অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে কী করতে চায় সে বিষয়ে জনগণের স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার মতে, রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারের আর কত সময় প্রয়োজন তা জানার অধিকার জনগণের আছে।
তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি করতে চাইছে? রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন, সেটি জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।
“সরকার জনগণের সামনে তাদের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে এটি একদিকে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে; অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও গতি বাড়বে।”
রবিবার বিকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির বিজয় দিবসের আলোচনায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনী রোডম্যাপের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, তবে সেটি অবশ্যই হবে গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী।”
সরকার তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছে যত বেশি স্বচ্ছ থাকব, জনগণও সরকারের প্রতি ততবেশি সমর্থনের হাত প্রসারিত রাখবে, বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। শুরু থেকেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে ছয়টি সংস্কার কমিশনও। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে অন্য উপদেষ্টারাও বারবারই সংস্কারের কথা বলেছেন।
শুরুতে যখন বিএনপি নেতৃত্ব সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছে, তখন সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের পথে যাওয়ার জন্য সময় দেওয়ার কথা বলেছে। তবে সময়ের সঙ্গে দ্রুত নির্বাচনের দাবি বাড়িয়েছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্যে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়; এটি করবে জনগণের নির্বাচিত সরকার।
তারেক রহমানের রবিবারের বক্তব্যেও সেই কথাই উঠে এল।
বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনি রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ। সেই যাত্রায় আবারও বলছি, মন দিয়ে শুনবেন দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী-আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ। আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, “এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে। এই কারণে প্রায়ই আমি বলে থাকি, ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্জনের আর ২০২৪ দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।”
সে কারণে এবারের বিজয় দিবসকে তিনি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হয়ে উঠবে জনগণের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায় কিংবা প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি অর্থবহ দিন।”
রাষ্ট্র ও জনগণকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের লালন, বিকাশ এবং চর্চা জরুরি বলে মনে করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জাতীয় সংসদ।
“জবাবদিহিতমূলক সরকার ও সংসদ যথাযথভাবে কার্যকর থাকলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত থাকে। আমাদের মনে রাখা দরকার জনগণ শক্তিশালী না থাকলে জাতীয় ঐক্যও শক্তিশালী হয় না।”
এসময় ডেঙ্গু পরিস্থিতি, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যসহ দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও কথা বলেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দুর্ভোগ মেনে নিয়ে জনগণ এখনও সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করছেন না। কারণ জনগণ বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়।
“তবে আগেও বলেছি, আজও উল্লেখ করতে চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরা নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কিনা তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ অন্য।