Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হারিছ চৌধুরীকে দাফন

harish chowdhury
[publishpress_authors_box]

মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকার কমলাপুরে দাফন করা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ তুলে সিলেটের কানাইঘাটে গ্রামের বাড়িতে পুনঃদাফন করা হয়েছে।

রবিবার বিকালে কানাইঘাটে হারিছ চৌধুরীর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানা প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পুনঃদাফন করা হয়।

সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দানে দেহাবশেষ সামনে রেখে দোয়া মাহফিল ও তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে থাকা হারিছ চৌধুরী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি (ওয়ান ইলেভেন) জরুরি অবস্থা জারির পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনকালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার এই আসামিকে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হন্যে হয়ে খুঁজছিল; তখন খবর আসে ঢাকায় থেকেই ২০২১ সালে মারা যান এই বিএনপি নেতা, তাকে কবরও দেওয়া হয় সাভারে।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর বাবার পরিচয় শনাক্তে সামিরা তানজিম হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে আদালত লাশ তুলে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেয়।

ওই আবেদনে সামিরা তার বাবা হারিছ চৌধুরীকে কমলাপুর জালালাবাদ এলাকায় অবস্থিত জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়েছে বলে জানান।

এরপর আদালতের নির্দেশে লাশ তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা যায় সামিরার ডিএনএর সঙ্গে সাভারের কবরের ওই লাশের ডিএনএ নমুনা মিলে। সেই প্রতিবেদন পেয়ে হাইকোর্ট হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী স্থানে বাবার লাশ দাফনের অনুমতি দেয়।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাজরিন সকালসন্ধ্যাকে জানান, “হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বীর  মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনঃদাফন করা হয়েছে। গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে তার মরদেহে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।”

রবিবার সকালে হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ সিলেট সার্কিট হাউস প্রাঙ্গনে আনা হয়। বেলা ২টার দিকে তা নিয়ে যাওয়া হয়  সিলেটের ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানে।

হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী জানান, বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কানাইঘাটে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে সাভারের লালাবাদ কমলাপুরের বিরুলিয়ার খতমেনাবিয়্যিয়ান মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পারিবারিকভাবে অতি গোপনে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জীবদ্দশায় বাবার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। মৃত্যুর পর আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার লাশের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার লাশ সিলেটের কানাইঘাটে দাফন করতে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়। তাই বাধ্য হয়ে পরিচয় গোপন রেখে সাভারে তাকে দাফন করতে হয়েছিল। পরে হাইকোর্টের আদেশে ডিএনএ পরীক্ষার পর সরকারের নির্দেশনা পেয়ে মরদেহ সিলেটে নিয়ে আসা হয়েছে।”

একজন সন্তান হিসেবে গর্বিত জানিয়ে সামিরা বলেন, “আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আইনি লড়াই করে নিজ পরিচয়ে আমার বাবার দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করতে পেরে আমি আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি।”

নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হারিছ যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিবের পদেও ছিলেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে হারিছ ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে হারলেও খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে করেন নিজের বিশেষ সহকারী। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর করেন রাজনৈতিক সচিব।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর লাপাত্তা হয়ে যান হারিছ। তার বাড়ি সিলেটে হলেও পরিবার থাকত যুক্তরাজ্যে। ফলে ধারণা করা হয়েছিল, তিনিও সেখানে চলে গেছেন। তবে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি কখনও।

২০২২ সালের ৬ মার্চ মানবজমিনের প্রতিবেদনে তার পরিবারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, হারিছ চৌধুরী ৬৮ বছর বয়সে আগের বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। পরদিন ঢাকার অদূরে সাভারে একটি মাদ্রাসায় মাহমুদুর রহমান নামে তাকে দাফন করা হয়।

হারিছ ১১ বছর ধরে মাহমুদুর নামে ঢাকার পান্থপথের একটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন বলেও দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

তাতে বলা হয়েছিল, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি (ওয়ান ইলেভেন) জরুরি অবস্থা জারির পর আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। এই ১৪ বছরের ১১ বছরই তিনি ছিলেন ঢাকার পান্থপথে। এসময় বেশভূষার পাশাপাশি নামও বদলে ফেলেন তিনি। মাহমুদুর রহমান নামে একটি পাসপোর্টও করিয়ে নেন। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এই পাসপোর্ট ইস্যু হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত