সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে বলেছে সরকার। বুধবার মধ্যরাতের এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার উপদেষ্টামণ্ডলীর জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন সন্ধ্যায় ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় সরকার, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ঢাকার রমনায় কয়েকটি ভবন নিয়ে সচিবালয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) হিসাবে এটি বিশেষ নিরাপত্তা পায়।
বুধবার মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কয়েকশ গজ দূরেই সচিবালয়।
রাত ২টা আগুন লাগার খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে যায় সচিবালয়ে। তাদের সহায়তা করতে যোগ দেয় পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
১০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট। তার আগে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর দেওয়া দিয়েছিল এই বাহিনী।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ৭ নম্বর ভবনের ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলায় আগুন লেগেছে। তারা সেখানে নেভানোর কাজ করছেন।
“রাত ১টা ৫২ মিনিটে আমরা মেসেজ পাই যে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লেগেছে। ১টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায়।”
তবে ভবনের বাইরে থেকে ৬ থেকে ৮ তলায়ই আগুনের চিহ্ন বেশি দেখা গেছে।
সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।
এর বাইরে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ছয়টি বিভাগের কার্যালয়ও সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে। এগুলো হলো– সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
এরপর সন্ধ্যায় উপদেষ্টামণ্ডলীর জরুরি সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
উপদেষ্টামণ্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এই কমিটি থাকবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব। আমাদের পুলিশের আইজিপি, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের প্রধান তিনি থাকবেন সদস্য সচিব হিসেবে। সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞও থাকবেন।
“এই কমিটিতে তিনজন বিশেষজ্ঞ থাকবেন বুয়েট থেকে। এদের মধ্যে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং একজন ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে। ”
সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিতভাবে করানো হয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “সরকার তো ধারণা করতে পারে না। আমরা আপনাদের বলতে পারি, আমরা খুব গুরুত্বের সাথে এই ঘটনাকে দেখছি। এটা আমাদের সবার নিরাপত্তার বিষয়। এখানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকে। তাই আমরা তিনদিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট দিতে বলেছি।”
সরকারের অনেক তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না, এবারও কি তার পুনরাবৃত্তি হবে কি না—এ প্রশ্ন করলে রিজওয়ানা বলেন, “আমরা খুব দ্রুত চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করব। আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সকল সাংবাদিকদের সাথে শেয়ার করা হবে।”
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আগুণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথিগুলো অনলাইনে থাকার কারণে তা ফেরত পাওয়া যাবে। কিন্তু বাকিগুলো কীভাবে পাওয়া যাবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে, কী পরিমাণ নথি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নির্ধারণের জন্য।