“হোগলা পাতা কিন্তু আমাদের দেশে গরুকেও খাওয়ানো যায় না। এরকম একটি জিনিস দিয়ে আমরা ডলার করে নিয়ে আসছি,” বলছিলেন বিডি ক্রিয়েশনের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মোস্তফা আহমেদ পিয়াস।
বাংলাদেশে হস্তশিল্প রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিডি ক্রিয়েশন রয়েছে সবচেয়ে এগিয়ে। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর প্রায় দেড় কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
সেই প্রতিষ্ঠানটির সিওও পিয়াস দেশের হস্তশিল্পের সম্ভাবনার দিক তুলে ধরার পাশাপাশি আক্ষেপও প্রকাশ করলেন।
“দেখেন, আমরা কাঁচামাল হিসেবে কী ব্যবহার করি। একদম আমাদের গ্রামীণ পর্যায়ে মাঠে-ঘাঠে যা হয়। ধরেন, হোগলা পাতা, আমরা কচুরিপানা দিয়েও কাজ করছি। ফেলনা জিনিসগুলো দিয়ে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছি। যেখানে প্রণোদনা বৃদ্ধি করা উচিৎ, সেখানে প্রণোদনা অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হল।”
হস্তশিল্পকে যখন বর্ষপণ্য ঘোষণা করা হলো, তখন এই ক্ষুদ্র শিল্পে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটলেও নিরাশার শঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মাটি, হোগলাপাতা, কচুরিপানা, পাট, বাঁশ ও বেতের মতো কাঁচামাল দিয়ে হাতে বানানো পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে। এগুলোসহ নকশি কাঁথা, শীতলপাটি, শতরঞ্জির মতো বিভিন্ন হস্তশিল্প পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের ৫০টি দেশে।
২০২৪ সালের জন্য হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করেছে সরকার। গত ২১ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, “পাট, চামড়াজাত পণ্যকে বিভিন্ন সময় বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এবার আমি হস্তশিল্পকে ২০২৪ সালের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করছি।
“কারণ, এটি নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করে তুলছে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। হস্তশিল্প দারিদ্র্য বিমোচনেও অবদান রাখছে।”
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফট) সভাপতি এস ইউ হায়দারসহ কয়েকজনের সঙ্গে।
তারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সাল থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যক্তি পর্যায়ে হস্তশিল্প রপ্তানি শুরু হয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম নিটল ক্রাফট ঝুড়ি রপ্তানি শুরু করে। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
গত বছর বৈশ্বিক হস্তশিল্পের বাজার ছিল ৭২৮ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যেখানে ২০২৮ সালে হস্তশিল্পের বৈশ্বিক বাজার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১ হাজার ৩০০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে।
এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথ উদ্যোগ ও সহায়তার অভাবে খাতটি শক্ত ভিত্তির ওপরই দাঁড়াতে পারেনি। ফলে রপ্তানি থেকে আসছে না কাঙিক্ষত বিদেশি মুদ্রা।
সকাল সন্ধ্যার অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক কথায় বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে গোটা হস্তশিল্প খাত। অনেকটা অগোছালোভাবেই সারাদেশে হস্তশিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা এলেও তাদের অনেকে ভুগছেন পুঁজি সঙ্কটে, সহজ শর্তে ঋণও পাচ্ছেন না। রপ্তানির অনুমতি পাওয়া নিয়ে হয়রান হওয়ার ঘটনাও আছে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে আর্থিক প্রণোদনা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, বিষয়টিকে হস্তশিল্প খাতের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তারা আরও বলছেন, বাংলাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে হস্তশিল্প প্রদর্শনের ব্যবস্থাই হয়নি এত দিন। প্রধানমন্ত্রী ১০ বছর আগে জমি বরাদ্দ দিলেও পণ্যের নকশা, কারুশিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য হয়নি কোনও প্রতিষ্ঠান। বাঁশ-বেতের চাষ কমে যাওয়ায় কাঁচামাল সঙ্কটও বাড়ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।
বিশ্ববাজারে এ শিল্পের শীর্ষস্থানীয় চার দেশ- ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও চীনের মতো সরকারি সহায়তায় কারুপল্লী প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়েছেন তারা।
রপ্তানি কম হলেও ‘তাৎপর্য অনেক’
ঢাকার কারওয়ান বাজারে বাংলাক্রাফট কার্যালয়ে বসে হস্তশিল্পের খুঁটিনাটি, সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরেন সমিতির সভাপতি হায়দার।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের হস্তশিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে দেশ-বিদেশে। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি মুদ্রা আসছে না। তারপরও গত পাঁচ বছরে এসব পণ্যের বিক্রি বেড়েছে দেশ-বিদেশে।
বাংলাক্রাফট সভাপতি বলেন, “২০২৩ সালে বৈশ্বিক হস্তশিল্পের বাজার ছিল ৭২৮ বিলিয়ন ডলারের। যেখানে আমাদের রপ্তানি হয় মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
“এটা বৈশ্বিক হস্তশিল্প বাজারের তুলনায় খুবই কম। তৈরি পোশাক শিল্পে থেকে হস্তশিল্প খুবই আলাদা। এর কারণ আমরা সম্পূর্ণ দেশি কাঁচামাল ব্যবহার করি। ফলে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করলেও এর তাৎপর্য অনেক বেশি।”
“২০২৮ সালে হস্তশিল্পের বৈশ্বিক বাজার হবে ১ হাজার ৩০০ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দূর না হলে আমাদের রপ্তানি বাড়ার সুযোগ খুবই কম,” বলেন তিনি।
বাংলাক্রাফট এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে আগামী ২৫-২৯ এপ্রিল পূর্বাঞ্চলে আন্তর্জাতিক হস্তশিল্প বাণিজ্য মেলা হতে যাচ্ছে।
রপ্তানি বাড়াতে এ মেলা ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করছেন বাংলাক্রাফট সভাপতি হায়দার।
তিনি বলেন, এই মেলায় কারণে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ হবে। এই শিল্পের প্রসারে ভারত, চীন ‘সেমি অটোমেটেড’ মেশিন ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারাও এ ধরনের আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে লাভবান হতে পারবেন।
হায়দার মনে করেন, হস্তশিল্পের রপ্তানি বাড়াতে হলে এ ধরনের আন্তর্জাতিক মেলার পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতেই হবে। গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) না হলে মান বাড়বে না, বাজারও বাড়বে না।
দীর্ঘদিন ধরে ডিজাইন সেন্টার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন হায়দার। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত মার্চে রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপনও করেন তিনি।
“প্রায় ১০ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেই বরাদ্দ মেলেনি। হয়নি প্রতিষ্ঠানটি। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য মার্চে আবারও আশ্বাস দিয়েছেন। দেখা যাক এবার কী হয়?”
চাই প্রণোদনা, সহজ শর্তে ঋণ
বাংলাক্র্যাফট সভাপতি জানান, হস্তশিল্প ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ শতাংশ প্রণোদনা ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এরপর তা কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা হয়েছে। এতে হস্তশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে।
এ অবস্থায় রপ্তানি ভর্তুকির ওপর উৎসে কর কর্তনের হার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা হলে হস্তশিল্প রপ্তানিকারকদের এই ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হবে। তাই উৎসে কর হার ৩ শতাংশ বহাল চান রপ্তানিকারকরা।
হায়দার বলেন, “আমরা হিসাব করে দেখেছি, বর্তমানে হস্তশিল্প খাতের রপ্তানিতে বাড়তি ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিলে সরকারের বাড়তি ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে এই সহায়তার ফলে হস্তশিল্প পণ্যের রপ্তানি ৩ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।”
রপ্তানিকারকরা বলছেন, বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ১৩-১৪ শতাংশ সুদ দিতে হয়। এটা হস্তশিল্প ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই কঠিন। অনেকেই মনোবল হারিয়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের তথ্য বলছে, ৮২.২ শতাংশ উদ্যোক্তা পুঁজির অভাবকে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছেন।
বাংলাক্রাফটের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম ম্যানেজার) রফিকুল ইসলাম মিথিল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, হস্তশিল্প নিয়ে যারা কাজ করে তারা সবাই ছোট উদ্যোক্তা। প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ এ কাজে জড়িত। ফলে, হস্তশিল্প রপ্তানির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি অর্জন সবার জন্য সহজ না। ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের হার এক অংকের মধ্যে আনলে আরও মানুষ আগ্রহী হবে।
“এছাড়া যত কাগজপত্র লাগে নানান কাজে তা উদ্যোক্তাদের মাথাব্যথা হয়ে যায়। এসব সহজ করা উচিৎ। ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করতে সবাইকে আগ্রহী হতে হবে।”
বিডি ক্রিয়েশনের সিওও পিয়াস সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ব্যাংক লোনে সুধ ৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং প্রণোদনা ১০ শতাংশ কমে যাওয়া এ শিল্পের বিকাশের গতি কমিয়ে দিয়েছে। এ দুটি কাজ না হলে হয়ত গত ৩-৪ বছরে আরও ১০ হাজার গ্রামীণ নারী আমাদের এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হত।”
প্রায় নয় বছর ধরে হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করছে ক্রাফটস ভিলেজ। নতুন উদ্যোক্তারা পণ্য তৈরি ও রপ্তানিতে সাধারণত কোন কোন সমস্যায় পড়েন- তা নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির মালিক তরুণ পালের সঙ্গে।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, যারা পুরনো রপ্তানিকারক ব্যাংকে তাদের হয়রানি কম হলেও নতুন উদ্যোক্তাদের প্রচুর হয়রানির শিকার হতে হয়। ব্যাংক থেকে রপ্তানি অনুমতি আনতেই নাজেহাল অবস্থা হয়।
যে কোনও ক্রেতা কাজের অর্ডার দিলে প্রথমে ২০-৩০ শতাংশ অগ্রিম টাকা দেন। বাকিটা পণ্য হাতে পেলে দেন। কিন্তু ব্যাংকে রপ্তানির অনুমতি আনতে গেলে নতুন উদ্যোক্তাদের পুরো টাকা আগে জমা দিতে বলা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যোক্তারা কোথা থেকে এই টাকা আনবে সে প্রশ্নও রাখেন ক্রাফটস ভিলেজের মালিক তরুণ পাল।
এ প্রসঙ্গে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জীবনে প্রথম রপ্তানি করার সময় ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট দেখিয়ে রপ্তানি অনুমতি নিতে হয়েছিল।
“আমি কোনোভাবে ম্যানেজ করে কাজটা শুরু করতে পেরেছিলাম। কিন্তু সবাই তো তা পারবে না। এরকম পরিস্থিতিতে অনেক উদ্যোক্তাই মনোবল ভেঙে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়।”
কাঁচামালের অভাব
বিবিএসের ২০২৩ সালের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে হস্তশিল্পের মোট প্রতিষ্ঠান ছিল ৭৩,৫৪২টি। এর মধ্যে ৪৩.৮ শতাংশই (৩২,২২৪টি) বাঁশ ও বেতের প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মৃৎপাত্র ও টেপা পুতুল তৈরির প্রতিষ্ঠান। এগুলো আছে ১৪,১০৮টি।
বিবিএস জরিপ বলছে, হস্তশিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থান ব্যয় ৯৯৬ কোটি টাকা, এর মধ্যে কাঁচামালেই লাগে ৭০৭ কোটি টাকা।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, হস্তশিল্পের জন্য যে কাঁচামাল প্রয়োজন তা সব সময় পাওয়া যায় না। বিবিএসের জরিপেও দেখা গেছে, প্রায় ২৫ শতাংশ উদ্যোক্তার কাছেই উপকরণ বা কাঁচামাল সংগ্রহই মূল সঙ্কট।
এ প্রসঙ্গে বাংলাক্রাফট সভাপতি হায়দার বলেন, “আমরা বাঁশ কাটছি জিনিস বানাচ্ছি। কিন্তু বাঁশ যে আবার লাগাতে হবে, এর কোনও ব্যবস্থা নেই। আমাদের এখানে কাঁচামাল তৈরির কোনও বাণিজ্যিক রূপ নেই। ফলে, প্রায়ই কাঁচামাল সঙ্কটে পড়ি আমরা।”
প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে অনেক পিছিয়ে
বিশ্বে হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানিতে সবার উপরে রয়েছে ভারত। শুধু ২০২৩ সালেই প্রায় ৬৩ লাখ শিপমেন্ট করেছে প্রতিবেশী দেশটি।
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া, তৃতীয় স্থানে ভিয়েতনাম এবং চতুর্থ স্থানে চীন। তাদের শিপমেন্ট যথাক্রমে দেড় লাখ, ৫৬ হাজার এবং ৫১ হাজার। বাংলাদেশের শিপমেন্ট এক হাজারের কিছু বেশি।
বাংলাক্রাফট সভাপতি এস ইউ হায়দার বলেন, “আমাদের যাদের সঙ্গে বাজারে লড়াই করতে হয়, তারা অনেক এগিয়ে। আমাদের কিছুই নেই। শুধু এসব জিনিসের চাহিদা অনেক বেশি। তাই আমরা কিছু ব্যবসা করতে পারছি।”
বাংলাক্রাফটের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, স্পেন, জাপানসহ বিশ্বের ৫০ দেশে যায়।
কোভিড মহামারীর কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোর চীন বিমুখতা এবং প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ায় বাংলাদেশি হস্তশিল্পের জন্য সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমানে রপ্তানির ৬০ শতাংশ হচ্ছে ইউরোপে।
রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে হাতে বোনা কাপড় ও কার্পেট, ঘর সাজানোর বিভিন্ন পণ্য, টেরাকোটা ও মাটির পাত্র। আরও আছে পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য, হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকারের ঝুড়ি। বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের বাস্কেট, ফ্লোর কাভারিংয়ের ম্যাট বা কার্পেট, নকশি কাঁথা ও নকশি বেডশিট।
তরুণ পাল মনে করেন, হস্তশিল্পের প্রসারে শুধু দেশে মেলা করলে চলবে না, বিদেশেও করতে হবে।
“গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে সরকারি আয়োজনে মেলা করতে হবে। সেখানে সেই দেশের ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। যাতে তারা আমাদের পণ্য দেখতে পারে এবং আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।”
রপ্তানি নিয়ে ইপিবি-বাংলাক্রাফটের তথ্যে গরমিল
বাংলাদেশের হস্তশিল্লের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাক্রাফট ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। হস্তশিল্প প্রস্ততকারক, রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী, উৎপাদক, ডিজাইনার, প্রবর্তক ও সরবরাহকারীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই সমিতি।
বাংলাক্রাফটের হিসাবে গত বছর ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে এই অঙ্ক মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলার।
এ প্রসঙ্গে বাংলাক্রাফট সভাপতি এস ইউ হায়দার বলেন, “ইপিবি যে ডেটা দেয়, তা সামগ্রিক চিত্র না। হস্তশিল্পের নানা রকমের পণ্য হয়। কিন্তু দুই-তিনটি বাদে বাকিগুলোর নির্দিষ্ট রপ্তানি কোড নেই। যেমন- পাট বা চামড়া দিয়ে তৈরি হস্তশিল্প ইপিবির রিপোর্টে হস্তশিল্পের ভিতরে পড়ে না। এটা চলে যায় পাট বা লেদার বিভাগে। অনেকেই আছেন যারা আমাদের সদস্য না, তারাও রপ্তানি করছেন। এ সমস্যা কাটাতে আমরা ইপিবির সঙ্গে বেশ কয়েকদফা কথা বলেছি।”