আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়া যাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এই দফায় মিলবে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
তিনি বলেন, “চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করার বিষয়টি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে। আশা করছি, ওই সভায় এই ঋণ অনুমোদিত হবে। বোর্ডের অনুমোদন পেলে দু-একদিনের মধ্যেই তা ছাড় করা হবে।”
চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে আইএমএফের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে যে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে, পাপাজর্জিও তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সফর শেষে ফেরার আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র এখনও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। দীর্ঘদিনেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যস্ফীতি। এখন যে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি তা আইএমএফের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।”
বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আইএমএফ ইতিবাচক জানিয়ে পাপাজর্জিও বলেন, “তবে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার চালু রাখতে হবে।”
নতুন টাকা ছাপানোর বিষয়টিও উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন তিনি।
পাপাজর্জিও বলেন, “এটা হয়ত সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু এটা লম্বা সময়ের জন্য হতে পারে না।”
এর আগে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ জানিয়েছিল, চতুর্থ কিস্তিতে বাংলাদেশকে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিতে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা।
পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে আগের ঋণের বাইরে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার দিতে সম্মতির কথাও জানানো হয় সেখানে।
এ ঋণ আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট সামাল দিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি (৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। সেজন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারের শর্ত বাংলাদেশকে বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। ধাপে ধাপে শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।
ঋণের কিস্তি চলার মধ্যেই বাংলাদেশে ঘটে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নানা কারণে সঙ্কটে থাকা অর্থনীতিতে গতি আনতে আইএমএফের কাছে আরও ঋণ চেয়েছে সরকার।