Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হাই কোর্ট

বিক্ষুব্ধ চিন্ময় ব্রহ্মচারী সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে মঙ্গলবার কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ ও র‌্যাব। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিক্ষুব্ধ চিন্ময় ব্রহ্মচারী সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে মঙ্গলবার কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ ও র‌্যাব। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মানহানি মামলায় কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতি সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।  

একই সঙ্গে সরকারকে প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বাংলাদেশ শাখার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলেছে উচ্চ আদালত।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে সরকারের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সংবাদমাধ্যমে ইসকনের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন বুধবার হাই কোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন। তিনি সংগঠনটির কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধে আদালতে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) রুলের আর্জি জানান।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সেসময় আদালতকে জানান, এবিষয়ে সরকারের নীতি ও পদক্ষেপ বৃহস্পতিবার জানানো হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে অক্টোবরে চট্টগ্রামে লালদিঘী ময়দানে সমাবেশের ডাক দেয় সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়।

তিনি একসময় ইসকনের সংগঠক ছিলেন। কয়েক মাস আগে সংগঠনের শৃঙ্খলাভঙ্গ করায় তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয় বলে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানায় ইসকন।

প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালতে নেওয়া হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

চট্টগ্রামে লালদিঘী ময়দানে সেই সমাবেশের দিন জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে ৩০ অক্টোবর করা এক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আসামি করা হয় চিন্ময়কে।

প্রায় এক মাস পর গত সোমবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

পরদিন তাকে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম।    

এর প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে আগে থেকে জড়ো হওয়া চিন্ময়ের অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করে। তারা চিন্ময়কে কারাগারে নিতে চাওয়া প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান নেয়।

তাদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ ও ‍বিজিবি। সেসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়ে চিন্ময়ের অনুসারীরা। সংঘর্ষ আদালত প্রাঙ্গণ পেরিয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অংশ নেয় স্থানীয়রাও।  

সংঘর্ষ চলাকালে নিহত হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। এর প্রতিবাদে সেদিন রাতেই চট্টগ্রামে অসংখ্য মানুষ নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হয়ে ইসকন নিষিদ্ধের স্লোগান দিতে থাকে।

সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম আলিফ।

চিন্ময়কে মানহানি মামলায় জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর জেরে চট্টগ্রামে সৃষ্ট সংঘাত নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার আদালতে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) মো. আসাদ উদ্দিন।

তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে, যাতে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় একে-অপরকে আঘাত না করে, কোনও ধরনের দাঙ্গার সৃষ্টি না হয়। চট্টগ্রামের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে; এরই মধ্যে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আইনজীবী হত্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত আসামিও রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। ইসকনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে রাষ্ট্রকে বলেছে।”

তিনি বলেন, “আদালত বলেছে, বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা মিলেমিশে বসবাস করবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমতার ভিত্তিতে যে সম্পর্ক, তা বজায় থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”

সরকার যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ইসকনের ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করে, তাহলে এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখছেন না আইনজীবী মনির।

চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, ইরানসহ ১০টি দেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ রয়েছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, “বাংলাদেশেও ইসকনকে নিষিদ্ধ করলে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে। আমি আশা করি, ইসকনের কর্মকাণ্ড সরকার নিষিদ্ধ করবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত