Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫

বই থেকে মানুষের চামড়ার বাঁধাই সরাল হার্ভার্ড

Harvard
[publishpress_authors_box]

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের লাইব্রেরিতে থাকা ১৯ শতকের একটি বই থেকে মানুষের চামড়ার বাঁধাই সরিয়ে ফেলেছে।

‘ডেস ডেসটিনিস দে লা’আমে’ (ডেসটিনিস অব দ্য সোল) নামের বইটি ১৯৩০ সাল থেকে হাউটন লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।

২০১৪ সালে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে জানান, বইটির বাঁধাইয়ের উপাদানটি আসলে মানুষের চামড়া।

কিন্তু বইটির উৎপত্তি ও পরবর্তী ইতিহাসের নৈতিক জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বইটি থেকে বাঁধাই সরিয়ে ফেলেছে।

ডেসটিনিস অব দ্য সোল বইটি উনিশ শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে আর্সেন হুসে নামের এক লেখকের লেখা। সেটি আত্মা ও মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে লেখা একটি রচনা।

আর্সেন হুসে বইটি তার ডাক্তার বন্ধু লুডোভিক বুল্যান্ডকে উপহার দিয়েছিলেন। বুল্যান্ড নাকি একজন অজ্ঞাত নারী রোগীর মৃতদেহের চামড়া দিয়ে বইটির বাঁধাই করেন। তবে ওই নারীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাঁধাই সরানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানায়, “হার্ভার্ড লাইব্রেরির সংগ্রহশালার কমিটির সঙ্গে পরামর্শ, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সম্পৃক্ততা ও বিচার বিশ্লেষণের পর হার্ভার্ড লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বইটির উৎপত্তি ও পরবর্তী ইতিহাসের নৈতিক জটিলতার কারণে, এর বাঁধাইয়ে ব্যবহৃত মানব চামড়া আর হার্ভার্ড লাইব্রেরির সংগ্রহে থাকা উচিত নয়।”

বিশ্ববিদ্যালয় আরও জানায়, যে নারীর চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে, তার মর্যাদা পুনরুদ্ধারের উপায় খুঁজছে তারা। একইসঙ্গে ওই নারীর জীবন সম্পর্কে জানতে গবেষণা করার কথাও বিবেচনাধীন রয়েছে।

ডেসটিনিস অব দ্য সোল বইটি ১৯৩৪ সালে হার্ভার্ডে পৌঁছায়। বইটির ভেতরে ডাক্তার বুল্যান্ডের লেখা একটি নোট পাওয়া যায়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, “বইটির সৌন্দর্য বজায় রাখতে প্রচ্ছদে অলংকরণের জন্য কোনও স্ট্যাম্প মারা হয়নি।

“আমি একজন নারীর পিঠ থেকে নেওয়া চামড়ার এই অংশটি সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম। মানব আত্মা সম্পর্কে লেখা একটি বইয়ের বাঁধাই মানুষের চামড়া দিয়েই করা উচিত।”

হার্ভার্ড মাস স্পেকট্রোমেট্রি অ্যান্ড প্রোটিওমিক্স রিসোর্স ল্যাবরেটরির পরিচালক বিল লেন এক দশক আগে হাউটন লাইব্রেরি ব্লগকে বলেছিলেন, “এটি মানুষের চামড়া ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”

মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাইয়ের প্রথা, যা ‘অ্যানথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেগি’ নামে পরিচিত। ষোড়শ শতাব্দী থেকেই এর প্রচলন।

উনিশ শতকের অসংখ্য তথ্য বলছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের দেহ বিজ্ঞানের উন্নয়নে দান করা হতো। তাদের চামড়া পরে বই বানানোর জন্য কারিগরদের কাছে পাঠানো হতো।

২০১৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কিত বই সংরক্ষণকারী ওয়েলকাম লাইব্রেরির প্রধান ছিলেন সাইমন চ্যাপলিন। সে সময় বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বইয়ের বাঁধাইয়ে মানুষের চামড়ার ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “এমন বই খুব বেশি নেই। এটি মূলত তেমন কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই কৌতূহলবশতও মাঝে মাঝে করা হতো।

“উনিশ শতকে ডাক্তাররা, যাদের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করার সুযোগ ছিল, তারাই মূলত এই কাজটি করত বলে মনে হয়।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত