Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সিলেট সীমান্ত দিয়ে যেভাবে পালায় আওয়ামী লীগ নেতারা

সিলেটের তামাবিল স্থল বন্দর।
সিলেটের তামাবিল স্থল বন্দর।
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। তাদের যাওয়ার খবর ৫ আগস্টই এসেছিল। কিন্তু তারপর আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাই আতঙ্কে পালিয়েছে প্রতিবেশী দেশটিতে। এদের বড় অংশটি যায় সিলেট সীমান্ত দিয়ে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন নেতা সিলেট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রথমে যায় মেঘালয়ের শিলংয়ে। পরে সেখান থেকে কলকাতায় পৌঁছায়।

সিলেটের সঙ্গে মেঘালয়ের স্থলবন্দর (তামাবিল) থাকলেও ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতারা গেছেন অবৈধ পথে। সিলেট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাই অবৈধভাবে ভারত যাওয়ার এই রুট আবিষ্কার করেন বলে এতে যুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর সারাদেশে দলটির কার্যালয় ও নেতাদের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়। দলের ছন্নছাড়া অবস্থায় কিছু নেতা গ্রেপ্তার হয়। অনেক নেতাই পালিয়ে আছে, তারমধ্যে কেউ কেউ ভারতে পাড়ি দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর ওই দুই সদস্যের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখন কলকাতায় আছেন।

তারা সবাই ৭ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্টের মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢোকেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না এভাবে ভারত যাওয়ার সময় গত ২৪ আগস্ট অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। গত ৩১ আগস্ট তার লাশ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে হস্তান্তর করে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান গত ১৭ আগস্ট একসঙ্গে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। শফিকুর রহমান ভারত থেকে লন্ডনেও চলে গেছেন।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বড় অংশ সিলেটের। এই জেলার অনেকেরই লন্ডনে নিয়মিত যাতায়াত।

সিলেটের সদ্য সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সরকার পতনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ হারানো আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এই সময়ে দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে গেছেন। লন্ডন পৌঁছনোর পর তিনি বলেছেন, তিনিসহ অন্য আরও নেতা নিরাপত্তার কারণে অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।

আনোয়ারুজ্জামান দুই সহযোগীকে নিয়ে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান ১২ আগস্ট। পরে তারা লন্ডনে যান।

৫ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদকে নগরীর টিলাগড় এলাকার বাসা থেকে অটোরিকশায় সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার দিকে যেতে দেখেছেন এক ব্যক্তি।

ওই ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, দুই দিন পর তিনি নিশ্চিত হন যে মেঘলায়ের শিলংয়ে রয়েছেন আজাদ।

এরপর একসঙ্গে ভারত যান সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা। তারা ভারত থেকে লন্ডনে চলে গেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

ভারতে পাড়ি জমানো এবং দেশে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার রুট আবিষ্কারে মূল ভূমিকা রাখেন এই জেলার ছাত্রলীগ নেতারা।

প্রথমেই কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমদ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ৪০/৫০ জন নেতাকে নিয়ে এই সীমান্ত দিয়েই ভারতে যান।

সিলেট সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের ডাউকি শহর।

পরে সিলেট মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তি, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ রিপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আফসার আজিজ, সহসভাপতি পীযূষ কান্তি দে, এমদাদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিটু, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ও রুহেল আহমদ ভারতে পালিয়ে যান। তাদের পথ ধরেই পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ভারতে যান।

এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, এমন কয়েকজন সকাল সন্ধ্যাকে জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

পালিয়ে যাওয়া এক যুবলীগ নেতা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, কানাইঘাটের ডোনা ও সুরইঘাট এলাকার সনাতনপুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি ভারতে গেছে। গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গৌহাটি, শিলং, ডাউকি, জোয়াইসহ কয়েকটি এলাকায় রয়েছে তারা।

অবৈধভাবে গেলেও শিলংয়ের পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই ঘোরাফেরা করতে পারছেন, বললেন ওই যুবলীগ নেতা।

ভারত থেকে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন বলেও জানা গেছে। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার গেছেন লন্ডনে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ যুক্তরাজ্যে এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ভারতের করিমগঞ্জে অবস্থান করছেন বলে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য জানিয়েছেন।  

আনোয়ারুজ্জামান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত গঠনসহ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তারা বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরার কাজ শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত