ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাদেক খান ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে ২৫০টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ১৫১টি হিসাবই সাদেক খানের স্ত্রী ফেরদৌসী খানের নামে, যিনি একজন গৃহিণী। এই পরিবারের আড়াইশ ব্যাংক হিসাবে প্রায় পৌনে ছয়শ’ কোটি টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যও পেয়েছে দুদক।
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে বুধবার সাদেক খান ও তার স্ত্রীর পাশাপাশি ছেলে ফাহিম খানের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে দুদক, যেসব মামলার অভিযোগে তাদের ২৫০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৫৭৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের কথা উল্লেখ করা হয়।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সহযোগিতা করার অভিযোগে করা তিনটি মামলার সবগুলোতেই সাদেক খানকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাগুলো করা হয় বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খানের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগে বলা হয়, তিনি ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন এবং এর আগে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে ঢাকায় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের দায়িত্বও পালন করেন।
ওই সময়ের মধ্যে সাদেক খানের আয়-ব্যয় হিসাব করে মোট ১৪ কোটি ১৫ লাখ, ৪৩ হাজার ৮০৮ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়, এর মধ্যে ৭ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার ৬৬৪ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎস্য বহির্ভূত, অর্থাৎ অবৈধ সম্পদ বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া সাদেক খানের বিরুদ্ধে ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৪৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, সাদেক খানের স্ত্রী ফেরদৌসী খানের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় তার ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৩২ হাজার ৫২১ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া তিনি একজন গৃহিণী হলেও তার ১৫১টি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে জানিয়ে মামলায় বলা হয়, তিনি ওইসব ব্যাংক হিসাবে ৭২ কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার ১০৬ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেনজনক লেনদেন করেছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগে এ মামলায় সাদেক খানকেও আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে, সাদেক খানের ছেলে ফাহিম সাদেক খানের বিরুদ্ধে করা মামলায় ৬ কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার ১৫২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক। এছাড়া তার নামে ৭০টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে জানিয়ে মামলায় বলা হয়, তিনি এসব হিসাবে ৩৬ কোটি ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৮ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অস্বাভাবিক লেনদনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতার অভিযোগে সাদেক খানকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।