Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

মোদির ‘এক নম্বর শত্রু’ কীভাবে হলেন জর্জ সরোস

George Soros
[publishpress_authors_box]

ভারতের পার্লামেন্টে নভেম্বরের শেষ দিকে বসে শীতকালীন অধিবেশন। এসময় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটির পার্লামেন্টে কিন্তু শীতের আমেজ থাকে না, চলে উত্তপ্ত আলোচনা। আর এর মুখ্য ভূমিকায় থাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা।

উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে জাতিগত সংঘর্ষ। সমালোচকরা স্থানীয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এই সংকট আরও বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। একই সঙ্গে ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে বিজেপি নেতারা পার্লামেন্ট চত্বরে মিছিল করেন। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন কংগ্রেসকে তাদের দৃষ্টিতে অপ্রত্যাশিত এক ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত করার। তিনি হলেন জর্জ সরোস।

২০২৩ সালের শুরুতে বিজেপির প্রধান টার্গেট হয়ে ওঠেন হাঙ্গেরিতে জন্ম নেওয়া আমেরিকান ব্যবসায়ী জর্জ সরোস। বিজেপি সরোসকে দেশের বিরোধী দলকে সমর্থন ও নরেন্দ্র মোদির বিরোধীদের সহায়তার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। এর মাধ্যমে বিরোধীরা ভারতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইছে, এমন অভিযোগও তোলে বিজেপি।

এসব অভিযোগ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে আরও তীব্র হয়। নির্বাচনে বিজেপি এক দশক পর তার ক্ষমতার বড় অংশ হারায়। তারপরও যথেষ্ট আসন পেয়ে জোট সরকার গঠন করে টিকে আছে বিজেপি।

জর্জ সরোস।

সম্প্রতি বিজেপির এই প্রচার আরও তীব্র হয়েছে। বিজেপি এখন মোদির ক্ষমতাকে দুর্বল করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধেও সোরোসের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তুলছে।

বিজেপি গত ৫ ডিসেম্বর সোশাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্টে জানিয়েছে, কংগ্রেস নেতারা, বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী সরোসের ফাউন্ডেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আংশিক সহায়তায় একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিক দলের সহায়তা নিচ্ছেন। তারা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র সংক্রান্ত প্রশ্ন তুলে ধরেছেন।

ফ্রান্সভিত্তিক মিডিয়া মিডিয়াপার্টের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজেপি বলছে, সরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টকে (ওসিসিআরপি) তহবিল দিচ্ছে।

ওসিসিআরপির প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বিজেপি বলছে, গ্রুপটি মোদি সরকারের পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার, আদানি গ্রুপের কার্যক্রম ও ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনতির বিষয়ে তদন্ত করেছে। বিজেপি এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়, সরোস ও বাইডেন প্রশাসন আসলে এই প্রতিবেদনগুলোর পেছনে ছিল।

এক সংবাদ সম্মেলনে বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন, “ডিপ স্টেটের একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদিকে টার্গেট করে ভারতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরই এই এজেন্ডার পেছনে রয়েছে। আর ওসিসিআরপি একটি মিডিয়া হিসেবে ডিপ স্টেটের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে লক্ষ্য করে বিজেপির মন্তব্যগুলো অনেক বিশ্লেষককে অবাক করেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পদক্ষেপটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে।

রাজনৈতিক গবেষক অসিম আলী বলেন, “পশ্চিমা সমালোচনাকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা মোদির ভারতের এক নতুন ঘটনা। এটি একটি প্রচেষ্টা, যেখানে ‘পশ্চিমা সমর্থিত জোট’ ও ‘জনপ্রিয় সমর্থিত জাতীয়তাবাদী জোটের’ মধ্যে সংঘর্ষের গল্প তৈরি করা হচ্ছে।”

সহজ টার্গেট

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেনসিক আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করে, আদানি গ্রুপ কয়েক দশক ধরে ‘শেয়ার ম্যানিপুলেশন’ ও ‘হিসাব জালিয়াতির’ সঙ্গে জড়িত ছিল।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর আদানি গ্রুপের শেয়ার মূল্য প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। পরে অবশ্য তা কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। এরপর গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে আরও বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে।

আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গ্রুপটি উল্টো হিন্ডেনবার্গকে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ডের (এসইবিআই) মাধ্যমে একটি শোকজ নোটিশ পাঠায়। এতে বলা হয়, হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে বাজে অবস্থা তৈরি করতে গোপন তথ্য ব্যবহার করেছে।

তবে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ কংগ্রেসের নেতৃত্বে মোদি ও আদানির বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংসদে অভিযোগ করে বলেন, “সরকারের নীতি আদানি গ্রুপের স্বার্থে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।”

তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির ও আদানি গ্রুপের বিলিয়নিয়ার এক ব্যক্তির একটি প্রাইভেট জেটে চড়ার দুটি ছবি দেখান। একই সঙ্গে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আদানি গ্রুপের জেট থেকে মোদির প্রচার চালানোর ছবি তুলে ধরেন।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে আদানির প্রসঙ্গ টেনে সরোস বলেন, “আদানি সংকট ভারত সরকারের উপর মোদির কড়াকড়িকে গুরুতরভাবে দুর্বল করবে।”

তার এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায় মোদির দল বিজেপি।

তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এখন তার অসৎ উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছেন। এটি ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের চেষ্টার প্রকাশ।”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সরোসকে ‘একজন পুরনো, ধনী একরোখা ও বিপজ্জনক ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

আল জাজিরা ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন থেকে বিজেপি ও মোদি সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে পায়নি।

তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি ভারতের কার্যক্রম সম্পর্কে একটি বিবৃতি দেয়। সেখানে তারা বলে, “২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ভারতের স্থানীয় এনজিওদের জন্য আমাদের তহবিল দানের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ রয়েছে।”

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিআর) রাজনৈতিক বিজ্ঞানী নীলাঞ্জন সিরকারের মতে, নতুন সমালোচনায় সরোসের বিষয়ে কম কথা বলা হচ্ছে।

সিরকার বলেন, “সরোস একটি সহজ টার্গেট। তিনি অনেক অর্থের মালিক। তিনি মোদির সমালোচনা করেন এবং অবশ্যই অনেক তহবিল দেন। কিন্তু সরোসকে একটি বিমূর্ত ব্যক্তি হিসেবে ঘৃণা করার বিষয় নয়। সরোসের সঙ্গে যেসব সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতার সম্পর্ক রয়েছে, বিজেপি তাদের খারাপভাবে উপস্থাপন করতে চাইছে।”

আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এরপর কংগ্রেস ও সরোসের বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্র করে বিজেপি। কংগ্রেস ও সরোসের মধ্যে গভীর সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছে দলটি।

বিজেপি সরোসের মাধ্যমে এশিয়া প্যাসিফিকের ফোরাম অব ডেমোক্র্যাটিক লিডার্সের (এফডিএল-এপি) তহবিল জোগানোর কথা উল্লেখ করে, যার সহ-সভাপতি কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী।

বিজেপির সংসদ সদস্য জগদাম্বিকা পাল বলেন, “সরোস এই দেশের নাগরিক নন। তিনি দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চান।”

কংগ্রেস অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বিজেপি মনিপুর সংকট, ভারতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য সরোসবিরোধী প্রচার চালাচ্ছে।

সরোসবিরোধী বক্তব্য

ভারত একমাত্র দেশ নয়, যেখানে ডানপন্থী দলগুলো সরোসকে টার্গেট করছে। ৯৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান সরোসকে ইউরোপে অভিবাসী প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। হাঙ্গেরিতে সরোসের সমর্থন বন্ধ করতে একটি আইনও করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা প্রমাণ ছাড়া সরোসকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্রতিবাদ ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য তহবিল জোগানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।

সমালোচকদের মতে, প্রায়ই এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোতে আ্যান্টি-সেমিটিক স্বরও থাকে। তবে ভারতীয় প্রচার ভিন্ন, এমনটা জানিয়েছেন মিশিগান ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জয়োজিত পাল।

সরোসকে নিয়ে সোশাল মিডিয়া এক্সে তিনি লিখেছেন, “ভারতীয় প্রভাবশালীরা সরোস সম্পর্কে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের সময় সাধারণত ‘অ্যান্টি-সেমিটিক উপমা ব্যবহার করতে সতর্ক’ থাকে। মুসলিমদের প্রতি তার সহানুভূতিকে কেন্দ্র করে কথা বলে। এই ন্যারেটিভ পরিণত হয় ‘হিন্দুদের প্রতি ঘৃণাতে’।”

জয়োজিত পাল দেখিয়েছেন, বিজেপি নেতাদের কিছু সোশাল মিডিয়া একাউন্ট থেকে সরোসের বিরুদ্ধে কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “মূল কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করছিলেন (মোদির পক্ষে) প্রভাবশালীরা। তারা আক্রমণাত্মকভাবে কনটেন্ট রিটুইট করে ভাইরাল করতেন।”

পাল মনে করেন, সরোসকে ছায়ায় থাকা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে উপস্থাপন কিছু রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য খুব আকর্ষণীয়। কারণ এটি ‘একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়’। সেখানে প্রতিপক্ষকে ‘এতটাই দুর্বল দেখানো হয় যে তারা বিদেশী হস্তক্ষেপকারীর থেকে নির্দেশ নিতে বাধ্য হয়’।

ভারতে সরোসের বিরুদ্ধে আক্রমণ সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স, ইন্সটাগ্রাম থেকে ওয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং মূলধারার টেলিভিশন শোতে চলে গেছে। যেখানে তাকে টার্গেট করছেন বিজেপির মুখপাত্র ও দলীয় সমর্থকরা।

ফলে ভারতের অনেকেই এখন সরোসের নাম জানেন। কিন্তু এই ব্যক্তি যে আসলে কে, তা অনেকেই জানেন না।

বিজেপি যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে সরোসের সহযোগী হিসেবে চিত্রিত করেছে, তাতে অবাক হয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক পর্যবেক্ষকরা। কারণ মোদিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সরোসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে, এমন অভিযোগ অতীতে বিজেপি করেনি।

বিজেপির সংসদ সদস্য ও মুখপাত্র সম্বিত পাল গত ৫ ডিসেম্বর অভিযোগ করেন, ওসিসিআরপির ৫০ শতাংশ তহবিল আসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের তহবিল থেকে। আর ডিপ স্টেট প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহার করছে।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, বিজেপির এমন অভিযোগ ‘হতাশাজনক’।

জর্জ সরোস।

কে এই জর্জ সরোস

বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী জর্জ সরোসের জন্ম হাঙ্গেরির এক ইহুদি পরিবারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৭ বছর বয়সে তিনি নাৎসি আগ্রাসনের কারণে পরিবারসহ দেশত্যাগ করেন এবং ১৯৪৭ সালে লন্ডনে পাড়ি জমান।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি লন্ডনের সিঙ্গার অ্যান্ড ফ্রাইডল্যান্ডার ব্যাংকে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে সরোস নিউ ইয়র্কে যান এবং ইউরোপিয়ান সিকিউরিটিজে বিশ্লেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে নিজস্ব হেজ ফান্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগের জগতে প্রবেশ করেন তিনি।

জর্জ সরোসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোর একটি হলো ব্রিটিশ পাউন্ডের বিরুদ্ধে বিনিয়োগ, যা ১০০ কোটি ডলার লাভ এনে দেয়। সাহসী বিনিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাপী তিনি পরিচিত।

ফোর্বসের তথ্যমতে, তার নিট সম্পদের পরিমাণ ৮৫০ কোটি ডলারের বেশি।

গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার প্রচারের লক্ষ্যে সরোস ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ৭০টিরও বেশি দেশে এর কার্যক্রম রয়েছে। সংস্থাটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন, মানবাধিকারের সুরক্ষা ও বাকস্বাধীনতা বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেয়।

স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সরোস যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন ও জো বাইডেনের প্রচারাভিযানে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

জর্জ সরোসের কার্যক্রম বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। তাকে এশিয়ার ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম হোতা হিসেবে দায়ী করা হয়।

থাইল্যান্ড থেকে শুরু হওয়া এই সংকট দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সরোসের বিরুদ্ধে মুদ্রা ফটকা কারবারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার অভিযোগ তোলেন।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা, এনডিটিভি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত