Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভোট এলেই দেশে ছোটেন তারা

নির্বাচনী প্রচারে সিলেট ৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
নির্বাচনী প্রচারে সিলেট ৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাংলাদেশের অনেকে বিদেশে যান। উত্তর-দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন দেশে তারা জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কাজে লাগান তাদের মেধা ও শ্রম। তাদের পাঠানো অর্থে সচল থাকে দেশের অর্থনীতি।

বিদেশে থাকলেও মাতৃভূমির প্রতি তাদের টানে ভাটা পড়ে না। এটা বেশি বোঝা যায় নির্বাচন এলে। এসময় প্রবাসীদের অনেকেই কোনও না কোনওভাবে নির্বাচনে থাকতে চান। কেউ বা নির্বাচনী প্রচারে সরাসরি থাকেন, কেউবা দূর থেকে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। মোদ্দা কথা, দেশে নির্বাচন হবে আর সেখানে তাদের কোনও ভূমিকা থাকবে না, এমনটা তারা ভাবতে পারেন না। এসব প্রবাসীদের একটা অংশ লন্ডনে থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। তাদের বেশির ভাগের বাড়ি সিলেটে।

আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বৃহত্তর সিলেটের ১৯টি আসনে নির্বাচনী আবহাওয়ার মধ্যে দেশে এসেছেন বহু প্রবাসী। পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে তাদের প্রচারে অংশ নেওয়াও শেষ।

এমনই একজন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, যুক্তরাজ্যের সভাপতি হরমুজ আলী। ২১ ডিসেম্বর তিনি দেশে আসেন। তার খালাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্রার্থী একসময় দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন।

হরমুজ আলী জানান, নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে এবার কেবল যুক্তরাজ্য থেকেই পাঁচ শতাধিক প্রবাসী দেশে এসেছেন।

এসব প্রবাসীরা সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেন।

এছাড়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায়ও তাদের নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায়। মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় প্রবাসীরা বেশ সরব ছিলেন বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন হরমুজ আলী।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেশে এসেছিলেন তিনি। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন পাননি। তাই বলে হতাশ নন তিনি। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে দলের প্রার্থীর পক্ষে দিনরাত প্রচারে ছিলেন তিনি। এছাড়া সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন ও ২ আসনের শফিকুর রহমান চৌধুরীর পক্ষেও প্রচারে নামেন।

সাজিদুর রহমান জানান, সিলেট-২ আসনের শফিকুর রহমান চৌধুরী ও ৩ আসনের হাবিবুর রহমান হাবিব দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী ওই দুই প্রার্থীর প্রচারে দেশে আসেন।

নিছক ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা নিয়ে অনেক প্রবাসী পরিবারসহ গত মাসে দেশে এসেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনী ডামাডোলে তাদের পক্ষে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়নি।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার খাসিলা গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শামীম আহমদ তাদেরই একজন।

তিনি জানান, তার এলাকা সুনামগঞ্জ-৩ আসনে অনেকটা একতরফা প্রচার চলে। কারণ ওই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এজন্য নির্বাচনের আমেজ তেমন একটা নেই। তারপরও ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে এম এ মান্নানের বেশ কয়েকটি নির্বাচনী সভায় অংশ নেন তিনি।

প্রচারে সুনামগঞ্জ ৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

কেবল দলীয় নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন প্রবাসীরা।

সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশামুল হক দুলালের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে প্রচার চালাতে দেশে আসেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এমরান শিকদার।

তিনি জানান, তার এলাকায় ভোটের জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ রয়েছে।

তিনি মনে করেন, এবারের ভোট সুষ্ঠু হবে। তাই এহতেশামুল হকের পক্ষে জোর প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন।

এবারের ভোট নিয়ে এমরান শিকদারের মতো একই ধারণা পোষণ করেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারওয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নিষেধ করেননি।” তাই তিনিসহ অনেক প্রবাসী সিলেট-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেনের ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন।

সারওয়ার হোসেন জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন বলে তার পক্ষে প্রবাসীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে প্রচারে নামেন।

সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে কাজ করতে দেশে আসেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার অনেকে। তাদের একজন রাহিন আহমদ।

তিনি জানান, তারা রাজনীতির জন্য নয়, আঞ্চলিক কারণে শমসের মবিনের পক্ষ নেন। গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে শমসের মবিন চৌধুরী একক প্রার্থী হওয়ায় দলমত নির্বিশেষে শুধু প্রবাসীরা নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও দলমতের উর্ধ্বে উঠে সোনালী আঁশ প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন।

একসময় দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে থাকা গণফোরাম মনোনীত সিলেট-২ আসনের প্রার্থী মোকাব্বির খান ও সুনামগঞ্জ ৫ আসনের প্রার্থী আইয়ূব করম আলীর পক্ষে প্রবাসীরা প্রচার কার্যক্রমে অংশ নেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া সিলেট-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও হবিগঞ্জ-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের পক্ষে কাজ করতে অনেক প্রবাসী দেশে এসে প্রচার চালান।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসেন শাম্মী আক্তার। তিনি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের স্ত্রী। স্বামীকে উৎসাহ ও সাহস যোগাতে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিনি। জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে শাম্মী জানান, সায়েদুল হক সুমনের জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

সিলেটের প্রবাসীদের নির্বাচন ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কথা বলেছেন জেলার মদনমোহন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই এখানকার প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। নির্বাচনী প্রচারের জন্য প্রবাসীরা দেশে এলে তাদের আত্মীয়-স্বজন উৎসাহ পান। প্রচারে কাজ করা কর্মী-সমর্থকদের জন্য প্রবাসীরা বেশ টাকা-পয়সা খরচ করেন। নির্বাচন তখন ভিন্ন মাত্রা পায়। অনেকটা উৎসব আমেজ বিরাজ করে প্রবাসীদের প্রচারে।”

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনী প্রচারে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ সিলেটে অনেকটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনী উৎসবে অংশ নিতে প্রবাসীরা দেশে ছুটে আসেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমি নিজেও দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে দেশে চলে আসতাম। একসময় দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন, এমন বেশ কয়েকজন প্রার্থী সিলেটের বিভিন্ন আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় প্রবাসীও এসেছেন বেশি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত