নতুন বছরে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে গাজীপুরের কনসিস্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড। কারখানাটি প্লাটিনাম কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট লিড সার্টিফায়েড গ্রিন ফ্যাক্টরি বা লিড সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৩৩।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) এই সনদ দিয়ে থাকে। কনসিস্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮৪ নম্বর পেয়ে প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
দেশের ২৩৩টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে প্লাটিনাম সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা ৯৩, গোল্ড সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা ১২৬, সিলভার সনদ পাওয়া কারখানা ১০ ও সার্টিফায়েড সনদ পাওয়া কারখানা ৪টি।
বিদায়ী ২০২৪ সালে মোট ২৬টি কারখানা পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৩ সালে মোট সনদ পেয়েছিল ২৪টি কারখানা। ২০২২ সালে পেয়েছিল ৩০টি কারখানা।
ইউএসজিবিসি থেকে পরিবেশবান্ধব সনদ পাওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হয়। মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনও কারখানা ৮০ এর বেশি পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ পেলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ নম্বর পেলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেওয়া হয়।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও।
এরপর দেশে একের পর এক পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে।
বিশেষ করে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় তিনটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি বছরেই বাড়তে থাকে সবুজ কারখানার সংখ্যা।
আরও ৫০০টি পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সনদ পেতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ করছে বলেও জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল-ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দেয়। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’।
সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।
ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। এর মধ্যে আছে—এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এজন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়।
স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ ও ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব। তার মানে দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে।