দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের যখন দেখা যাচ্ছে না প্রকাশ্যে, যখন বেশিরভাগ সাবেক মন্ত্রী-এমপি গোপনে ছেড়েছেন দেশ; তখন সুনামগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে পাওয়া গেল সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে।
মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ঝিলমিল অডিটোরিয়ামে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। আর এই বৃত্তিটিও তার নিজের নামেই। ২০০১ সাল থেকে নিজের অর্থায়নে এই বৃত্তির ব্যবস্থা করছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এম এ মান্নান বলেন, “সারা দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। আশা করি আমাদের দেশেও একদিন তা হবে। শিশুদের জন্য আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। শিশুরা যাতে মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে আমাদের সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সকল শিশু যাতে পর্যায়ক্রমে স্কুলে আসতে পারে সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।”
উপস্থিত শিশু-কিশোরদের ভালো মানুষ হতে, সবসময় সত্য কথা বলতে এবং দেশের প্রতি অনুগত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
২৪তম এম এ মান্নান বৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডুংরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মদনমোহন রায়।
এই বৃত্তি পরীক্ষাটির আয়োজন করে স্থানীয় উত্তরণ ক্লাব। সংগঠনটির সভাপতি মনিরুজ্জামান সুজন জানান, এবছর ৭০০ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। যেখানে দুটি গ্রেডে ৭৫ জন কৃতকার্য হয়েছে। যাদের মধ্যে প্রথম গ্রেড পেয়েছে ৩০ জন, দ্বিতীয় গ্রেড ৪৫ জন।
প্রথম গ্রেডে উত্তীর্ণদের দুই হাজার টাকার প্রাইজবন্ড এবং দ্বিতীয় গ্রেডে উত্তীর্ণদের দেড় হাজার টাকার প্রাইজবন্ড দেওয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেককে সার্টিফিকেট, একটি টেবিল ল্যাম্প, এম এ মান্নানের ছবি সম্বলিত মগ এবং একটি করে ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়।
এ আয়োজনরে বিষয়ে সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, “২০০১ সাল থেকে আমার নিজস্ব অর্থায়নে এটি ধারাবাহিকভাবে চলছে। জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর এই তিন উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় অংশ নেয়।
“নামের জন্য বা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বৃত্তির আয়োজন করি না। শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতেই আমার এ উদ্যোগ।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এম এ মান্নানসহ ৯৯ জনের বিরুদ্ধে জেলার দ্রুত বিচার আদালতে গত ২ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়।
এই মামলায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে। ২০ সেপ্টেম্বর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠালে পরদিন তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে গত ৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তার জামিন মঞ্জুর হয়, পরদিন ১০ অক্টোবর কারা তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তিনি মুক্তি পান।
এরপর ১৯ নভেম্বর তার নির্বাচনী এলাকার জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর বাজারে বিএনপির অফিস ভাঙচুর ও চুরির অভিযোগে জগন্নাথপুর থানায় আরেকটি মামলা হয়। সেখানেও আসামি করা হয় এম এ মান্নানকে। ২৫ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে এই মামলায় জামিন নেন তিনি।
বর্তমানে দুই মামলাতেই জামিনে রয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী।
মান্নান ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর পরিকল্পনামন্ত্রী করা হয়েছিল তাকে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন তিনি।