ঠাকুরগাঁওয়ে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি এর দৃশ্যধারণকে ঘিরে ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটেনি বরং অতিরিক্ত দর্শকের চাপে ‘কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়’ বলে দাবি করেছেন অনুষ্ঠানটির নির্মাতা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত।
“আসলে আমরা ভিউবাজদের ভিউ বিড়ম্বনার স্বীকার [শিকার] হয়েছি। কোন অপপ্রচারই ইত্যাদির সঙ্গে দর্শকদের এই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। তার প্রমাণ ঠাকুরগাঁওয়ের ইত্যাদি দেখার জন্য দর্শকদের এই বাঁধভাঙা স্রোত। যা আমাদের অভিভূত করেছে,” নিজের ফেইসবুকে পেইজে লিখেছেন তিনি।
দেশের প্রতিটি জেলার ঐতিহাসিক স্থানে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈল উপজেলার জমিদার বাড়িতে সেট ফেলা হয়েছিল শুটিংয়ের।
যেহেতু দর্শকদের সরাসরি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় তাই এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না।
বৃহস্পতিবার রাতে ইত্যাদি এর দৃশ্যধারণ অনুষ্ঠানে মারপিট ও ভাঙচুরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঠাকুরগাঁও জেলাজুড়ে প্রায় দুই হাজার প্রবেশ পাসের ব্যবস্থা করেছিল ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ। তবে অনুষ্ঠানে প্রায় লাখখানেক মানুষের সমাগম হয়। এক পর্যায়ে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
তবে এমন পরিস্থিতির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শনার্থীরা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন।
যারা এ ঘটনার সঙ্গে রাজনীতিকে জড়াতে চাইছেন, তাদের উদ্দেশে হানিফ সংকেত বলেছেন, “আমি যেমন কখনোই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হইনি, ইত্যাদিও তেমনি সবসময় থেকেছে রাজনীতিমুক্ত।”
“ইত্যাদির ঠাকুরগাঁওয়ের ধারণ অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কিছু মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সংবাদ ও মন্তব্য পড়ে কিছুটা অবাকই হয়েছি। ভেবেছিলাম এসবের কোনো জবাব দেব না। কিন্তু তাদের মন্তব্য ও সংবাদ দেখে মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানস্থলে আমি নই, বোধ হয় তারাই উপস্থিত ছিলেন।
“তাদের মন্তব্য পড়ে মনে হয় অনুষ্ঠানস্থলে হামলা, মারামারি, ভাঙচুর হয়েছে, যে কারণে আমি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হই। অথচ ঠাকুরগাঁওবাসী এবং উপস্থিত দর্শকেরাই জানেন, এ ধরনের কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি,” হানিফ সংকেত তার ফেইসবুক পোস্টে লেখেন।
জনপ্রিয় এই উপস্থাপকের দাবি, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে কিছু মানুষ অপপ্রচার চালিয়েছে। “কিছু ‘মতলববাজ’ ব্যক্তি নিরাপদ দূরত্বে থেকে নানান পোস্ট দিয়ে নিজের মতলব হাসিলের চেষ্টাও করছে।“
হানিফ সংকেত বলেন, “আমরা ৬ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করি এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আমরা জানতে পারি অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষা করছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য। অনুষ্ঠানে দর্শক বাছাই, নৃত্য ও গান ধারণ করার পরই হঠাৎ করে বাঁশের ঘেরা সরিয়ে কয়েক হাজার লোক আমন্ত্রণপত্র না পেয়েও তাদের প্রিয় ইত্যাদি দেখার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে।
“ফলে অনুষ্ঠানস্থলে সাময়িক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করি এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ধারণ শুরু করি। যদিও ইতোমধ্যে স্থগিতের কথা শুনে অনেক দর্শক চলে যান। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করি।”
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ ‘হামলা, ভাংচুর বা মারামারি নয়’ দাবি করে হানিফ সংকেত বলেন, “ইত্যাদির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা, আর এই ভালোবাসার কারণেই তারা ইত্যাদির ধারণ দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানাভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। তাই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়াবার স্থান করছিলেন। আর সে কারণে এই চেয়ার ছোড়াছুড়ি।
“এর ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কেউ কেউ মিথ্যে তথ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচারের চেষ্টা করছেন।”
জনপ্রিয় এই উপস্থাপক বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দর্শক নিয়ে ইত্যাদি শেরপুর পর্ব এবং ২৯ নভেম্বর কয়েক হাজার দর্শক নিয়ে বাগেরহাট পর্ব প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি অনুষ্ঠান ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে’ ধারণ করা হয়।
“দর্শকদের এই ভালোবাসায় ধন্য হয়েই ইত্যাদি এ বছর পদার্পণ করেছে তার ৩৭তম বছরে,” হানিফ সংকেত বলেন।