ব্যাংক খাতের ব্যর্থতার জন্য একক কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে দায়ী করতে চান না বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি মনে করেন, এ খাতকে তার সঠিক অবস্থানে নিয়ে যেতে সবাই ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করতে পারত। সেখানে কোনও ব্যত্যয় ঘটেছে কি না- তা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন।
রবিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকার মিরপুরে বিআইবিএম ক্যাম্পাসে এ অনুষ্ঠান হয়।
গভর্নর বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাত অনেক দূর এগিয়েছে কোনও সন্দেহ নেই। অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে এটাও বলতে হবে, এই খাত যত দূর এগুতে পারত, বা গোটা আর্থিক খাত যত দূর এগুতে পারত সেটা আমরা পারিনি। আমাদের অনেক অর্জন সত্ত্বেও অনেক ব্যর্থতা আছে।
“এর মূলে কোনও একক গোষ্ঠী বা একক ব্যক্তি নয়। এর মূলে আমরা সবাই। আমরা হয়তো ভিন্নভাবে কাজ করতে পারতাম। সবাই হয়তো আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারতাম। হয়তো ব্যত্যয় ঘটেছে, হয়তো ঘটেনি। সেই আত্মবিশ্লেষণ আমাদের করতে হবে।”
ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ব্যাংক খাতে যত প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে যারা পরিচালনা করছেন, তাদের গুণগত মান, চারিত্রিক বৈশিষ্ট, নৈতিকতা এগুলোর গুরুত্ব আছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের (এসএমই) মতো কিছু অপ্রচলিত খাত এবং জলবায়ু অর্থায়ন ও সবুজ অর্থায়নের মতো নতুন খাতে অর্থায়নে ব্যাংকগুলো তেমন আগ্রহী নয় জানিয়ে গভর্নর বলেন, “অনেক খাতের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা বিতরণ হচ্ছে না। যারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তারা এসব খাত নিয়ে খুব একটা উৎসাহী নন বা ঝুঁকি নিতে রাজি নন। এখানে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।”
এসময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, অপ্রচলিত ও নতুন খাতে অর্থায়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জোরাল ভূমিকা রাখবে।
বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মনসুর জলবায়ু অর্থায়ন, সবুজ অর্থায়ন, আর্থিক খাতের উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মতো ব্যাংকিং খাতের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করতে বিআইবিএমের প্রতি আহ্বান জানান।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিআইবিএম।
ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, বিআইবিএম এ খাতে মানবসম্পদ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
এসময় তিনি বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাম-খ্যাতি ছড়িয়ে দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে বিআইবিএমের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।
বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাসরুর আরেফিন, আয়োজক কমিটির সভাপতি ড. শাহ মো. আহসান হাবিব এবং সদস্য সচিব ড. মো. তাজুল ইসলাম।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাসরুর আরেফিন বলেন, “বিআইবিএম থেকে গ্রাজুয়েশন করা কর্মীরা এখন ব্যাংকের বড় বড় পদে বসছেন। আমাদের নিজেদের ব্যাংকেও প্রায় ১৯ জনের মতো আছেন। এটা থেকে বোঝা যায় দক্ষ ব্যাংকার তৈরি করতে বিআইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব কতখানি।”