গ্র্যামি বিজয়ী গসপেল ধারার কণ্ঠশিল্পী সিসি হিউস্টন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এবং হলিউড অভিনেত্রী হুইটনি হিউস্টনের মা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর সময় পরিবারের সদস্যরা তার কাছেই অবস্থান করছিল। দীর্ঘদিন ধরে আলঝেইমার্স রোগে ভুগছিলেন সিসি। নিউ জার্সির নিজ বাড়িতে রেখেই চলছিল চিকিৎসা।
গণমাধ্যমে তার পুত্রবধু বলেন, “আমাদের হৃদয় দুঃখ এবং বেদনায় ভারাক্রান্ত। আমরা আমাদের মা কে হারিয়েছি।”
তিনি বলেন, “সিসি আমাদের জীবনে এক শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিরাজ করতেন। তিনি ছিলেন পরিবার এবং সমাজের মানুষের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল। তার সাত দশকেরও দীর্ঘ সঙ্গীত জীবন আমাদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “জনপ্রিয় ধারার সঙ্গীত এবং সংস্কৃতিতে তার অবদান অতুলনীয়।”
হিউস্টন পড়ালেখা করেছিলেন নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে। পরে তিনি নিউ হোপ ব্যাপ্টিস্ট চার্চে যোগ দেন এবং একসময় চার্চের সঙ্গীত দলের নেতৃত্বও দেন।
সাল ১৯৩৮। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ভাই-বোনদের গড়ে তোলা সঙ্গীত দল ‘দ্য ড্রিংকার্ড ফোর’-এ যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সিসি হিউস্টনের সঙ্গীত জীবন। গানের দলটি গসপেল ধারার সঙ্গীত পরিবেশন করতো। পরে এই দলের নাম হয়েছিল ‘দ্য ড্রিংকার্ড সিংগা’।
১৯৬৩ সালে ‘দ্য ড্রিংকার্ড সিস্টার্স’ এর সদস্যদের সাথে তিনি গড়ে তোলের আরেকটি গানের দল ‘দ্য সুইট ইন্সপিরেশন’। পুরো ৬০ দশক জুড়ে এই দলটি অনেক বিখ্যাত শিল্পীর গানের ব্যাকগ্রাউন্ড ভোকাল হিসেবে কাজ করেন।
এই শিল্পীদের মধ্যে আছেন অ্যারিথা ফ্র্যাঙ্কলিন, ডাস্টি স্প্রিংফিল্ড, এথার ফিলিপস, লু রলস, ওটিস রেডিং, সলোমন বার্ক, রক ব্যান্ড দ্য ড্রিফটারস এবং উইলসন পিকেট।
সিসি হিউস্টনের প্রথম সলো এলপি ‘প্রেজেন্টিং সিসি হিউস্টন’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে।
দুবারের গ্র্যামি বিজয়ী হিউস্টনের এযাবৎ ১০টি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে চারটি সংকলন অ্যালবাম এবং পাঁচটি কোলাবোরেটিভ রেকর্ডিংস।
একজন ব্যাকআপ ভোকাল হিসেবে তিনি কাজ করেছেন নানা বৈচিত্রের শিল্পীর সঙ্গে। এদের মধ্যে যেমন কিংবদন্তী শিল্পী এলভিস প্রিসলি আছেন, তেমনি আছেন এ সময়ের জনপ্রিয় শিল্পী বিয়ন্সে। এমনকি কিংবদন্তী ব্লুজ গিটারিস্ট এবং গায়ক জিমি হেন্ড্রিক্সের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় কী দারুণ বৈচিত্রময় তার অভিজ্ঞতা। দীর্ঘ সঙ্গীত ক্যারিয়ারে তিনি বিচরণ করেছেন সঙ্গীতের নানা জনরায়।
তার কন্যা এবং জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী হুইটনি হিউস্টন মারা যান ২০১২ সালে। হুটনি স্মরণে ২০১৩ সালে ‘রিমেম্বার হুইটনি: মাই স্টোরি অব লাভ, লস, অ্যান্ড দ্য নাইট দ্য মিউজিক স্টপড’ শিরোনামে তিনি লেখেন এক স্মৃতিকথা। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে হুইটনি হিউস্টন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। সিসি হিউস্টনের কাছে হুইটনি ছিলেন ‘একটা চমৎকার বাচ্চা’।
সিসি হিউস্টনের মৃত্যুতে শোকাতুর পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে এক বিবৃতি।
এতে বলা হয়েছে “আমরা ধন্য এবং কৃতজ্ঞ যে ঈশ্বর তাকে এত বছর আমাদের মাঝে কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জীবনের বহু মূল্যবান শিক্ষা আমরা তার কাছ থেকে পেয়েছি। এই জন্য আমরা কৃতজ্ঞ”
তথ্যসূত্র: সিএনএন