বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সেখানে আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফার ম্যাচ সেরা হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে গেলেন। সে তো পশতু ভাষায়, ইংরেজি না হওয়ায় ওই ভাষা জানা লোক ছাড়া কারও বোঝার উপায় নেই।
আফগানিস্তানের সাবেক মিডিয়া ম্যানেজার আবু যারকে গাজানফারের পশতু ভাষার রেকর্ডিং পাঠিয়ে জানা গেল তার অনুভূতি। দলের জন্য কিছু করতে চাওয়ার তাড়না এমন দুর্বোধ্য বানিয়েছে গাজানফারকে। তবে বোলিং শক্তির আসল রহস্যটা প্রকাশ করেননি এই তরুণ।
সেই রহস্যের কিছুটা জানিয়েছেন বর্তমানে আফগান ঘরোয়া ক্রিকেটের মিডিয়া বিভাগ সামলানো আবু যার। আঙুল ও কবজির শক্তিতে বলের এত বৈচিত্র্য তৈরি করেছেন গাজানফার। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই হয়ে উঠেছেন ব্যাটারদের ত্রাস।
ম্যাচ শেষে গাজানফার বলছিলেন, “আমি শুরুতে খুব ভালো জয়গায় বল ফেলতে পারছিলাম না। তাই আমাকে একটু ব্রেক দেওয়া হলো। ওই সময় নিজে থেকে ভেবেছি দলের জন্য কিছু করতে হবে। পরে বোলিংয়ে এসে সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পেরেছি এবং আমার ভ্যারিয়েশন কাজ করেছে।”
𝐓.𝐈.𝐌.𝐁.𝐄.𝐑!!! ⚡
— Afghanistan Cricket Board (@ACBofficials) November 6, 2024
AMG with an early blow! 👏#AfghanAtalan | #AFGvBAN | #GloriousNationVictoriousTeam pic.twitter.com/GQoNwIawZk
২০০৬ সালে জন্ম নেওয়া গাজানফারের ঘরোয়া ক্রিকেটের যাত্রাটা খুব সাদামাটা। টেনিস বলে খেলা শুরু করার পর পাকতিয়া প্রদেশের একটি অ্যাকাডেমিতে খেলা শুরু করেন। সেখান থেকে আফগান শাপাগিজা ক্রিকেট লিগের দল এমআইএস আইনাক নাইটসে ডাক পান। এই দলে তাকে টেনে নেন সাবেক আফগান অধিনায়ক দাওলাত আহমাদজাই।
তার পরামর্শেই আজকের গাজানফারের বেড়ে ওঠা। শুরুতে পেসার ছিলেন এই তরুণ। তাতে অফস্পিন করতে বলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান দলের অধিনায়ক থাকা দাওলাত। আবু যার ব্যাপারটি জানালেন এভাবে, “গাজানফারের পেসার থেকে স্পিনার ওয়ে ওঠা আমিও শুনেছি কিন্তু দেখিনি। দাওলাত আহমাদজাইয়ের পরামর্শে সে তার বোলিং পরিবর্তন করে। তিন মৌসুম ধরে ঘরোয়া লিগে সে স্পিন বোলিং করছে। আমি তাকে স্পিনার হিসেবেই দেখেছি। আমাদের কন্ডিশনের জন্য খুবই উপযোগী তার বোলিং।”
গাজানফারের বোলিং শক্তির জায়গা আবু যার তুলে ধরলেন এভাবে, “সে খুবই প্রতিভাবান বোলার। মুজিব উর রহমানের মতোই। ওর বোলিং শক্তির জায়গায় আঙ্গুলের ব্যবহার ও কবজির শক্তি। বল ছাড়ার সময় সে বৈচিত্র্য অনুযায়ী আঙ্গুলের ব্যবহার করে কবজির শক্তি কাজে লাগায়। এতে একেক বল একেক রকম হয়।”
যার আরও যোগ করেন, “আমার মনে হয় সে মুজিবের থেকেও আরও ভালো করতে পারে। কারণ মুজিব পিচের একটু নিচের দিকে বল করে, গাজানফার ওপরে বল করে। আজকে (বাংলাদেশের বিপক্ষে) শুরুতে সে পিচের নিচে বল করছিল এজন্য তাকে খেলা সহজ ছিল। পরে যখন ওপরে বল করা শুরু করলো তখন ব্যাটারদের জন্য কোন বল কোনদিকে ঘুরবে তা বোঝা কঠিন হয়েছিল।”
Here's another look at how AMG got better off Tanzid Hasan! ⚡#AfghanAtalan | #AFGvBAN | #GloriousNationVictoriousTeam pic.twitter.com/Is41mrt7kn
— Afghanistan Cricket Board (@ACBofficials) November 6, 2024
ইনজুরির কারণে মুজিব দলে থাকলে গাজানফার হয়তো একাদশে সুযোগ পেতেন না। মুজিবের ইনজুরি তার জন্য সৌভাগ্য হয়ে এল। অবশ্য মাত্র ১৮ বছর বয়সেই নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন এই তরুণ। ইতিমধ্যে ডাক পেয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। এ বছর আইপিএলে কোন ম্যাচ খেলেননি কিন্তু সামনের বার তার খেলা কেউ থামাতে পারবে না।
শুধু আইপিএল, নয় মাত্র ১৫ বছর বয়সে পাকিস্তানের জুনিয়র লিগে খেলেছেন রায়ালপিন্ডি রাইডার্সের হয়ে। ডাক পেয়েছেন বিপিএলেও। এবার রংপুর রাইডার্সের হয়ে বাংলাদেশ মাতিয়ে যাবেন। এর আগে শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে কলম্বো স্ট্রাইকার্স ও নেপাল লিগের দলে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে গাজানফারের।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুব বিশ্বকাপ, ইমার্জিং এশিয়া কাপে নিজের বোলিং রহস্যের ছিটেফোটা দেখিয়েছেন গাজানফার। এবার ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে গুড়িয়ে দেওয়ার দিন দেখালেন আরও কিছুটা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিশ্বে হইচই ফেলে আফগান ক্রিকেটে আবির্ভাব হয়েছিল রশিদ খানের। বর্তমানে সংক্ষীপ্ত ফরম্যাটে সেরা তারকাদের একজন রশিদ।
গাজানফারও তরুণ বয়সে ক্যারিয়ারের শুরুতে হইচই ফেলে দেওয়ার পারফরম করেছেন। এবার লম্বা দৌড় দেওয়ার পালা তার।