ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গেইম অ্যাওয়ার্ডস এর মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে অ্যাস্ট্রো বট এবং ফাইনাল ফ্যান্টাসি সেভেন রিবার্থ গেইম দুইটি সবচেয়ে বেশি বিভাগে সেরা হওয়ার তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে চালু হওয়া গেইম অ্যাওয়ার্ডস ‘গেইমিং জগতের অস্কার’ হিসেবেও পরিচিত। গেইমিং ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে জনপ্রিয় এ সম্মাননা অনুষ্ঠানটি হবে ডিসেম্বরের ১২ তারিখে, যেটি সরাসরি ১১ কোটি ৮০ লাখ ভিউয়ার অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে উপভোগ করবেন বলে আয়োজকরা ধারণা করছেন।
আয়োজক জেফ কিঘলি জানান, থ্রিডি প্ল্যাটফর্মার গেইম অ্যাস্ট্রো বট এবং রোল-প্লেয়িং গেইম ফাইনাল ফ্যান্টাসি বছরের সেরা গেইম ক্যাটাগরিসহ সাতটি করে বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে।
সেরা গেইমের মনোনয়নের তালিকায় আরও রয়েছে- কার্ড গেইম বালাত্রো, এলডেন রিং: শ্যাডো অব দ্য ইর্ডট্রি এবং মেটাফোর: রেফ্যান্টাজিও অ্যান্ড ব্ল্যাক মিথ: উকং।
১২ ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়ার পিকক থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের গেইম অ্যাওয়ার্ডস।
যেভাবে গেইম অ্যাওয়ার্ডস দেয়া হয়
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ১৩০টি গেইম আউটলেট থেকে বিচারক প্যানেলের পাশাপাশি কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ফ্যানদেরও ভোটিং-কে পয়েন্টে পরিণত করেই কোনও বিভাগের সেরা নির্বাচন করা হয়। একেকটি বিচারক প্যানেলে থাকেন গেইম বিষয়ক সাংবাদিক, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ইন্ড্রাস্টি সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং ইনফ্লুয়েন্সাররাও। এদের কাছ থেকে ৯০ শতাংশ পয়েন্ট আসে। আর বাকি ১০ শতাংশ পয়েন্ট আসে পাবলিক ভোটের মাধ্যমে।
এবারের মনোনীত সেরা গেইমগুলো
‘বাল্ডুরস গেইট থ্রি’ যে ২০২৩ সালের সেরা গেইম হবে সেটি অনেকে আগেভাগে আন্দাজ করতে পারলেও, এ বছর মুকূটধারীকে নিয়ে ধারণা করাটা কঠিন। কেননা, ২০২৪ সালে ‘বাল্ডুরস গেইট থ্রি’ এর মতো এতো মানসম্মত কোনও গেইম রিলিজ হয়নি।
সেরা তালিকায় মনোনয়ন পাওয়া এ বছরের গেইমগুলো নিয়ে নিচে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো-
অ্যাস্ট্রো বট
বাজারে সনির প্লে স্টেশনের তিন দশক পূর্তিতে রিলিজ পাওয়া ‘অ্যাস্ট্রো বট’ একটি দারুণ গেইম। এটি একইসঙ্গে পুরনো দিনের গেইম খেলার আনন্দ স্মরণ করিয়ে দেয়। সেপ্টেম্বরে মাসকট-চরিত্র অ্যাস্ট্রো বট যখন বাজারে ডুয়াল সেন্স কন্ট্রোলারে খেলার সুযোগ নিয়ে আসে, তখন প্লে-স্টেশন ভক্ত এবং সমালোচকরা দারুণ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন।
গেইমারদের কাছে এর থ্রিডি চিত্তাকর্ষক লেগেছে। পাশাপাশি তারা নস্টালজিকও হয়েছেন। আধুনিক জীবনে গেইমারদের স্কুল জীবনের ‘ভাইব’ ফিরে পাওয়ার মতো অনুভূতি দিতে সক্ষম হয়েছে অ্যাস্ট্রো বট।
‘গেইম অব দ্য ইয়ার’ ক্যাটাগরি ছাড়াও অ্যাস্ট্রো বট মনোনয়ন পেয়েছে- সেরা দিকনির্দেশনা, সেরা শিল্প নির্দেশনা, সেরা স্কোর এবং সঙ্গীত, সেরা অডিও ডিজাইন, সেরা অ্যাকশন/অ্যাডভেঞ্চার, সেরা পারিবারিক খেলা ক্যাটাগরিতে।
বালাত্রো
গেইমটি বিস্ময়করভাবে এবার গেইমারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। ‘লোকালথাঙ্ক’ ছদ্মনামের এক ব্যক্তি একাই এই পোকার কার্ড গেইমটি ডেভেলপ করেছেন। ‘বালাত্রো’ শব্দটি লাতিন থেকে এসেছে, যার বাংলা অর্থ বিদ্রুপ।
পোকার খেলায় পয়েন্ট স্কোর জন্য খেলোয়াড়দের হাতে বিভিন্ন কার্ডের সমন্বয়কে পোকার হ্যান্ড বলা হয়। বালাত্রো খেলায় এর সঙ্গে ১৫০ টি জোকার কার্ড যোগ করা হয়েছে। এতো জোকার কার্ড যোগ হওয়ায় পোকার হ্যান্ডের বৈচিত্র্য বহুমাত্রিক হয়েছে। ফলে খেলার নিয়ম মডিফাই হয়ে তৈরি হয়েছে নতুন আঙ্গিক ও চমক।
যদি বালাত্রো সেরা গেইমের পুরস্কার জিতে নেয়, তাহলে এটি হবে গেইম অ্যাওয়ার্ডস এর ইতিহাসে প্রথম কোনও ‘ইন্ডি গেইম’, যেটি পুরস্কার জিতেছে। ‘ইন্ডি গেইম’ বলতে একক ব্যক্তির দ্বারা এবং সেরকম কোনও অর্থ বিনিয়োগ না করেই তৈরি গেইমকে বোঝায়।
বালাত্রোর উদ্ভাবক ‘লোকালথাঙ্ক’ একজন রহস্যময় চরিত্র। তিনি তার পরিচয় গোপন রাখতেই পছন্দ করেন। সাক্ষাৎকারও সেইভাবে দেন না তিনি। কাজেই পুরস্কার বিতরণীর রাতে তিনি থাকবেন না- সেটাই বরং স্বাভাবিক।
বালাত্রো মনোয়ন পেয়েছে- সেরা দিকনির্দেশনা, সেরা স্বাধীন গেইম, সেরা আত্মপ্রকাশ ইন্ডি গেইম এর ক্যাটাগরিতে।
ফাইনাল ফ্যান্টাসি সেভেন: রিবার্থ
অরিজিনাল প্লেস্টেশন গেইম ক্যাটাগরির ‘ফাইনাল ফ্যান্টাসি সেভেন রিবার্থ’ অনেক অতিরিক্ত কন্টেন্ট এবং মিনি-গেইম দিয়ে ভক্তদের ব্যস্ত রাখতে সবকিছুকে আরও উন্নত করেছে। গেইমটির পিএস৫- এর গ্রাফিক্স পারফরম্যান্স নিয়ে যদিও কিছু সমালোচনা রয়েছে। মূল গল্পের পরিবর্তনও সবার পছন্দ হয়নি। তবে এটি ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ হওয়ার সময় বছরের সেরা গেইমের তালিকায় অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছিল।
গত বছরের গেইম অ্যাওয়ার্ডস এ এটিকে ‘সবচেয়ে প্রতীক্ষিত’ গেইম হিসেবে ভোটাররা নির্বাচিত করেছিল। যেটি এই গেইমকে এ বছর সম্মাননা জিতে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রেখেছে। এর আগের ভার্সনটি ২০২০ সালে ‘দ্য লাস্ট অব আস: পার্ট ২’ এর কাছে হেরে গিয়েছিল। সেবার জয়ী হতে না পারাটাও এবার সেরা গেইমের লড়াইয়ে একে এগিয়ে রেখেছে!
গেইমটির ইংরেজি ভার্সনে অ্যারিথের ভূমিকায় অভিনয় করা ব্রায়ানা হোয়াইটকেও সেরা পারফরম্যান্সের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
এছাড়া গেইমটি মনোননয়ন পেয়েছে, সেরা পরিচালনা, সেরা গল্প, সেরা স্কোর এবং সংগীত, সেরা আরপিজি (রোল প্লেয়িং গেইম), সেরা অডিও ডিজাইন বিভাগে।
মেটাফোর: রিফ্যানটাজিও
দীর্ঘ-প্রতীক্ষার পর জনপ্রিয় গেইম নির্মাতা পারসোনা-৫ এর তৈরি ‘মেটাফোর: রিফ্যানটাজিও’ এ বছর বাজারে এসেছে। জাপানি নির্মাতা পারসোনা-৫ গেইমটিতে মধ্যযুগীয় ফ্যান্টাসি বিশ্বের পরিবেশ তৈরি করেছে। অ্যানিমে-ভিত্তিক গেইমটির কাহিনী দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে গেইমে বর্ণবাদ এবং রাজনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রূপক আকারে আসায় এটি সমালোচকদের মুগ্ধ করেছে।
রিলিজের দিনই বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ কপি। যা এটির প্রকাশক অ্যাটলাসের জন্য তো বটেই, যেকোনও জাপানি কোম্পানির জন্যও একটি রেকর্ড।
শীর্ষের লড়াই ছাড়াও গেইমটি সেরা নির্দেশনা, সেরা আখ্যান, সেরা শিল্প নির্দেশনা, সেরা স্কোর এবং সংগীত, সেরা আরপিজি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে।
ব্ল্যাক মিথ: উকং
চীনা মিথলজির ওপর লেখা উপন্যাস ‘জার্নি টু দ্য ওয়েস্ট’- এর কাহিনীকে ভিত্তি করে এই অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেইমটি প্রকাশের পরপরই বিশাল হিট হয়। চীনে প্রচুর পরিমাণে বিক্রির পাশাপাশি পশ্চিমেও জনপ্রিয়তা পায়।
অবশ্য গেইম অব দ্য ইয়ারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় এটির অন্তর্ভুক্তি কিছুটা বিস্ময়করই ছিল। কেননা এই গেইমের টাইটেলে ‘ব্ল্যাক’ থাকায় দারুণ সমালোচনা ছিল।
এ গেইমটি আরও মনোনয়ন পেয়েছে- সেরা অ্যাকশন, সেরা দিকনির্দেশনা, সেরা শিল্প নির্দেশনা, সেরা স্কোর এবং সঙ্গীত বিভাগে।
এলডেন রিং: এরডট্রি শ্যাডো
এ গেইমটির গুণমান নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া আরপিজি অ্যাকশন গেইম ‘এলডেন রিং’ এর এটি ফলো-আপ গেইম।
রিভিউয়ারদের কাছে এটি সবচেয়ে ভালো রিভিউ পাওয়া একটি গেইম। এতে লড়াই এবং যুদ্ধের তীব্রতা খেলোয়াড়দের মুগ্ধ করেছে, মাতিয়ে রেখেছে। অবশ্য এর নির্মাতা কোম্পানি ‘সফটওয়্যার’ বরাবরই এমন ধরনের গেইম তৈরি করে আসছে।
তবে এটি সত্যিকারের ‘বছরের সেরা গেইম’ হিসেবে বিবেচিত হবে কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এর কারণ হলো ‘এরডট্রি শ্যাডো’ কোনও নতুন গেইম নয়। খেলার সময় ডাউনলোড করে নতুন নতুন কনটেন্ট (ডিএলসি) যোগ করে নিতে হয়। ফলে এর সমালোচনাকারীরা বলছেন, এটি কেবল নতুন বোতলে পুরনো মদ।
গেইমটি আরও যেসব বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে- সেরা খেলা নির্দেশনা, সেরা শিল্প নির্দেশনা, সেরা আরপিজি।
পুরস্কারের জন্য মনোনীত অন্যান্য গেইম
ইন্ডিপেন্ডেন্ট গেইম ‘অ্যানিমেল ওয়েল’ এ বছর রিভিউয়ারদের কাছ থেকে অন্যতম সেরার তকমা পেলেও গেইম অ্যাওয়ার্ডস এর সেরার তালিকায় মনোনয়ন পায়নি। ইউটিউবার ‘ভিডিওগেইম ডাংকি’র লেবেল থেকে রিলিজ পাওয়া গেইমটি অবশ্য সেরা ইন্ডি অভিষেক এবং সেরা স্বাধীন গেইম বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনীত হয়েছে।
মাইক্রোসফটের কোম্পানি এক্স বক্সের এক্সক্লুসিভ রিলিজ ‘হেলব্লেড ২: সেনসুয়াস সাগা’ বেশ কয়েকটি মনোনয়ন পেয়েছে। এটি বের করেছে ব্রিটিশ স্টুডিও নিনজা থিওরি।
পুরস্কার দেওয়া কিংবা মনোনয়ন পেতে গেইমগুলোর যে বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচিত হয়, তার মধ্যে রয়েছে-
গেইম প্লে: খেলার অভিজ্ঞতা এবং খেলোয়াড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। কতটা আকর্ষণীয়, চ্যালেঞ্জিং, এবং সৃজনশীল, এসব নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়।
গল্প এবং চরিত্র নির্মাণ: গল্প কতটা আগ্রহজনক এবং চরিত্রগুলো কতটা গভীর ও উন্নত, এটি নির্ধারণ করা হয়। একটি ভাল গল্প গেইমের প্রতি আগ্রহ এবং ব্যক্তিগত সংযোগ তৈরিতে সহায়তা করে।
গ্রাফিক্স এবং ভিজ্যুয়াল ডিজাইন: গেইমের ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা যেমন চরিত্রের ডিজাইন, পরিবেশ এবং ইফেক্ট, এর ওপরও মূল্যায়ন করা হয়। গেইমের গ্রাফিক্স মানের উন্নতি এবং গেমপ্লে- এর সঙ্গে সাদৃশ্য কতটা বজায় থাকে, এসব বিষয় বিচার করা হয়।
সাউন্ড ডিজাইন: গেইমের সাউন্ড ট্র্যাক, শব্দ প্রভাব এবং সাউন্ড ডিজাইনকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মান হিসেবে গণ্য করা হয়। সাউন্ডের গুণগত মান পরিবেশ ও আবেগের ওপর প্রভাব ফেলে।
ইনোভেশন: গেইমের নতুনত্ব এবং উদ্ভাবনী দিকগুলো বিশেষভাবে মূল্যায়িত হয়। এটি এমন কিছু ফিচারও হতে পারে যা গেইমের আগের সংস্করণের থেকে আলাদা বা নতুন কিছু এনে দিয়েছে।
মাল্টিপ্লেয়ার ফিচার: মাল্টিপ্লেয়ার গেইমের ক্ষেত্রে, একাধিক খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা এবং সেবার মানও বিচার করা হয়। গেইমটির কতটা দক্ষতার সঙ্গে কো-অপ মোড বা কম্পিটিটিভ মুড আছে, এটি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
টেকনিক্যাল এক্সেলেন্স: গেইমটি প্রযুক্তিগত দিক থেকে কতটা উন্নত, যেমন ফ্রেম রেট, বাগ ফ্রি গেমপ্লে, এবং অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা ফিজিক্স সিস্টেমসহ অন্যান্য টেকনিক্যাল স্ট্যান্ডার্ডের মান বিবেচনা করা হয়।
এসব কিছু বিবেচনায় এবারের গেইম অ্যাওয়ার্ডস-এ বিভাগওয়ারি মনোনয়নের একটি তালিকা দেওয়া হলো-
সেরা আর্ট ডিরেকশন : ‘অ্যাস্ট্রো বট’ এবং ‘ব্ল্যাক মিথ: উকং’- এর ভিজ্যুয়াল ডিজাইন বিশেষ প্রশংসা পেয়েছে। ‘নেভা’-র আর্ট ওয়ার্ক বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে।
সেরা সঙ্গীত ও সাউন্ড ডিজাইন: ‘ফাইনাল ফ্যান্টাসি সেভেন রিবার্থ’, ‘সাইলেন্ট হিল ২’, এবং ‘হেলবেড ২: সেনসুয়া’স সাগা’।
সেরা অ্যাকশন/অ্যাডভেঞ্চার গেইম: ক্লাসিক হরর গেইমের দুর্দান্ত রিমেক ‘সাইলেন্ট হিল টু’ এবং ‘প্রিন্স অব পার্সিয়া: দ্য লস্ট ক্রাউন’।
সেরা মোবাইল গেইম: ‘এএফকে জার্নি’, ‘পোকেমন ট্রেডিং কার্ড গেইম পকেট’ এবং ‘উদারিং ওয়েভস’।
বেস্ট ভিআর/এআর গেইম : ‘ব্যাটম্যান: আর্কহ্যাম শ্যাডো’ এবং অ্যাসগার্ড’স র্যাথ টু এর মত আকর্ষণীয় গেইম মনোনীত হয়েছে।
এছাড়াও পুরস্কার দেওয়া হয় বেস্ট রোল প্লেয়িং গেইম (আরপিজি), বেস্ট ডিবাট গেইম, বেস্ট অ্যাডাপটেশন গেইম ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে।
গেইম অ্যাওয়ার্ডস- এর ইতিহাস
গেইম অ্যাওয়ার্ডস এর জন্ম হয়েছিল এর আয়োজক জেফ কিঘলির ইউটিউব শো ‘দ্য ইলেকট্রনিক প্লে গ্রাউন্ড’ থেকে। কিঘলি তখন গেইমিং নিয়েই সাংবাদিকতা করতেন। তিনি বুঝেছিলেন যে গেইমিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি সম্মানজনক পুরস্কার ইভেন্ট প্রয়োজন। ২০১৪ সালে তিনি ‘গেইম অ্যাওয়ার্ডস’ প্রতিষ্ঠা করেন।
গেইম অ্যাওয়ার্ডস প্রতিষ্ঠার পর এই শিল্পে একটি বড় পরিবর্তন আসে। পুরস্কার পাওয়া ‘গেইম অব দ্য ইয়ার’ এর বিক্রির পরিমাণ হু হু করে বাড়তে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে ‘দ্য লিজেন্ড অব জেল্ডা: টিয়ার্স অব দ্য কিংডম’ গেইমটি নিনটেন্ডো সুইচ প্ল্যাটফর্মে প্রায় ১০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় এবং এটি ছিল ‘গেইম অব দ্য ইয়ার’। এর ফলে নিনটেন্ডো কোম্পানির শেয়ার মূল্যও বাড়ে।
‘দ্য উইচার ৩: ওয়াইল্ড হান্ট’ ২০১৫ সালে ‘গেইম অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পাওয়ার পর বিক্রি এক মাসে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
২০১৬ সালে ‘হেডফোন’ গেইমটি সাউন্ড ডিজাইনের জন্য সেরার পুরস্কার পায়। এটি ছিল ইন্ডি গেইম নির্মাতাদের জন্য একটি মাইলফলক, কারণ সাধারণত বড় গেইম কোম্পানির গেইমগুলোই এই ধরনের পুরস্কার পেয়ে আসছিল।
২০২৪ সালের গেইম ইন্ড্রাস্টির পর্যালোচনা
গেইম ইন্ড্রাস্টি ২০২৪ সালে একটি বিশাল ও ক্রমবর্ধমান বাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৪ সালের গ্লোবাল ভিডিও গেইম বাজার ২৮ হাজার ২৩০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এই শিল্পের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রয়েছে মোবাইল গেইমিং, কনসোল গেইমিং, পিসি গেইমিং এবং ব্রাউজার ভিত্তিক গেইমিং।
মোবাইল গেইমস সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম, যা এই মার্কেটের প্রায় অর্ধেকের বেশি দখল করে আছে। তবে ২০২৪ সালে মাল্টিপ্লেয়ার ও স্ট্রিমিং এর কারণে কনসোল গেইমস এর বাজারও দ্রুত বাড়ছে। পিসি গেইমস উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম হওয়ার কারণে এর জনপ্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পিসি গেইমস খাতে ৭.৭৫ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ব্রাউজার ভিত্তিক গেইমস মার্কেট অপেক্ষাকৃত ছোট বাজার দখল করলেও, সহজলভ্যতা এবং ফ্রি-টু-প্লে মডেলের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির গেইমারদের কাছে এখনও আবেদন হারায়নি।
শিল্পের প্রবণতা
ইন-গেইম কেনাকাটা: ২০২৪ সালে ইন-গেম পণ্যের বিক্রয় ৭ হাজার ১১০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
ই-স্পোর্টসের বৃদ্ধি: ই-স্পোর্টস এবং মাল্টিপ্লেয়ার গেইমিংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গেমারদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হচ্ছে।
স্বাধীন (ইন্ডি) গেম ডেভেলপমেন্ট: ছোট ছোট ডেভেলপার দল বা স্বতন্ত্র ডেভেলপারদের তৈরি গেইমগুলোর চাহিদা বাড়ছে।
বাজার ও বিপণন
• এশিয়া-প্যাসিফিক: এই অঞ্চলটি গ্লোবাল গেইমস মার্কেটের ৪৮% শেয়ার দখল করেছে। চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া এই অঞ্চলের প্রধান চালিকা শক্তি।
• উত্তর আমেরিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের গেইমস মার্কেটের আকার ছিল ৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
• ইউরোপ: ইতালির গেইমস মার্কেট সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে, বার্ষিক গড় ১২ শতাংশের উপরে।
{সূত্র: Mordor Intelligence – গেইমিং মার্কেট বিশ্লেষণ (2024), Techopedia – গেইমিং শিল্পের প্রবণতা ও পরিসংখ্যান (২০২৪)}
গেইমের আয়ের উৎস
নির্মাতারা প্রাথমিকভাবে বিক্রির মাধ্যমে আয় করে। কনসোল, পিসি, এবং মোবাইল প্ল্যাটফর্মে গেইম বিক্রি একটি প্রধান আয় উৎস। প্যাকেজড গেম এবং ডিজিটাল ডাউনলোডের মাধ্যমে বিক্রিত গেইমগুলোর মাধ্যমেও আয় হয়। অনেক বিক্রেতা ডাউনলোডযোগ্য অতিরিক্ত কনটেন্ট বা ডিএলসি বিক্রি করে আয় করে। এটি হতে পারে নতুন মিশন, চরিত্র, বা কস্টিউম, যা গেইমটিকে খেলতে গেইমারদের আরও উৎসাহিত করে।
ফ্রি-টু-প্লে এবং ইন-অ্যাপ পারচেজ নামে আরেকটি আয়ের উৎস রয়েছে। যাতে খেলোয়াড়রা গেইমটি খেলার জন্য কোনো প্রাথমিক খরচ দেন না, তবে তারা বিভিন্ন ভার্চুয়াল আইটেম, যেমন স্কিন, চরিত্রের উন্নতি বা এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট কেনার জন্য টাকা ব্যয় করেন। কিছু গেইমে আবার মাইক্রো-ট্রানজাকশন থাকে, যেখানে খেলোয়াড়রা ছোট ছোট পরিমাণে অর্থ ব্যয় করে গেইম খেলতে গিয়ে কিছু সুবিধা অর্জন করতে পারে। এটিও গেইমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। কিছু গেইম আবার সাবস্ক্রিপশন মডেল অনুসরণ করে, যেখানে খেলোয়াড়দের প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হয়। উদাহরণ হিসেবে ওয়ার্ল্ড অব ওয়ারক্রাফট বা ফাইনাল ফ্যান্টাসি ফোরটিন-এর কথা বলা যায়।
বিশ্বের সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া গেইম
এ পর্যন্ত বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া গেইমগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ৫২ কোটি কপি বিক্রি হওয়া টেট্রিস। এই ক্লাসিক পাজল গেইমটি ১৯৮০- এর দশকে মুক্তি পায়। মজাং স্টুডিওর তৈরি মাইনক্র্যাফট গেইমটি আছে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া এই গেইমটি এর সরলতার জন্য ২৩ কোটি ৮ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে।
গ্র্যান্ড থেফট অটো ভি- গেইমটি বিক্রি হয়েছে বিশ্বব্যাপী ১৮ কোটি কপি। ২০১৩ সালে রকস্টার গেইমসের তৈরি এই গেইমটি ওপেন-ওয়ার্ল্ড গেইম-প্লে এবং স্টোরি মোডের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অনলাইনে গেইমটির বিক্রি এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডাব্লিউআইআই স্পোর্টস’ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯ কোটি কপি এবং পাবজি (প্লেয়ারআননোনস ব্যাটল গ্রাউন্ড) ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়ে বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৭ কোটি কপি। পাবজি তার অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ খেলোয়াড়কে যুক্ত করেছে।
বিশ্বসেরা গেইমিং কোম্পানি
বিশ্বের সেরা গেইমিং কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে, নিনটেনডো। জাপানের কিয়োটোর এই কোম্পানি জনপ্রিয় গেইম সিরিজ সুপার মারিও, জেলডা, পোকেমন এবং অ্যানিমেল ক্রসিংয়ের মতো গেইম তৈরি করেছে। ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করা নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক রকস্টার গেইমস কোম্পানি তাদের গ্রান্ড থেফট অটো এবং রেড ডেড রিডেম্পশন গেইম সিরিজের জন্য বিখ্যাত। তাদের গেইমগুলোর গল্পের গভীরতা এবং ওপেন-ওয়ার্ল্ড গেমপ্লে জনপ্রিয়তার চূড়ায় রয়েছে।
জাপানি কোম্পানি সনি ইন্টারঅ্যাকটিভ এন্টারটেইনমেন্ট প্লেস্টেশন কনসোলের মালিক। গেইমিং বিশ্বে এ কোম্পানিটি গড অব ওয়ার, দ্য লাস্ট অব আস এবং গ্র্যান টুরিসমো সিরিজের কারণে বিপুলভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।
ইলেকট্রনিক আর্টস বা ইএ ১৯৮২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার যাত্রা শুরু করে। এই কোম্পানির জনপ্রিয় সিরিজ ফিফা, ম্যাডেন এনএফএল এবং দ্য সিমস গেইম সিরিজ। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কোম্পানি ভালভ করপোরেশনও তার গেইম হাফ-লাইফ, পোর্টাল এবং কাউন্টার-স্ট্রাইকের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ বাজার ও গেইম কোম্পানি
ভারতভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সিক্সডাব্লিউরিসার্চ’ (6Wresearch) জানাচ্ছে, বাংলাদেশের তৈরি গেইমস এর বাজার ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ হতে পারে। মোবাইল গেইমস এই বাজারের প্রধান অংশ, যা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাজারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ১১ শতাংশ হারে হতে পারে। গেইমিং শিল্পের এই বৃদ্ধি ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উচ্চমানের গেইমিং ডিভাইসের বিস্তার দ্বারা ত্বরান্বিত হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে বেশ কিছু গেইম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে রয়েছে, উল্কা গেইমস লিমিটেড, আজমি স্টুডিও, পেচাস গেইমস স্টুডিও এবং ব্যাটারি লো ইন্টাঅ্যাকটিভ লিমিটেড।
বাংলাদেশের গেইম ডেভেলপাররা সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস প্ল্যাটফর্মে গেইম ডেভেলপ করে এবং বিজ্ঞাপন ও ইন-অ্যাপ পারচেজের মাধ্যমে আয় করে।