যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার বসার ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। তাদের অনেকেই খুশি, অনেকে উদ্বিগ্ন।
খুশি হওয়া নেতাদের তালিকায় আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবাসহ অনেকে।
পানামা, মেক্সিকো ও কিউবার নেতারা ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন।
কারণ অভিষেকের আগে তো বটেই, সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দেওয়া উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম্প ফের বলেছেন, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেবে যুক্তরাষ্ট্র; মেক্সিকোর অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের মদদ দেওয়ার তালিকায় ফের কিউবার নাম ঢোকানো হবে।
পানামা খালের বিষয়ে উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “পানামাকে এই খালটি উপহার দেওয়া বোকামি ছিল। তাদের এই উপহার দেওয়া উচিত হয়নি। এটি পরিচালনার দায়িত্ব চীনকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ক্ষমতা গ্রহণের মুহূর্তে পানামা খাল নিয়ে এমন মন্তব্য স্বভাবতই ভালোভাবে নেননি পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, “খালটি পানামার জনগণের। তাদের কাছেই এটি থাকবে। আমাদের প্রশাসনে বিশ্বের কোনও দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।”
খালটি পরিচালনার দায়িত্ব চীনের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে- ট্রাম্পের এ অভিযোগও অস্বীকার করেন মুলিনো।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম পারদো যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং ‘লাখ লাখ মেক্সিকান অপরাধীদের’ দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মেক্সিকোর অধিবাসীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে এক্স হ্যান্ডলে তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশের নারী-পুরুষদের আমি দুটি কথা বলতে চাই। প্রথমত আপনারা একা নন। দ্বিতীয়ত আমাদের অবশ্যই শান্ত থাকতে হবে এবং ঘটনা কী দাঁড়ায়, সেদিকে চোখ রাখতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সম্পর্ক ভালো। প্রতিবেশী ও ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে আলোচনা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা সবসময়ই আমাদের সম্পর্কের প্রতীক হয়ে থাকবে।”
এক্সে আরেক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকোর অভিবাসীদের নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সবসময় তাদের রক্ষা করব।”
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের মদদ দেওয়ার তালিকায় কিউবাকে আবার অন্তর্ভুক্ত করার ট্রাম্পের অভিপ্রায়ে ক্ষুব্ধ কিউবার প্রেসিডেন্ট মিকেল দিয়াজ-ক্যানেল। ট্রাম্পের এই ইচ্ছেকে ‘ঔদ্ধত্যমূলক ও সত্যের অপলাপ’ হিসেবে দেখছেন তিনি।
বছরের পর বছর ব্যয়বহুল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল ইসরায়েল ও ইউক্রেন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে বেশ ইতিবাচকভাবেই দেখছে।
দেশ দুটি মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
ট্রাম্পের প্রশংসা করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পররাষ্ট্রনীতি শক্তিশালী করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের অঙ্গীকার আমেরিকার নেতৃত্বকে বলিষ্ঠ করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে শান্তির দেখা পাবে মানুষ।
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতিতে অবদান রাখায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা আবার একসঙ্গে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল জোটকে আরও উচুঁতে নিয়ে যাব।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি নয় বলে আমি মনে করি। বরং সব মানুষের স্বার্থের প্রতি সম্মান জানিয়ে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে আমার ধারণা।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘প্রিয় বন্ধু’ সম্বোধন করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “দুদেশই উপকার পাবে এবং বিশ্বের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা হবে- এ লক্ষ্যে আমি আপনার সঙ্গে আবার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।”