Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

এবার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে যাচ্ছে কোটাবিরোধীরা

কোটাবিরোধীদের এ অবরোধে মঙ্গলবার বিকালে শাহবাগ মোড়সহ আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
কোটাবিরোধীদের এ অবরোধে মঙ্গলবার বিকালে শাহবাগ মোড়সহ আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকার শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টা অবরোধ করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। তাদের এ অবরোধে শাহবাগ মোড়সহ আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।

একই ব্যানারে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে শাহবাগের জমায়েত থেকে জানানো হয়।

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে কোটাবিরোধীদের মিছিল শুরু হয়। নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও বাটা সিগন্যাল ঘুরে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে গিয়ে মিছিলটি থামে। এরপর সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করার পর বিকাল পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড়ের রাস্তা ছেড়ে দেন তারা।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট গত ৫ জুন যে রায় দেয় তা স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন রয়েছে আগামী ৪ জুলাই।

মঙ্গলবার শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান, আগামীকাল বুধবারও তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেবেন তারা।

এসময় দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একই ব্যানারে একই সময়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান নাহিদ।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ এসব শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী সেই পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি তুলেছেন।

তাদের সেসব দাবির মধ্যে আছে- পরবর্তীতে সরকার কোটা ব্যবস্থা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া।

সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করার এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।

কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “এটা শুধু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন নয়। এটা একটা রাষ্ট্রের বিষয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক জিনিস নয়।

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনও বংশগত পরম্পরার বিষয় নয়, এটা একটা রাষ্ট্রীয় আদর্শ। এই আদর্শকে আমরা তরুণেরা ধারণ করি। সে জন্যই আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছি।”

বিকাল পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিল সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন অভিমুখে রওনা হন আন্দোলনকারীরা। তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার খোলা রাখার দাবি তুলবেন বলে জানা গেছে।

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুই দিন ধরে রয়েছে এই গ্রন্থাগারও।

চাকরিতে কোটা সংস্কারে একদল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পাঁচ বছর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিলের ওই পরিপত্র জারি করেছিল। তার আগে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও বাটা সিগন্যাল ঘুরে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে গিয়ে মিছিলটি থামে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

কোটা থাকায় মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে- এই দাবি তুলে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সব কোটা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয় কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে। তারপরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার বিষয়ে পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

আর নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণী) ও দশম গ্রেড থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) বাতিল করে (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সেই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি তুষারসহ সাতজন শিক্ষার্থী।

সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালে রুল জারি করে হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, পাবলিক সার্ভিস (পিএসসির) চেয়ারম্যানসহ ৬ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

হাইকোর্ট রায়ে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা আগের মতো পুনর্বহাল হয়। এ খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার।

তবে ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সোশাল মিডিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনাও চলছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আবদেনে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি এবিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ঠিক করে দিয়েছেন।

রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রতিক্রিয়ায় অন্যতম রিট আবেদনকারী অহিদুল ইসলাম তুষার বলেছেন, তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত