ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে “দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ” শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী, অপতৎপরতাকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনতে লক্ষ্যে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে।”
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই- আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী, নরহত্যায় জড়িত বিশেষ হেলমেট বাহিনী, ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসর, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী, ষড়যন্ত্রকারী, দুষ্কৃতিকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুদকের মামলায় আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
“সরকারের পুলিশ বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এ সকল অপরাধীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
আসিফ নজরুল বলেন, “স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছি। তারা আইনশৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা, অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রের এমন কোনও কাঠামো নেই যেটা ধ্বংস করেনি।
“এখন আদালত, প্রসিকিউশন, প্রশাসন ও পুলিশ-রাষ্ট্রের এ চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে জনগণ ন্যায়বিচার পাবে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।”
পুলিশ ও আদালত ফাংশনাল হলে মবতন্ত্র কমে যাবে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “মানুষ দেখতে চায় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে তথা রাষ্ট্রের প্রকৃত অস্তিত্ব রয়েছে।”
এ সময় তিনি বিচারকদের হুটহাট করে জামিন না দেওয়া এবং জামিনের যোগ্য ব্যক্তিদের বঞ্চিত না করতে আহ্বান জানান।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শতশত গুম ও হাজার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের কাঠামোকে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়।
“জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষকে মুক্তি দেওয়া তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করেছে। সেজন্য পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ নানা সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।”
কর্মশালায় ঢাকা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির সব ম্যাজিস্ট্রেট, পাবলিক প্রসিকিউটর, ঢাকা ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, ঢাকা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সব জোনাল উপপুলিশ কমিশনার ও সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অংশ নেন।