ঘটনায় সম্পর্ক আরও নাজুক হচ্ছে।
এর মধ্যেই জুলাই আন্দোলনের সময় গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে ফেরত চেয়ে সম্প্রতি ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন সবার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলেন, তখন সাংবাদিকদের মধ্য থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ঢাকার অনুরোধের কোনও সুরাহা না হলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবস্থা কী হবে?
বাসসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জবাবে তৌহিদ বলেন, এটি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে মাত্র একটি।
“দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু দ্বিপক্ষীয় বিষয় রয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে ফিরিয়ে আনা এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ঢাকার প্রচেষ্টা ‘সমান তালে চলবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, উভয় প্রচেষ্টা একই সাথে এগিয়ে যাবে।”
শেখ হাসিনাকে ফেরতে বাংলাদেশের অনুরোধে নয়া দিল্লি এখনও সাড়া দেয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দিল্লি থেকে উত্তর পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য প্রধান অগ্রাধিকার হবে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সাথে দৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখা।
“রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করা, এই তিনটি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে আমাদের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।”
কোনও একটি দেশের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখা যাবে কি না- সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করলে ‘না’ সূচক উত্তর দেন কূটনীতিক হিসাবে ক্যারিয়ার শেষ করে এখন সরকারে দায়িত্ব নেওয়া তৌহিদ।
“আমরা এই তিনটি দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমান অগ্রাধিকার দিই। কারণ তাদের সাথে আমাদের বিভিন্ন স্বার্থ গভীরভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও এই দেশগুলোর নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে।”
চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য ২০ জানুয়ারি বেইজিং সফরের পরিকল্পনা করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই সফরের আলোচ্য সূচির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে তিনি বলেন, “চীন আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং আমরা অভিন্ন বিষয়াদি আলোচনা করতে যাচ্ছি।”
তার এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে দেখান তৌহিদ।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, কারণ সেখানকার বাস্তবতা বদলে গেছে।
“জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। এটি ছাড়া, রোহিঙ্গারা (মিয়ানমারে) ফিরতে রাজি হবে না।”