Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

সাইফের ওপর হামলাকারী ‘বাংলাদেশি’ ধরা পড়লেন যেভাবে

shehjad
[publishpress_authors_box]

ভারতের মুম্বাইয়ের নিরাপত্তাঘেরা বাড়িতে ঢুকে বলিউড তারকা সাইফ আলি খানের ওপর হামলা চালিয়েছিল এক যুবক। তারপর থেকে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ।

তিন দিনের অনুসন্ধানে মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম শাহজাদ (৩০) নামে একজনকে ধরার পর মহারাষ্ট্র পুলিশ বলছে, এই যুবক বাংলাদেশি। চুরির উদ্দেশে ঢুকে ধরা পড়া এড়াতে সাইফকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়েছিলেন তিনি।   

ঘটনা বুধবার গভীর রাতের। হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে পতৌদি পরিবারের ‘ছোট নবাব’ সাইফের বান্দ্রার বাড়িতে ঢুকে তার ওপর হামলা চালায় এক দুর্বৃত্ত। উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত করে তাকে। তারপর পালিয়ে যায়।

আহত সাইফ কোনোমতে পৌঁছান লীলাবতী হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার শরীর থেকে বের করা হয় ভাঙা ছুরির টুকরা। এরপর সাইফকে রাখা হয় আইসিইউতে। এখন আশঙ্কামুক্ত হলেও তিনি হাসপাতালেই আছেন।

ঘটনার পরই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ। তিন দিন পর রবিবার ভোরে মহারাষ্ট্রের থানে এলাকার একটি শ্রমিক বসতি থেকে শরীফুলকে গ্রেপ্তারের খবর জানায়।

প্রাথমিকভাবে মুম্বাই পুলিশের ধারণা, ওই হামলাকারী বাংলাদেশি নাগরিক হতে পারে। কারণ তার কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ কোনও নথি পাওয়া যায়নি। আবার এমন কিছু পাওয়া গেছে, যা থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে তার বাড়ি বাংলাদেশে।

তার বিরুদ্ধে পুলিশের প্রথম অভিযোগ, তিনি অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছেন। এ দেশে গত পাঁচ-ছ’মাস ধরে নাম বদলে বদলে নানা জায়গায় কাজের সন্ধান করে বেড়াচ্ছিলেন।

পুলিশের দাবি, বিজয় দাস নাম নিয়ে গত ৫-৬ মাস ধরে মুম্বাইয়ে থাকছিলেন শরীফুল। তিনি কাজ নিয়েছিলেন একটি হাউজকিপিং কোম্পানিতে।

তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমন শাখার ডিসিপি দীক্ষিত গেদম জানান, শরিফুল স্বীকার করেছেন কাজের অভাবেই চুরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম রাতেই ঢুকেছিলেন সাইফের ঘরে। কিন্তু জানতেন না কার বাড়ি চুরি করতে যাচ্ছেন।

সিঁড়ি ভেঙে এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের নালির সাহায্যে উপরে ওঠেন তিনি। শরীফুল দাবি করেছেন, চুরির উদ্দেশ্যে নেমে সে রাতে প্রথম ওই বাড়িতেই ঢুকেছিলেন তিনি।

শরীফুল সে রাতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, গৃহকর্তাকে আঘাত করে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে টিভি দেখে বুঝতে পারেন, বিষয়টি বেশ বড় হতে যাচ্ছে।

বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক এদিক-সেদিক ঘুরে থানেতে গিয়ে এক শ্রমিক বসতিতে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানকার নির্জন এলাকায়, ঝোঁপে নিজের আস্তানা করে নেন। বন্ধ করে দেন নিজের মোবাইল ফোন।

অবশ্য তাতেও তিনি রেহাই পাননি। হামলার ঘটনার পর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছিল।

এর আগে মুম্বাইয়ের আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় তাকে দেখা গেছে বলেও জানা যায়। তার সর্বশেষ লোকেশন দেখে পুলিশ পৌঁছে যায় থানের শ্রমিক পাড়ায়।

এর আগে সাইফের ওপর হামলার পরপরই কাজে নামে পুলিশের মোট ৩০টি দল। শতাধিক সিসি ক্যামেরার ভিডিও খতিয়ে দেখে তারা। টের পায় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন শরিফুল।

পুলিশের দাবি, প্রথমে তাকে দাদর এলাকার একটি দোকানের সামনে দেখা যায়। জানা যায়, একটি হেডফোন কিনেছেন তিনি। এর পর আন্ধেরির ডিএন নগর এলাকার একটি সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, একটি মোটরবাইক থেকে নামছেন ওই সন্দেহভাজন।

এর আগে দাদর রেলস্টেশনের বাইরে তিন বার দেখা গিয়েছিল তাকে। পাশাপাশি ওরলি কলিওয়াড়ায়ও গিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পারে। সেখানে তাকে দেখা গেছে এক ঠিকাদারের অফিসে। ওই ঠিকাদারে কাছে কাজের জন্যই গিয়েছিলেন শরীফুল। পরে পুলিশের কাছে ঠিকাদারই তার গতিবিধি জানান।

পরে থানে এলাকায় পৌঁছে পুলিশ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে শরীফুলকে। তারপরই মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমন শাখার সদস্য এবং স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, থানে এলাকায় শরীফুলকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঝোঁপ-জঙ্গলের মধ্যে জড়ো করা শুকনো ঘাসের মধ্যে শুয়ে ছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে কাস্তে জাতীয় ধারাল অস্ত্র এবং একটি তোয়ালে পাওয়া গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, খান পরিবার থেকে পুলিশের কাছে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আক্রমণকারী সাইফ এবং কারিনা কাপুর খানের ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর আলি খান জেহ’র ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছিলেন এবং ১ কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবি করেছিলেন।

সাইফের ওপর হামলার অভিযোগে এর আগে শনিবার আকাশ কৈলাশ কন্যজিয়া নামে আরেক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ছত্তিসগড় রাজ্যের একটি রেলস্টেশন থেকে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আনন্দবাজার, জি নিউজ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত