Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ মারা গেছেন

K._M._Shafiullah_photo
[publishpress_authors_box]

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ (বীর উত্তম) আর নেই।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকাল পৌনে ৯টা দিকে তিনি মারা যান বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ এর সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. আবু সাঈদ।

৯০ বছর বয়সী কে এম সফিউল্লাহ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড জটিলতা, ফ্যাটি লিভার, ডিমেনশিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন তার চলাফেরা ছিল স্ট্রেচারে।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কে এম সফিউল্লাহকে ২ জানুয়ারি সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। রবিবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক এই সেনাপ্রধান।

তার ব্যক্তিগত সহকারী জিয়াউর রহমান মনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাদ জোহর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাজী আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় তার জানাজা হবে। বাদ আসর আরেক দফা জানাজা হবে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে।

১৯৭১ সালে জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ। তার নেতৃত্বেই ওই রেজিমেন্টের বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করে।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সফিউল্লাহ ছিলেন ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার। পরে তিনটি নিয়মিত আর্মি ব্রিগেড (ফোর্স নামে পরিচিত) গঠিত হলে ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্বে আসেন সফিউল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘বীর উত্তম’ খেতাব পান।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন সফিউল্লাহ। পরে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালে দেশে ফিরে এলে তাকে এক বছর ওএসডি করে রাখা হয়। পরের বছর তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যান। ১৯৯৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে দলটির মনোনয়নে নির্বাচন করে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য হন।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের জীবিত সেক্টর কমান্ডাদের নিয়ে ২০০৭ সালে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠিত হলে সফিউল্লাহ ছিলেন সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। পরে তিনি এ সংগঠনের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালে একদল সেনাসদস্য যখন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করে, সফিউল্লাহ তখন সেনাপ্রধানের দায়িত্বে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের প্রতি তিনি আনুগত্যও প্রকাশ করেছিলেন। তবে কয়েক দিনের মধ্যে তাকে সেনাপ্রধানের পদ হারাতে হয়।

সফিউল্লাহ অবশ্য পরে বলছিলেন, তিনিসহ ওই সময়কার বিমানবাহিনী প্রধান ও নৌবাহিনী প্রধানকে ‘বাধ্য হয়ে’ মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন দিতে হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য তখনকার সেনাপ্রধান সফিউল্লাহকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে। এ বিষয়ে সফিউল্লাহ পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “এ রকম অবস্থায় সেনাপ্রধান কী করতে পারেন?”

প্রধান উপদেষ্টার শোক

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাসস জানিয়েছে, এক শোক বার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কে এম সফিউল্লাহ। তিনি ছিলেন জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পেয়েছেন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন কে এম সফিউল্লাহ।

‘দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার অবদান আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ তার বীরগাঁথা আজীবন চিরকৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত