যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়েছে আদালত।
রায়ে বলা হয়েছে, পর্ন তারকাকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় কারাদণ্ড, অর্থদণ্ডসহ কোনও দণ্ডই ভোগ করতে হবে না ট্রাম্পকে। তবে তিনি এ মামলায় অভিযুক্তই থাকবেন। এই অবস্থাতেই ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।
শুক্রবার রায় ঘোষণার আগে ট্রাম্পের মামলাটিকে ‘সত্যিকার অর্থে বিশেষ মামলা’ অভিহিত করে নিউ ইয়র্কের বিচারক হুয়ান মারচেন বলেন, “এই প্রথম এই আদালত এমন উল্লেখযোগ্য পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিচারে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও তাকে কোনও শাস্তি পেতে হবে না কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টদের ফৌজদারি অপরাধ থেকে রক্ষা করার কথা বলা আছে।”
রায় ঘোষণার সময় আদালতে ফ্লোরিডা থেকে ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন ট্রাম্প। রায়ের আগে বেশ কয়েক মিনিট ধরে এই মামলা নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “আমার সঙ্গে খুবই অন্যায় হয়েছে। পুরো বিচারপ্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা আমার জন্য ভয়ঙ্কর ছিল।
“ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ রাজনৈতিক উদ্দেশে মামলাটি করেছিলেন। বিচার ব্যবস্থাকে এখানে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।”
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে চুপ থাকতে ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ট্রাম্প ঘুষ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবসায়িক নথিপত্রে বিষয়টি গোপনও রাখেন ট্রাম্প।
এ ঘটনায় গত বছর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে সব অভিযোগেই ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
শুরু থেকেই এই মামলার সমালোচনায় মুখর ছিলেন ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা।
তারা দাবি তুলেছিলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা মামলাটি ‘ভিত্তিহীন’ এবং এটি দ্রুত খারিজ করা উচিৎ।
গত শুক্রবার পর্ন তারকাকে ঘুষ দেওয়া মামলায় ট্রাম্পকে দণ্ডাদেশ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিচারক হুয়ান মারচেন।
অবশ্য তিনি ইঙ্গিতে বলেছিলেন, “রায়ে ট্রাম্পকে জেলে পাঠানো হবে না, এমনকি তাকে কোনও জরিমানা দিতে হবে না বা কোনও শর্তের আওতায়ও আনা হবে না। বরং তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হবে।”
হয়েছেও তাই। অপরাধ করেও সংবিধানের কল্যাণে কোনও শাস্তি পেতে হচ্ছে না ট্রাম্পকে। তার সামনে এখন আপিল করার পথ খোলা। রায়ের পর সে কথা জানিয়েছেনও তিনি।
রায় ঘোষণার পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পাশাপাশি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দেন তিনি।
নিজের আইনজীবীকে পাশে বসিয়ে টেলিভিশনে এ ঘোষণা দেওয়ার সময় ট্রাম্প অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রেের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পুনর্নির্বাচন ঠেকানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছিল এই মামলা।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স