দেশের উপকূলীয় এলাকার অন্যতম প্রধান সংকট গভীর নলকূপ দিয়েও পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি না পাওয়া। এসব এলাকায় সুপেয় পানির অন্যান্য উৎস খাল-বিলেও ছড়িয়েছে লবণাক্ততা।
এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সুপেয় পানির জোগান দিতে সরকার ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে গত বছরের মাঝামাঝি। এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন জেলায় বসানো হয়েছে এক হাজারের বেশি সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা বা সোলার পাওয়ারড ডিস্যালাইনেশন ইউনিট। তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রকল্পের সুফল মিলছে না।
এই প্রকল্প নিয়ে করা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘পরিবেশবান্ধব সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পে উপকূলীয় এলাকার ১৬ জেলার ৬৬টি উপজেলায় ১ হাজার ১৪০ সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপন করার কথা ছিল।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) অধীনে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ২ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তবে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ায় লকডাউনসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধে পড়ায় ধীর হয়ে যায় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ ঘোষণা করে। উপযুক্ত স্থান না পাওয়ায় ১৩৯টি ইউনিট স্থাপন করতে না পারার কথা জানায় অধিদপ্তর।
৩৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ১টি সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট। প্রধানত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মসজিদে বসানো হয়েছে এসব ইউনিট।
সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট কীভাবে কাজ করে
সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট অস্ট্রেলিয়ার একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তি। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি নতুন। উপকূলীয়, বিশেষ করে লবণাক্তপ্রবণ স্থান বাছাই করে এই ব্যবস্থা বসানো হয়েছে।
প্রতিটি ইউনিটে নির্দিষ্ট আকারের একটি সৌরপ্যানেল স্থাপন করা হয়। প্যানেলের দুই পাশে দুটি পানির ট্যাংক বসানো হয়। পাশাপাশি দুই ট্যাংকের সংযোগ স্থাপনকারী একটি পাইপ থাকে।
একটি ট্যাংকে লবণাক্ত, আর্সেনিক, আয়রন বা অস্বাস্থ্যকর পানি দেওয়া হয়। এরপর সৌরচালিত বিদ্যুতের মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর সেই পানি টেনে নিয়ে যাওয়া হয় একটি চেম্বারে। এই চেম্বারে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে চলে যায় অপর ট্যাংকে। এভাবে একটি ইউনিট থেকে দিনে ৭৩ থেকে ১৪৫ লিটার পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার কথা।
সৌরশক্তি ব্যবহার করে এ ব্যবস্থায় বাষ্পীভবন ও ঘনীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধিকরণ করা হয়। লবণ ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ যেহেতু পানির সঙ্গে বাষ্পীভূত হয় না, তাই প্রক্রিয়াজাত পানি সম্পূর্ণ স্বাদহীন, গন্ধহীন ও দূষণমুক্ত হয়। ঠিক বৃষ্টির পানির মতো। যেভাবে বৃষ্টি তৈরি হয়, ঠিক সেই পদ্ধতিতেই ডিস্যালিনেশন যন্ত্রটি পানি বাষ্পীভূত করে।
তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে, বিশেষ করে ইউনিটের ফিল্টার রক্ষণাবেক্ষণ না করায় প্রকল্পের সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কী আছে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে
কাজ শেষে গত বছরের জুলাই মাসে প্রকল্পটির মূল্যায়ন করতে তিন জেলায় যায় আইএমইডির তৎকালীন পরিচালক মোহাম্মদ নাছিম আহমেদের নেতৃত্বে এক দল পরিদর্শক। পিরোজপুর, বাগেরহাট ও শরীয়তপুরের মাত্র ১৯টি ইউনিট ঘুরে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমইডি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিদর্শন করা ১৯টি প্যানেলের মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশ ইউনিটই নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি যে ইউনিটগুলো চালু রয়েছে সেগুলোর কর্মক্ষমতা আছে মাত্র ২৫ শতাংশ। ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করলে ‘অচিরেই’ এসব ইউনিটও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সেখানে বলা হয়, প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের একটি সভার কার্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ইউনিটগুলোর মধ্যে ৭৮ শতাংশ কার্যকর আছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণে এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য নতুন। প্রযুক্তিটি উপযোগী হলে ভবিষ্যতে বৃহৎ আকারে প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রযুক্তির টেকসই ও স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করতে সহজে যন্ত্রাংশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে গৃহীত এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থাপন করা ইউনিটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় প্রকল্প নিতে হলে এই পাইলট প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নিতে হবে বলে প্রতিবেদনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়।
প্রকল্পটি গ্রহণের প্রেক্ষাপট
২০১৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ২০ শতাংশ নারী লবণাক্ততার কারণে অকাল গর্ভপাতের শিকার হন, যা খুবই উদ্বেগজনক।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের শরীরে পাঁচ গ্রাম পরিমাণ লবণের প্রয়োজন তা আসে খাদ্য ও পানি থেকে। কিন্তু উপকূলীয় এলাকার পানিতে লবণের পরিমাণ অনেক গুণ বেশি থাকে। এই পানি শরীরে প্রবেশ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য তা আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। গর্ভাবস্থায় নারীরা বেশি লবণাক্ত পানি খেলে খিঁচুনি ও উচ্চ রক্তচাপ হয়। এ কারণে নারীদের গর্ভাবস্থায় সন্তান মারা যাওয়ার হারও বেশি।
কাছাকাছি সময়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআর,বি’র এক গবেষণায় বলা হয়, লবণাক্ততার কারণে উপকূলের নারীরা শুধু অকাল গর্ভপাতেরই শিকারই হন না, ৩ শতাংশ শিশুও মারা যায়। এছাড়া বেশি লবণ খাওয়ার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এমন এক পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে ২ বছরের মেয়াদে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্পের অবস্থা সম্পর্কে জানতে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা আইএমইডির পরিচালক মোহাম্মদ নাছিম আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “আমরা তিন জেলার বেশ কয়েকটি ইউনিট পরিদর্শন করে প্রকল্পের যে অবস্থা দেখতে পেয়েছি, তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরে সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ৭২ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাবে- এটা আমরা আশা করিনি। তাই ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করেছি।
“ডিস্যালাইনেশন প্রকল্পের মূল সমস্যার একটি হচ্ছে, দেশে এই ইউনিটের যন্ত্রাংশ না পাওয়া। দেশে যন্ত্রাংশ পাওয়া গেলে পরবর্তী উদ্যোগ নিয়ে মেরামত করে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা উচিত।
আইএমইডির পরিদর্শক দলের আরেকজন সদস্য সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এই প্রকল্পের সোলার প্যানেল অস্ট্রেলিয়ার এফ কিউবড কোম্পানির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ প্রত্যয় খান এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
পণ্য সরবরাহকারীর বক্তব্য
এই প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ প্রত্যয় খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই প্রযুক্তি উপকূলীয় লবণাক্তপ্রবণ বা আর্সেনিকযুক্ত পানিকে বিশুদ্ধ করার কার্যকরিতা অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বে প্রমাণিত। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি এনজিও এই প্রযুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহার করে আসছে।
“এই প্রযুক্তি ও সৌরপ্যানেলসহ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পেয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরও প্রযুক্তি যাচাই করে প্রকল্পে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এরপর সরকার এই প্রকল্প অনুমোদন করে। বর্তমানে বাংলাদেশের উপকূলীয় অনেক এলাকায় এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।”
স্থাপিত ইউনিটগুলোর মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশ নষ্ট পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যয় খান বলেন, “প্রকল্পটি শুরু করা হয় ২০১৯ সালে। ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরুই হয়েছে শরীয়তপুর, বাগেরহাট এবং পিরোজপুরে। আবার স্কুল কলেজ, মাদ্রাসায় বেশিরভাগ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।
“২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে অনেক দিন ধরেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এই সময় এই ইউনিটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ একেবারেই হয়নি। এর ফলে এসব ইউনিট পরিস্কার করা হয়নি। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় ফিল্টারসহ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”
তার দাবি, আইএমইডি প্রকল্প শুরুর জেলাগুলো থেকে মাত্র ১৮টি ইউনিট পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে; তাই ৭২ শতাংশ নষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুরো প্রকল্পের প্রায় ৭৮ শতাংশই কার্যকর দাবি করে তিনি বলেন, “কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালীসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে স্থাপিত ইউনিটগুলো পরিদর্শন করলে আসল চিত্র পাওয়া যাবে।”
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হলেও কেন সুফল মিলছে না, সে বিষয়েও কথা হয়েছে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এফ কিউবড এমডি প্রত্যয় খানের সঙ্গে।
তিনি বলছেন, “মূলত ফিল্টার রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে কিছু ইউনিটের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন পানি পেতে ইউনিটকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। প্রতি ইউনিটে পানি পরিশোধনের ফিল্টার থাকে। এসব ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। প্রয়োজনে নতুন ফিল্টার লাগাতে হয়।
“কিন্তু এই প্রকল্পে এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে কোনও ইউনিটের ফিল্টার নষ্ট হয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলেও কেউ এগিয়ে আসে না। তাই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।”
আইএমইডি এসব বন্ধ হয়ে যাওয়া প্যানেল চালু করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রত্যয় খান বলেন, “প্রকল্পটির শুরুর দিকে বাগেরহাট, শরীয়তপুর ও পিরোজপুর জেলার ইউনিটগুলো স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মসজিদে প্যানেলগুলো স্থাপন করা হয়।
কিন্তু এগুলোর কাজ শেষ হওয়ার পরপরই কোভিড-১৯ এর বিধি-নিষেধের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব প্যানেলের ফিল্টার পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কেউ করেনি। ফলে এসব এলাকার বেশিরভাগ প্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে।”
প্রকল্প এলাকার অনেক জায়গায় নিজ উদ্যোগে পরিদর্শন করার দাবি করে তিনি বলেন, কোভিডের পর স্থাপন করা প্যানেলগুলো ঠিক মতো কাজ করছে।
স্থাপন করা ইউনিটগুলোর যন্ত্রাংশ দেশে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “যে কোনও প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ নষ্ট হতেই পারে। কিন্তু এ পর্যন্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কর্তৃপক্ষ কোনও অভিযোগই করেনি। প্রয়োজন হলে প্রকল্পের সকল যন্ত্রাংশ দেশে উৎপাদন বা বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।”
প্রকল্প পরিচালক জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানির জোগান দিতে এই প্রকল্পটি পাইলট হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
“প্রকল্পটিতে রক্ষণাবেক্ষণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মূল প্রকল্প গ্রহণ করা হলে সেখানে এই কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হলে প্রকল্পটি জনবান্ধব হয়ে উঠবে বলে মনে করছি আমরা।”
প্রশিক্ষণ নিয়ে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ১৪০টি সোলার পাওয়ারড ডিস্যালাইনেশন ইউনিট তত্ত্বাবধানে সমসংখ্যক লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ৯০১ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এজন্য ৫৪ লাখ টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিদর্শক দলের একজন সকাল সন্ধাকে বলেন, “আমরা জেনেছি প্রশিক্ষণে কিছু আর্থিক সুবিধা থাকায় তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করতে পারে- এমন লোককে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করা হয়নি।
“যেমন যে স্কুল বা মাদ্রাসায় প্যানেল বসানো হয়েছে, সেই স্কুল বা মাদ্রাসায় তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক বা প্রভাবশালী কেউ। প্রশিক্ষণ পাওয়া এসব লোক এখন এই দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই প্রকল্পের এই অবস্থা হয়েছে।”
যাদের জন্য প্রকল্প, তারা কী বলছেন
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার তালবাড়িয়ার দারুল উলুম ওয়ারলেস মাদ্রাসার বাইতুস সোবহান জামে মসজিদে একটি ডিস্যালাইনেশন ইউনিট বসানো হয়।
সুফল কেমন পাচ্ছেন—জানতে চাইলে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি। ইউনিট থেকে দিনে সর্বোচ্চ ১২০ লিটার পানি পাই। অনেক উপকৃত হচ্ছি।”
ওই এলাকায় এরকম আরও ইউনিট বসানোর দাবি জানান তিনি।
মিরসরাই সদর উপজেলার পশ্চিম পাড়ার ‘আলেখা ভবনে’ স্থাপন করা ইউনিটের সুফলভোগীদের একজন জাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এলাকার পানিতে আয়রন থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছিল। এই প্রকল্পের আওতায় দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ লিটার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমাম মো. জাফরুদ্দিন বলেন, “আমাদের মসজিদে একটি ডিস্যালাইনেশন ইউনিট বসানো হয়েছে। এখান থেকে আমরা দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ লিটার বিশুদ্ধ পাচ্ছি। মসজিদের মুসল্লি, প্রতিবেশীরা উপকৃত হচ্ছে।”