বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করা উচিত নয়; তারা দেশপ্রেমিক, দেশ ছাড়তে চায় না—এমন মনে করেন প্রতিবেশী দেশটির সীমান্ত লাগোয়া রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ‘ভয়াবহ নৃশংসতার’ শিকার হলেও হিন্দুরা যেহেতু দেশপ্রেমিক, তারা ‘খুবই পরিণত’ আচরণ করেছে বলে প্রশংসা করেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা।
তিনি বলেন, যাদের পালানোর তারা কয়েক দশক আগেই ভারতে চলে এসেছেন। তবে এখন যারা আছেন তারা বাংলাদেশকেই নিজের দেশ মানেন ও ভালোবাসেন।
ভারতের শাসক দল বিজেপি এবং তাদের নীতির মূল উৎস হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ফায়দা লুটতে হিন্দুদের ‘দুর্দশা’ নিয়েও রাজনীতি করছে—শর্মার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এমনই অভিযোগ তুলেছে দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রশীদ আলভি।
বুধবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি বলেছি, কেন হিন্দুরা আসছে না। এলে তাও খুব কম সংখ্যক বলে আমি মনে করি। যারা আসতে চেয়েছে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগেই তারা চলে এসেছে। এরা এমন লোক- তারা বাংলাদেশ ছাড়তে চায় না। দেশের ভিটে-মাটির প্রতি তাদের টান আছে। তারা দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি।
“ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হওয়ার পরও তারা বাংলাদেশ ছেড়ে আসতে চায় না, কারণ, সেখানে তাদের পূর্বপুরুষের ভিটা। আমি মনে করি, তাদের ভারতে আসার ব্যপারে উৎসাহিত করা উচিৎ না। তাদের (হিন্দুদের) নিরাপত্তা দিতে এবং বাংলাদেশে সেই পরিবেশ তৈরিতে প্রধানমন্ত্রী (মোদী) বাড়তি সময় কাজ করছেন।”
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কূটনৈতিকভাবে দু’পক্ষের মধ্যে চেষ্টা চলছে। গত ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বললেন, শেখ হাসিনার অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কে বাধা হওয়া উচিত নয়।
বেশ কিছুদিন কথা-বার্তার পর শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক বার্তাও দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই বার্তা পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফলে শেখ হাসিনাকে ফিরতে হবেই কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের নিপীড়নের কথা বলে আসছে ভারত, যদিও অনেক অভিযোগের ভিত্তি মেলেনি।
বিজেপি নেতা শর্মা বলেন, “বাংলাদেশি হিন্দুরা খুবই পরিণত আচরণ কছে এবং তারা দেশ ছেড়ে আসছে না। গত পাঁচ মাসে আসামে অন্তত কোনও বাংলাদেশি হিন্দু অনুপ্রবেশ করেছে বলে চিহ্নিত হয়নি।”
পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বরং বাংলাদেশ থেকে মুসলিমদের অনুপ্রবেশই বেড়েছে। তার মূল কারণ সে দেশে পোশাকশিল্প ক্ষেত্র ভেঙে পড়া। রোজগারের আশায় আসা গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন অনুপ্রবেশকারী প্রতিদিন ধরা পড়ছে অসম ও ত্রিপুরায়। গত ৫ মাসে সহস্রাধিক মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়লেও এক জনও হিন্দু ধরা পড়েননি। আমরা জটিলতা এড়াতে সীমান্তে আটক লেকেদের গ্রেপ্তার না করে পুশ ব্যাক করছি বাংলাদেশে।
“তদন্তে জানা গেছে, ভারতের একাংশ পোশাক কারখানা বাংলাদেশ থেকে সস্তা শ্রমিক পেতে ওই অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে ও টাকা ঢালছে।”
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকদের অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করার জন্য তামিলনাড়ুর পোশাক কারখানার মালিকরাই দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অস্থরতা শুরু হওয়ার পর সেখানে পোশাকশিল্প ধসে পড়ে। তাই সেখানকার পোশাকশ্রমিকরা ভারত আসছে। তারা তামিলনাড়ুর পোশাক কারখানায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। সস্তায় শ্রমিক পেতে তামিলনাড়ুর কারখানার মালিকরা তাদের উদ্বুদ্ধ করছে।
“আমি বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জানিয়েছি ও উত্তর-পূর্ব পরিষদের বৈঠকেও তুলেছি। উত্তর-পূর্বের বাকি রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। মদতদাতা ওই সব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কংগ্রেস নেতা রশীদ আলভি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি ও আরএসএস ফায়দা লুটতে হিন্দুদের ব্যবহার করছে।
আলভি বলেন, “আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করছে, বিজেপি ও আরএসএস শুধু হিন্দুদের জন্য রাজনীতি করে এবং তবে তাদের দুর্দশা ঘোচাতে কিছুই করার নেই সরকারের। বিজেপি ও তাদের কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দুবিরোদী। বাংলাদেশে হিন্দুদের কী হলো, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হিন্দুদের আবেগকে ব্যবহার করে ভোটের রাজনীতি করা।”
তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা