Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

এস কে সুরের লকারে ৫ কোটি টাকার স্বর্ণ-বিদেশি মুদ্রা

এস কে সুর চৌধুরী।
এস কে সুর চৌধুরী।
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরীর লকারে প্রায় ৫ কোটি টাকার স্বর্ণালংকার, বিদেশি মুদ্রা ও এফডিআরের নথি পাওয়া গেছে। 

ররিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১০ ঘণ্টার বেশি সময়ের প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে থাকা তার তিনটি লকার খুলে এ সম্পদ পায়।  

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি লকারে এক কেজি স্বর্ণ, এক লাখ ৭০ হাজার ইউএস ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো এবং ৭০ লাখ টাকার এফডিআরের নথি পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

রবিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে এস কে সুরের লকার খুলতে দুদকের সাত সদস্যের একটি টিম যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

এ সময় উপস্থিতি ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা সালেহা নুর। টানা সাড়ে ১০ ঘণ্টার প্রচেষ্টা শেষে অভিযান শেষ হয় রাত ৯টা ২০ মিনিটে।

লকা‌রে যেসব স্বর্ণালংকার পাওয়া গে‌ছে- ২৩টি সোনার চেইন যার ওজন ১৭৬.৩ গ্রাম, দুটি টিকলি ২০০৭ গ্রাম, কানের দুল ১২টা ৮৯২ গ্রাম, লকেট ৩টা এক দশ‌মিক ৩ গ্রাম, ছয়টি চুড়ি ১০৭ গ্রাম, দু‌টি সীতাহার ১২০.৯ গ্রাম, তিন‌টি আংটি ১৮.৩ গ্রাম, সোনার কয়েন তিনটি ২৩৯ গ্রাম, সোনার চামচ একটি ৬ গ্রাম, নোলক ৮ গ্রাম, ব্রেসলেট ১৬ গ্রাম, গলার হার তিনটি ৫৭.৩ গ্রাম ও মুকুট একটি ১৫৪ গ্রাম।

আরও পাওয়া গেছে চুড়ি দুটি ৩২.৯ গ্রাম, চূড়ি-দুটি ২১ গ্রাম, সিতাহার একটি ১১ গ্রাম,  মুকুট দুটি ২১.৭ গ্রাম, লকেট দুটি ২৬৮ গ্রাম, টিকলি একটি ৬৯ গ্রাম, গলার চেইন তিনটি ৩৯.৩ গ্রাম, গলার হার দুটি ৩২.৫ গ্রাম, কানের দুল আটটি ৫৮.৮ গ্রাম ও শার্টের বোতাম (স্বর্ণ) চারটি ৬২ গ্রাম।

অভিযান প্রসঙ্গে দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জমান সাংবাদিকদের বলেন, “দুদকের অনুমোদন ক্রমে এস কে সুরের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য থাকায় তার সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি হিসাব জমা দেননি। এজন্য আমরা তার সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য তার বাসায় অভিযান চালাই।

“অভিযানে তথ্য পাওয়া যায় তার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকারে জিনিসপত্র রয়েছে। তার ভিত্তিতে আদালতের অনুমোদন ক্রমে রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে তল্লাশি করা হয়। সারাদিন তল্লাশি শেষে এক কেজি ৫ গ্রাম স্বর্ণ, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর নথি পেয়েছি। যেসব এফডিআর পাওয়া গেছে তা তার নামে নয়। যেসব অ্যাকাউন্টে আছে তা আমরা যাচাই করব।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যা পেয়েছি তার ২২ পাতার একটি জব্দ তালিকা তৈরি করেছি। সোমবার আদলতে উপস্থাপন করব। যে সম্পদ পাওয়া গেছে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জিম্মায় রাখা হয়েছে। আদালত পরবর্তীতে যে ধরনের নির্দেশ দিবেন সেভাবে কাজ করব। এছাড়া পরবর্তীতে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা হবে এসব সম্পদ এস কে সুরের বৈধ আয়ের অন্তর্ভুক্ত কি না।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমজাদ হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন, “আদলতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রক্রিয়া মেনে লকারে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের জিম্মায় রয়েছে। আদলতের নির্দেশনা মেনে সরকারের কোষাগারে অস্থায়ীভাবে এসব সম্পদ জমা দেওয়া হবে। অথবা আদালত যে নির্দেশনা দিবে তা পালন করা হবে।”

অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর এস কে সুর, তার স্ত্রী সুপর্না সুর চৌধুরী এবং মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

গত ১৪ জানুয়ারি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হোসাইনের নেতৃত্বে একটি দল এস কে সুরকে গ্রেপ্তার করে। সেদিনই তাকে আদালতে হাজির করা হয়; দুদকের আবেদনে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডিতে এস কে সুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা জব্দের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে তার ভল্ট থাকার তথ্য পায় দুদক। পরে সংস্থাটি জানতে পারে, সেটি ভল্ট নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যবান সামগ্রী রাখার লকার (সেফ ডিপোজিট)।

এরপর দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। গত ২১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা থেকে দুদককে ফিরতি চিঠি দিয়ে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর স্থগিত করার তথ্য জানানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, এস কে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকার সময় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) সহযোগিতা দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন।

এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান। আলোচিত পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এস কে সুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের মার্চে তাকে দুদকে তলব করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত