হৃদরোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘সময়’। সেই সময় বাঁচাতেই চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। তার অংশ হিসেবে দেশে রোবট দিয়ে হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট (রিং) পরানো হয়েছে কিছুদিন আগে। আর এবার রোবট দিয়ে রোগীকে স্টেন্ট পরানো হলো দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতির পুরোটাতে নেতৃত্ব দেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাাপক ও রোবটিক টিম প্রধান ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে গত ২৮ জানুয়ারি দুই জনের হৃদযন্ত্রে সফলভাবে স্টেন্ট পরানো হয়।
এর মধ্যে দিয়ে রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির জগতে আরও একবার সাফল্যের মুখ দেখলেন চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, এবার রোগী ছিলেন ক্যাথলাবে (স্টেন্ট পরানোর কক্ষ) আর মূল চিকিৎসক ছিলেন ক্যাথল্যাব থেকে অনেক দূরে। সেখান থেকেই রোবটিক কন্ট্রোল ইউনিটের মাধ্যমে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে সফলভাবে রোগীর হার্টে স্টেন্ট পরান তারা।
দুই রোগী হারুন উর রশিদ ও লিটন কর্মকার বর্তমানে ভালো আছে জানিয়ে প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
হারুন উর রশিদ(৫৫) ও লিটন কর্মকারের(৪৫) হৃদপিণ্ডের মূল রক্তনালিতে ৯০ শতাংশ ব্লক ধরা পরে। প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, তাদের হৃদপিণ্ডে দূরনিয়ন্ত্রিত রোবটিক প্রযুক্তি ব্যবহারে স্টেন্ট লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হলে তারা সম্মতি দেন। এরপরই এই সাফল্যের পালক যুক্ত হয় দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে।
প্রদীপ কুমার কর্মকার জানান, অস্ত্রোপচারের সময় রোগী আর রোবটিক টিম ছিলেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ক্যাথল্যাবে। আর তিনি ছিলেন হাসপাতালের অষ্টম তলায়। সেখান থেকেই রোবটিক কন্ট্রোল ইউনিটের মাধ্যমে দুই রোগীর হৃদপিণ্ডে সফলভাবে স্টেন্ট পরান তিনি।
এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে দূর থেকে রোবটের মাধ্যমে হার্টে স্টেন্ট পরানোর কার্যক্রম সম্পন্ন করল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এর আগে ভারত ও চীনে এই অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু হয়েছে।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি হৃদরোগ আক্রান্ত দুজন রোগীর প্রধান ধমনীতে রোবটিক পদ্ধতিতে স্টেন্ট পরানোর মাধ্যমে এই যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতির প্রথম পর্যায়ের কাজটি সম্পন্ন করেন ডা. প্রদীপ ও তার দল।
সেদিন তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, “আগামী কয়েকদিনে এ ধরনের ১০টি এনজিওপ্লাস্টির পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এর মধ্যে কোনওটিতে রোগী থাকবে ক্যাথলাবে, আমরা থাকব হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে; কোনওটিতে রোগী থাকবে ক্যাথলাবে, আমরা থাকব পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সুবিধাসহ হাসপাতালের বাইরে। সেটা যেকোনও জায়গা হতে পারে। এগুলো সফল হলেই আমরা হৃদরোগ চিকিৎসায় সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে পারব, এটা দেশের ইতিহাসে হবে একটা যুগান্তকারী ঘটনা।”
সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হলে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের জন্য এই যন্ত্র কিনতে সরকারকে সুপারিশ করা হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “পরবর্তীতে জেলা শহর নিদেনপক্ষে বাকি সাত বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই যন্ত্র দেওয়ার অনুরোধ করা হবে। তাতে করে পঞ্চগড়ের একজন রোগীকে সময়-অর্থ ব্যয় করে ঢাকায় আসতে হবে না, তিনি দিনাজপুর মেডিকেলে গেলেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাবেন।”
হৃদরোগীর জন্য এই সময় বাঁচাতে পারাই জীবন বাঁচানোর প্রথম ধাপ, এতে করে রোগী সুস্থতার দিকে অনেকখানি এগিয়ে থাকবেন- এমনটাই মন্তব্য ডা. প্রদীপের।