Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নিরাপদ পানি মৌলিক অধিকার, হাই কোর্টের এই রায়ের মানে কী

ঢাকার অধিকাংশ বাসিন্দা এখনও নিরাপদ পানির অভাবে রয়েছে।
ঢাকার অধিকাংশ বাসিন্দা এখনও নিরাপদ পানির অভাবে রয়েছে।
[publishpress_authors_box]

পানযোগ্য নিরাপদ পানিকে বাংলাদেশের নাগরিকদের ‘মৌলিক অধিকার’ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।

পাঁচ বছর আগে জারি করা এ সংক্রান্ত স্বপ্রণোদিত রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়ে আদালত বলেছে, “সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসারে দেশের নিরাপদ পানি দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেয়।

কী আছে সংবিধানে

বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের শিরোনাম ‘মৌলিক অধিকার’। এই ভাগের ৩২ অনুচ্ছেদে (জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ) বলা আছে- “আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোনও ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।”

সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্রের ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বলা আছে ১৫ অনুচ্ছেদে।

সেখানে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়।

(ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা।

(খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার।

(গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার।

(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার।

সংবিধানের মৌলিক অধিকার খর্ব হলে আইনি প্রতিকার পাওয়ার সংরক্ষণ করা হয়েছে ২৬ অনুচ্ছেদে।

সেখানে বলা হয়েছে- এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসমঞ্জস্য সব প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হতে সেই সব আইনের ততখানি বাতিল হয়ে যাবে।

৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবৎ করবার জন্য এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হলো। (২) এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনও আদালতকে তার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারবে।”

রায়ে কী বলা হয়েছে

রায়ে হাই কোর্ট আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমস্থলে (পাবলিক প্লেস) বিনামূল্যে নিরাপদ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।

এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

রায়ে গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) বলতে আদালত, হাসপাতাল, রেল স্টেশন, হাট-বাজার, এয়ারপোর্ট, উপাসনালয়ের মতো স্থানকে বোঝানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম।

এছাড়া আগামী ১০ বছরের মধ্যে সাশ্রয়ী দামে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নদী, খাল, বিল, পুকুর, ডোবা, জলাশয় বা জলাধারের মতো পানির সব উৎস সংরক্ষণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে রায়ে।

রায়ের ফলে হবে কী

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনজুর বলেন, “রায়টি চলমান (কন্টিনিউয়াস মেন্ডামাস) রাখা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, এই রায় না মানলে যে কেউ প্রতিকার চেয়ে আদালতে আসতে পারবেন।”

রুল থেকে রায়

নিরাপদ পানি নিয়ে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।

দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

রুল জারির আদেশে আদালত বলেছিল, পানি হলো মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা। জাতিসংঘ পানিকে মৌলিক মানবিক অধিকার বলে উল্লেখ করেছে। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার হচ্ছে অন্যতম মৌলিক অধিকার। পানযোগ্য পানি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনজুর বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিবাদীর কাছে থেকে জবাব আসার পর রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে নিরাপদ পানির সরবরাহ নিয়ে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছি।”

রুল শুনানির এক পর্যায়ে বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় হাই কোর্ট গত ৫ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞ ও আইনি মতামত জানতে ৮ জন অ্যামিচি কিউরি (আদালত বন্ধু) নিয়োগ দেন।

তারা হলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, মো. জয়নাল আবেদীন, মনজিল মোরসেদ, আহসানুল করিম, মোস্তাফিজুর রহমান খান, মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক।

তাদের মধ্যে মনজিল মোরসেদ, হুমায়ুন কবির পল্লবসহ তিনজনের বক্তব্য শোনার পর রায় দিয়েছে আদালত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত