ঘরদোর ঝকঝক তকতকে রাখতে অনেকেরই বিশেষ নজর থাকে। কেউ কেউ গর্ব করে বলেও থাকেন, ‘আমার অনেক শুচিবাই’।
এমন মানুষেরও চোখের ফাঁকিতে রয়ে যায় ঘরের অনেক কিছু; যা পরিষ্কারে হেলা করা ঠিক নয় বলে জানাচ্ছে ইনডিয়া টুডে।
সপ্তাহের কাজের চাপ ও বাচ্চাদের স্কুলের দিনগুলোতে ঘর গোছগাছ করার সময় পাওয়াই দায়। এসব দিনে কোনো মতে ঘরটা ঝাঁট দিয়ে, বিছানার চাদরটা টেনে রাখতে পারলেই যেন বাঁচোয়া।
এরপর ছুটির দিনে ঘর গুছিয়ে রাখা বড় প্রকল্প হয়ে যায়; পরের সারা সপ্তাহ ঘরদোর যেন সুশ্রী দেখায় তাই ছুটির দিনে কোমর বেঁধে চলে ঝাড়ামোছার কাজ।
বিছানার চাদর, খাবার টেবিলের কাপড় পাল্টে ফেলা হয়। সারা সপ্তাহের ময়লা কাপড় ধুতে দেওয়া হয়। আলমারি আর রান্নাঘরের তাকের ধুলা মুছে ঝকঝকে করা হয়।
এটুক করেই মনে হয়, ঘরটা এখন পরিষ্কার দেখাচ্ছে!
কিন্তু বিছানার চাদর পাল্টালেন, তোষক শেষ করে পরিষ্কার করেছেন?
জমিয়ে রাখা জামাকাপড় তো ধুলে নিলেন, কিন্তু ওয়াশিং মেশিনও ধুয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছেন কি?
ঘরে থাকা এসব জিনিসের পরিচ্ছন্নতাও জরুরি। কিন্তু কেন?
দিনে দিনে এসব জিনিসের গায়েও পুরু ধুলো জমে যায়, বললেন সারদা হসপিটালের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান একে গারপেলে।
”আসবাব, কাপড় এসব ঝাড়ামোছা করার সময় যদি তোষক বা এমন কম গুরুত্ব দেওয়া জিনিসও পরিষ্কার করে নেওয়া হয় তাহলে ঘরের বাতাসও থাকে নির্মল।”
”এতে করে এলার্জি এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা কমে আসে অনেকেরই। এই যেমন এয়ার পিউরিফায়ার যদি ধুঁয়েমুছে না রাখেন তাহলে ওটা উল্টো অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে ওঠে। ”
টিভি-ল্যাপটপের স্ক্রিন এবং পর্দার ভাঁজে ভাঁজেও জমা ধুলা ও ঝুল শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করলেন একে গারপেলে।
তাছাড়া নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখলে ঘরের যে কোনো জিনিসের আয়ু বেড়ে যায়।
রিডারস ডাইজেস্টের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যার বরাতে ঘরে থাকা কিন্তু নজর এড়িয়ে যায় এমন কিছু জিনিস পরিষ্কারের পরামর্শ তুলে ধরেছে ইনডিয়া টুডে।
ওয়াশিং মেশিন
বছরে একবার এবং সম্ভব হলে দুইবার ওয়াশিং মেশিন অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপরও যদি কখনও অল্প হলেও দুর্গন্ধ পাওয়া যায় তো সঙ্গে সঙ্গেই কাজে নেমে পড়তে হবে।
ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কার করা খুব একটা ঝক্কির কাজও নয়।
যদি ওয়াশিং মেশিনে উপর থেকে খোলার পদ্ধতি থাকে তাহলে কাপড় যে ড্রামে ফেলা হয় ধোয়ার জন্য তাতে ৪৫০ গ্রাম বোরাক্স এবং চার লিটার ভিনেগার ঢেলে দিতে হবে। এরপর অনেক মেশিন চালিয়ে রাখতে হবে।
যদি মেশিনের সামনের দিকে খোলার মুখ থাকে, তাহলে এর ডিটারজেন্ট রাখার বাক্সে ১৮০ মিলিলিটার ভিনেগার ঢেলে দিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর মেশিন চালু করে রাখলেই পরিষ্কার হয়ে গেল।
এভাবে পরিষ্কার করার পর অবশ্যই কাপড় দিয়ে ভেতরে-বাইরে মুছে নিতে হবে। তারপর ওয়াশিং মেশিনের মুখ খুলে রাখতে হবে, যেন বাতাসে পুরোটা শুকিয়ে যায়।
ডিশওয়াশার
যারা ডিশওয়াশার দিয়ে বাসন ধুয়ে নেন, তাদের অন্তত মাসে একবার ডিশওয়াশারটিই ধুয়ে নিতে হবে।
ডিশওয়াশারের ফিল্টার, তাক এসব খুলে নিতে হবে। সাবান দিয়ে এসব ধুয়ে নিতে হবে। ডিশওয়াশারের যে পাইপ বা ড্রেন আছে সেটাও পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি।
একটি গামলাতে ভিনেগার নিয়ে ডিশওয়াশারের উপরের তাকে রাখতে হবে। একটু বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিতে হবে ডিশওয়াশারের তলায়। এরপর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ডিশওয়াশার চালিয়ে দিলে ভালো ভাবেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ইয়ারবাডস
গান শোনার ইয়ারবাড দুটো দ্রুতই ময়লা হয়ে যায়। আবার অনেক সময় ব্যাগে যেনতেন ভাবে ঢুকিয়ে রাখার হলে নয়তো টেবিলে ফেলে রাখা হলেও ইয়ারবাড ময়লা হয়ে যায়।
তাই ইয়ারবাড জোড়ার বাইরের আবরণ একটা কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে নিলে পরিষ্কার রাখা যায় নিয়মিত। তুলা বসানো কাঠি দিয়ে ইয়ারবাডের ভেতরের অংশটুকু পরিষ্কার নেওয়া যায়। তবে এই অংশ পরিষ্কারে কখনই তরল কিছু ব্যবহার করা ঠিক নয়।
ল্যাপটপ-টিভি স্ক্রিন
এখন তো সারাদিনই স্ক্রিনে তাকিয়ে দিন কাটে সবার। অথচ এই স্ক্রিন পরিষ্কার কি না সে খেয়াল কি আছে আরও?
অন্তত সপ্তাহে একদিন স্ক্রিন মুছে সাফ করা দরকার। মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে নিতে হবে স্ক্রিন।
শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়াই যথেষ্ট; তবে স্ক্রিনে কোনো দাগ থাকলে সাবান-পানি দিয়েও মুছে নেওয়া যাবে। সরাসরি স্ক্রিনে না লাগিয়ে, সাবান-পানির দ্রবণ কাপড়ে স্প্রে বা মাখিয়ে নিতে হবে।
কিবোর্ড
কিবোর্ডে সারাদিন হাত চললেও, এই ডিভাইস যত্ন করে ঝেড়েমুছে রাখার কথা কারও যেন মনেই আসে না।
সপ্তাহ একদিন অবশ্যই কিবোর্ড পরিষ্কার করে নিতে হবে। কিরোর্ডের ধুলে ঝেড়ে নিয়ে কাপড়ে ডিসইনফেকট্যান্ট স্প্রে করে কিবোর্ড মুছে নিতে হবে।
দরজা-জানালার পর্দা
ঘরের দরজা-জানালায় কোন রঙের পর্দা ঝুলানো হবে, তাই নিয়ে অনেক খুঁতখুঁতি থাকে অনেকের। কিন্তু একবার পর্দা ঝুলিয়ে দিয়ে আর ধোয়ার নাম নেয় না কেউ।
প্রতি তিন মাসে পর্দা ধুয়ে নিতে হবে অথবা বছরে অবশ্যই একবার পর্দা ধুতে হবে। ওয়াশিং মেশিনেও পর্দা ধুয়ে নেওয়া যায়। নয়তো ধোপার কাছে দিয়ে পর্দা আবার নতুনের মতো চকচকে করে আনা যায়।
কার্পেট বা মাদুর
শতরঞ্জিতে ধুলা আটকে যায় সহজেই। শতরঞ্জি যত ময়লা হবে ঘরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সমস্যাও তত বাড়বে। তাই মাসে একবার শতরঞ্জি বা কার্পেটে জমা ময়লা ঝেড়ে নিতে হবে।
তবে ঘরের মধ্যে কাপের্ট না ঝেড়ে বাইরে রোদে কয়েক ঘণ্টা রেখে দেওয়া যায়। এছাড়া কাপের্টের উপর সামান্য বেকিং সোডা ছড়িয়ে ২০ মিনিট পর ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চালিয়ে পরিষ্কার করা যায়।
ময়লার ঝুড়ি
ট্র্যাশ বিন বা ঘরের কয়েক কোনায় রাখা ময়লার ঝুড়িতে সারা সপ্তাহ এটাসেটা ফেলা চলে। ময়লা পরে এক থলেতে ভরে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ময়লা রাখার ঝুড়ি প্রতি মাসে একবার হলেও ধুয়ে নেওয়া দরকার। সাবান-পানিতে ডলে ডলে তারপর শুকিয়ে নিয়ে আবার আগের মতো ব্যবহার করা যাবে এই ঝুড়ি।
মোছার কাপড়-ব্রাশ
ঘরের আসবাব মুছতে কাপড় তো লাগেই; আরও লাগে ব্রাশ। কাপড়-ব্রাশ শুকনা অবস্থায় বা ভিজিয়ে মুছে নেওয়া হয় সব জিনিসপত্র ; এমনকি জানালার কাঁচও। কিন্তু কাজ শেষে ওই কাপড় এবং ব্রাশও ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।