Beta
বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

বাজেটে প্রস্তাব প্রতিফলিত না হওয়ায় আশাহত পোশাক ব্যবসায়ীরা

ss-garments -8-6-24
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এতে তারা কিছুটা আশাহত হয়েছেন বলেও জানান।

শনিবার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খাতসংশ্লিষ্টরা। যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ।

জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রস্তাবিত বাজেটে ৩২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এই প্রধান খাতটির জন্য কিছু নীতি সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।”

বাজেট সামনে রেখে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিল বিজিএমইএ। সেগুলো হলো : রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো ০ দশমিক ৫ শতাংশ করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত তা কার্যকর করা, প্রণোদনার জন্য দেওয়া নগদ সহায়তার উপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা, ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইনসেনটিভ অব্যাহত রাখা, পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির উপর কর রেয়াত এবং এসব পণ্য বিকল বা নষ্ট হলে প্রতিস্থাপনের জন্য রেয়াতি হারে আমদানির সুযোগ দেওয়া।

এছাড়া শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বিশেষ তহবিল বরাদ্দ এবং নন-কটন পোশাক রপ্তানি ও বিনিয়োগে সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

এস এম মান্নান তার বক্তব্যে বলেন, “চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আমাদের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। শুধুমাত্র মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮- ১৮ শতাংশ।”

এরকম একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে সিংহভাগ রপ্তানি আয় অর্জনকারী পোশাক শিল্পকে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিলো বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর দশমিক পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিলো এবং এখনও আছে। আশা করি সরকার তা পুনরায় বিবেচনা করবে।”

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষরা চাপে আছেন উল্লেখ করে এস এম মান্নান বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিলো, বাজেটে ফুড রেশনিং বাবদ পোশাক শ্রমিকদের জন্য বিশেষ তহবিল বরাদ্দ রাখা হবে। তারাই অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। আমার বিশ্বাস, বাজেটে পোশাক শ্রমিকদের ফুড রেশনিংয়ের জন্য বিশেষ তহবিলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে।”

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “৮০ শতাংশ কারখানা আইসিইউতে আছে। এখন যদি সহযোগিতা না করা হয় তাহলে এগুলো লাইফ সাপোর্টে যাবে। তারপর বন্ধ হয়ে যাবে। এতে তো কারও লাভ হবে না।”

কাস্টমস আইন ২০২৩ এর ১৭১ ধারায় আমদানিকৃত পণ্যের এইচএস কোড ভুল হলে ২০০-৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান করা হয়েছে। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “এরকম প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। এটা হতে পারে? শত শত পেপার নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। মাঝে মধ্যে আমাদের কর্মীরা এমন ভুল করে বসে। এমনকি বায়াররাও তো একই ভুল করে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ এত দিলে কিভাবে হবে? এগুলো শিল্পের বিকাশ আটকাতে পারে।”

নতুন কাস্টমস আইন বাস্তবায়নের আগে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে মতামত নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, “কারখানায় গ্যাস নাই। গ্যাস সরবরাহ কবে স্বাভাবিক হবে জানি না। এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ট্যাক্স বাড়িয়ে আমাদের আরও বিপদ করে ফেলা হলো। গাড়িতে তেল নাই কিন্তু আপনি চালককে চাবুক পিটিয়ে বললেন গাড়ি চালাতে। সে কি পারবে? আমাদের অবস্থা সেই চালকের মতো আর কারখানার অবস্থা গাড়ির মতো।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের ঝুট বা বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূসক ও তা থেকে উৎপাদিত ফাইবার সরবরাহের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ মূসক প্রদান করতে হয়। হিসাব মতে, এসব ঝুট থেকে বছরে ১২০০ মিলিয়ন কেজি সুতা উৎপাদন করা সম্ভব যা প্রতি কেজি ৩ দশমিক ৪০ ডলার হিসাবে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

“এই ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মূসকের ফলে দেশের রি-সাইকেল মিলগুলো এসব ঝুট ব্যবহার করে ফাইবার তৈরি করতে পারছে না। ফলে ঝুটগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। অথচ এ ধরনের ফাইবারগুলো আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। এতে করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

বাজেটের বেশ কিছু প্রস্তাবকে পোশাক শিল্প বিকাশের অন্তরায় বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

প্রস্তাবগুলো হলো- স্টিল বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ সামগ্রীর ওপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানকর্তৃক মূলধনী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রীর আমদানি শুল্ক ০ থেকে ১ শতাংশ নির্ধারণ।

জ্বালানী সাশ্রয়ী বাতির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব।

নতুন বন্ড লাইসেন্স ফি পঞ্চাশ হাজার টাকার জায়গায় এক লাখ টাকা এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি বার্ষিক পাঁচ হাজার টাকার বদলে দশ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত