Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫

বেনজীরের ‘ইচ্ছা পূরণে’ বিধি ভেঙে সংবাদমাধ্যম পরিচালনা

ডিএমপি নিউজ
ডিএমপি নিউজ নিউজ পোর্টালটি চলছে ২০১৪ সাল থেকে।
[publishpress_authors_box]

বেনজীর আহমেদ যখন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার; তখন ২০১৪ সালে ‘ডিএমপি নিউজ’ নামে অনলাইন নিউজ পোর্টালটির যাত্রা শুরু হয়। বেনজীর নিজেই ঘটা করে এর উদ্বোধন করেন।

সংবাদ পোর্টালটির মাস্টহেডে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লোগো; ঠিকানাও মিন্টো রোডে ডিএমপি সদর দপ্তরের। পরিচালকরাও সবাই ডিএমপির কর্মকর্তা। ফলে এটি যে ডিএমপি পরিচালিত, তা বোঝার বাকি থাকে না।

কিন্তু প্রশ্ন থাকছে, রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনী হিসাবে পুলিশ এমন কোনও সংবাদমাধ্যম চালাতে পারে কি না, যেখানে আবার বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনও নেওয়া হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধান ঘাঁটলে দেখা যায়, এমনটা করার কোনও সুযোগ নেই। পুলিশ সদস্য কারোর পক্ষে সংবাদ সরবরাহ সংস্থা, সংবাদপত্র বা সাময়িকপত্রে কাজ করার সুযোগ নেই।

তাহলে কীভাবে এমন একটি অনলাইন পোর্টাল চলছে? সেই প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে।

‘ডিএমপিনিউজডটওআরজি’ এই ইউআরএলের ওয়েবসাইটটি অন্য সাধারণ সংবাদমাধ্যমের মতোই জাতীয়, আন্তর্জাতিক, বিনোদন, খেলাসহ বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করছে। তবে পুলিশের তৎপরতা সংক্রান্ত সংবাদ বেশি।

নাভানা, বিকাশের মতো বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও এখন দেখা যাচ্ছে ওয়েবসাইটে।

এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে নাম আছে ডিএমপি কমিশনারের। সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক সবাই পুলিশ কর্মকর্তা। ওয়েবসাইটটির স্বত্বও ঢাকা মহানগর পুলিশের।

যেভাবে শুরু

২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি ডিএমপি নিউজ উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর।

তিনি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দীর্ঘ আট মাস পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনার পর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো। এখন থেকে এই নিউজ পোর্টালে সব ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদের পাশাপাশি জাতীয়, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলাসহ সব নিউজ এতে থাকবে।

পেশাদার সাংবাদিক নিয়োগের মাধ্যমেই এটি চালানো হবে, অনুষ্ঠানে তাও বলেছিলেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বেনজীর আহমেদের ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এই সংবাদ মাধ্যমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।”

যেভাবে চলছে

উদ্বোধনের সময় একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ডিএমপি নিউজে। কিন্তু কয়েকমাস পর তাকে বাদ দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া শুরু হয়।

ডিএমপি নিউজে সংবাদ প্রকাশের কাজ করে আসা পুলিশের এক এসআই সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শক পদ মর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তাকে দিয়ে নিউজ প্রকাশের কাজ করানো হয়।

তিনি জানান, এখানে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা ও বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা দুই শিফটে কাজ করতে হয়। প্রতি শিফটে ৪-৫ জন করে দুই শিফট মিলিয়ে প্রায় ১০ জন পুলিশ কর্মকর্তা কাজ করেন প্রতিদিন। এজন্য বেতনের বাইরে অতিরিক্ত কোনও সুবিধা পান না তারা।

ডিএমপি নিউজ কারা পরিচালনা করেন, তাদের নাম রয়েছে ওয়েবসাইটে।

আইনে বাধা, তবুও চলছে

বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধানের ১০৭ নং ধারায় ‘প্রচার সংস্থাগুলোর সহিত সম্পর্ক’ (১৮৬১ সালের ৫নং আইন) শিরোনামে বলা হয়েছে, “এই প্রবিধানগুলি যাহাদের উপর প্রযোজ্য, তাহাদের কেহই কোনও সংবাদ সরবরাহ সংস্থা, সংবাদপত্র বা সাময়িকপত্রের সংবাদদাতা হিসাবে নিযুক্ত হইতে পারিবে না। সরকার কর্তৃক বেতারে সংবাদ সরবরাহকারীদের জন্য প্রণীত কার্যবিধি এ প্রবিধানের আওতাধীন সকলের উপর বাধ্যতামূলকভাবে প্রযোজ্য হইবে।”

আইন যেমন সমর্থন করে না, তেমনি রাষ্ট্রীয় একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুলিশের কোনও শাখার বাণিজ্যিক কার্যক্রমে জড়ানোর সুযোগও নেই বলে মনে করেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে, পুলিশের একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থাকতে পারে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কিংবা শিক্ষামূলক যে কোনও তথ্য তারা প্রচার করতে পারে। কিন্তু সেই ওয়েবসাইটেও কখনোই আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত তথ্যের বাইরে সংবাদ বা বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ নেই।

“বিশ্বের আর কোনও দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের ওয়েবসাইট চালায় বলে আমার জানা নেই। অন্যান্য দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেইসবুক ও টুইটার (বর্তমানে এক্স) অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের তথ্যগুলো জনসাধারণকে জানায়। সেই তথ্যও কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্তের বাইরে হয় না।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়েবসাইট রয়েছে। তবে সেখানে হালনাগাদ তথ্যের জন্য ডিএমপি নিউজ ওয়েবসাইটটির লিংক দেওয়া আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ফেইসবুক পেইজেও ডিএমপি নিউজের সংবাদগুলোই দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়েবসাইটেও থাকছে ডিএমপি নিউজ পরিবেশিত খবর।

কী বলছেন কর্মকর্তারা

ডিএমপি নিউজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বেনজীর আহমেদের কোনও বক্তব্য জানা যায়নি।

ডিএমপি কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর র‌্যাব মহাপরিচালক এবং পুলিশ মহা পরিদর্শক হয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালে তিনি অবসরে যান।

গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েকমাস আগে তার ‘দুর্নীতির’ অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান।

ডিএমপি নিউজের কীভাবে চলছে- জানতে চাইলে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) ইনামুল হক সাগর।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিষয়টি যেহেতু ডিএমপির, সেহেতু এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনি ডিএমপির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন।”

ডিএমপি নিউজে সম্পাদক হিসাবে নাম রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের।

তিনি সকাল সন্ধ্যার জিজ্ঞাসায় বলেন, “ওয়েবসাইটটি অনেক আগেই থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছে। আর আমি এখানে নতুন এসেছি। তাই বিস্তারিত কিছু জানি না।”

তবে তিনি বলেন, “এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পুলিশ সংক্রান্ত খবরই প্রকাশ করা হয়। আর বিজ্ঞাপন আছে নামমাত্র।”

এভাবে পুলিশের সংবাদ পোর্টাল চালানো নিয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সকাল সন্ধ্যার পক্ষ থেকে তার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত