Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘দ্বারপ্রান্তে’ হামাস-ইসরায়েল   

ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা।
ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা।
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সপ্তাহ আগে হুমকি দিয়েছিলেন, ২০ জানুয়ারি তার শপথের আগেই হামাস ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় জিম্মি করে রাখা ইসরায়েলিদের ছেড়ে না দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে।

তিনি এও বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি না করলে কারও জন্য তা ভালো হবে না।

ট্রাম্পের এই হুমকিতে ভয় পেয়েই হোক, না পেয়েই হোক, যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে অবশেষে রাজি হয়েছে হামাস। তাদের হাতে আটক ইসরায়েলিদের এখন তারা ধাপে ধাপে ছেড়ে দিতে চায়।

এর আগে যতবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রত্যেকবার হামাসের শর্ত ছিল, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করতে হবে আগে।

সেই শর্ত থেকেও এবার সরে এসেছে সশস্ত্র সংগঠনটি।

এদিকে ইসরায়েলও হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়ে বলেছে, গাজার জনবহুল এলাকা থেকে তারা তাদের সেনা সরিয়ে নেবে।

হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে জানিয়ে ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর সোমবার প্রথমবারের মতো কাতারে একই ভবনে বসে পরোক্ষভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা।

কাতারে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনার সঙ্গে ওই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ফিলিস্তিনের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে একই সুরে কথা বলেছেন ইসরায়েলের এক কর্মকর্তাও।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানান, কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন বা আরও কিছু সময় পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবার হতে যাচ্ছে।

তেহরানে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়েকে হত্যা করে ইসরায়েল।

গত রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন বাইডেন। পরদিন কথা বলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যস্থতা করছেন কাতারের এই আমির।

ফিলিস্তিনের ওই কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, সোমবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে ছয় ঘণ্টা ধরে মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আলোচনা করেন হামাস ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।

ওই আলোচনায় হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দিন তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। জিম্মি তিন জনকে পাওয়ার পর গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয় ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চুক্তির সাত দিন পর আরও চার জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। আর গাজার দক্ষিণে অবস্থান করা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উপত্যকার উত্তরে ফেরার অনুমতি দেবে ইসরায়েল। তবে তাদের উপকূলীয় পথ ধরে পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে।

এছাড়া এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়েও রাজি হয়েছে ইসরায়েল। এই বন্দিদের মধ্যে আছে প্রায় ১৯০ জন ফিলিস্তিনি, যারা ১৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের কারাগারে আছেন।

পরিবর্তে আরও ৩৪ ইসরায়েলি জিম্মিকে ছাড়বে হামাস।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে এসব শর্ত মানতে রাজি হয়েছে বিবদমান পক্ষ।

চুক্তির ১৬তম দিনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ নিয়ে ফের আলোচনায় বসবে হামাস ও ইসরায়েল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলা এবং সেদিনই ইসরায়েলের পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ।

এই যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ। অনাহারে মারা গেছে আরও অনেকে। বাড়িঘর হারিয়েছে ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি।

অন্যদিকে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের ৯৮২ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৯৮৭ জন সেনা নিহত হয়েছে।

যুদ্ধ শুরুর পর অনাহারে অনেক ফিলিস্তিনিকে দিন কাটাতে হচ্ছে।

এই যুদ্ধে গত জুলাইয়ে তেহরানে প্রাণ হারান হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে। তার মৃত্যুর পর হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ইয়াহিয়া সিনওয়ারকেও গত অক্টোবরে হত্যা করে ইসরায়েল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার মাস্টারমাইন্ড তাকেই ধরা হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুই শীর্ষ নেতাকে হারিয়ে ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।                  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত