Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

এইচএসসি : ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’য়েই কি জিপিএ-৫ এর বাড়বাড়ন্ত

ফল প্রকাশের পর মঙ্গলবার বোর্ডে নিজের ফল খুঁজছিলেন ভিকারুননিসা নূস স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষার্থী।
ফল প্রকাশের পর মঙ্গলবার বোর্ডে নিজের ফল খুঁজছিলেন ভিকারুননিসা নূস স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষার্থী।
[publishpress_authors_box]

অর্ধেক বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে এবারের এইচএসসিতে ঘোষিত ফলে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখা যাচ্ছে গতবারের চেয়ে ৫৩ হাজার বেশি।

পাসের হার সামান্য কমার মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর এই সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে ফল তৈরিকে কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। গত ৩০ জুন এই পরীক্ষা শুরুর পর আন্দোলনের কারণে তা যায় আটকে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরীক্ষা পুনরায় শুরুর উদ্যোগ নিেলও শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আসে বিরোধিতা।

চাপের মুখে নতুন করে আর পরীক্ষা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যে সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মঙ্গলবার ফল প্রকাশ করা হয়।

তাতে দেখা যায়, এইচএসসি, আলিম ও এইচএসসি ভকেশনালে পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এবার শুধু এইচএসসিতে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

এবার এইচএসসি ও সমমানে ১১ বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। প্রতিটি বিষয়ে ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছর ছিল ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। এক্ষেত্রে সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন।

আটটি সাধারণ বোর্ডে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন। গত বছর ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন। এক্ষেত্রে সংখ্যাটি বেড়েছে ৫২ হাজার ৮৫৫।

এর আগে গত পাঁচ বছরে এইচএসসি ও সমমানে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল- ২০২২ সালে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২, ২০২১ সালে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯, ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ এবং ২০১৯ সালে ৪৭ হাজার ২৮৬।

এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা গত বছরের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাবজেক্ট ম্যাপিংকে কারণ দেখান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল, তিনি হয়ত উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক অথবা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়েছে।

“ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবেই বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।”

সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল তৈরি করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের এসএসসির ফল বিবেচনায় নেওয়া হয়। অর্থাৎ কোন শিক্ষার্থী এসএসসিতে কোনও বিষয়ে যে নম্বর পেয়েছে, সেই নম্বরই তাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও শিক্ষার্থী যখন বিজ্ঞান থেকে এসএসসি পাসের পর উচ্চ মাধ্যমিকে এসে মানবিক কিংবা ব্যবসায় শিক্ষা নেয়, তখন এবার মানবিক কিংবা বাণিজ্যের কোনও বিষয়ে তিনি পেয়েছেন তার এসএসসির বিজ্ঞানের কোনও বিষয়ের নম্বর।   

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক তপন সরকার বলেন, “হয়ত মাধ্যমিকে কেউ কেমিস্ট্রিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল, এবার (উচ্চ মাধ্যমিক) সে হয়ত মানবিক বিভাগে এসে ইসলামের ইতিহাস পরীক্ষা দিতে পারেনি (পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ায়); সেই শিক্ষার্থীর কেমিস্ট্রির জিপিএ-৫ যোগ হয়েছে তার এবারের ইসলামের ইতিহাসে।”

ফল ঘোষণার পর ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের উল্লাস।

শিক্ষকরাও বলছেন, সাবজেক্ট ম্যাপিং না হলে হয়ত জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার এত হতো না।

ঢাকার সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের বাংলার প্রভাষক উজ্জ্বল কুমার সাহা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এইচএসসিতে সাত বিষয়ের বাইরে যে পরীক্ষাগুলো হয়নি, সেখানে শিক্ষার্থীদের এসএসসির পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক নম্বর দেওয়া হয়েছে। এটাই এবারে জিপিএ-৫ বেড়ে যাবার মূল কারণ।”

তার পাশাপাশি আরও দুটি কারণ চিহ্নিত করেন এই শিক্ষক; তাহলো রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং খাতা দেখতে পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া।

উজ্জ্বল সাহা বলেন, “এবারে সাতটি পরীক্ষা হয়েছে আন্দোলনের আগে। সব দেখার মতো পর্যাপ্ত সময় সব শিক্ষকরা পাননি, স্বভাবতই তাড়াহুড়ো ছিল। ছিল একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিও।”

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত সময়ের অভাব একটা কারণ হতে পারে বলে মনে করলেও ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’কেই মূল কারণ হিসাবে দেখছেন তিনি।

গড় পাসের হারে তেমন পার্থক্য না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন সরকার বলেন, “যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফল উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না।

“উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল, যার কারণে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে।”

সার্বিক ফলের মূল্যায়ন জানতে চাইলে ঢাকার বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন সরকার বলেন, “আমি তো পরীক্ষা নিতে পারিনি। যদি পরীক্ষা নিতে পারতাম, সবকিছু যদি স্বাভাবিক হতো, তাহলে আমি ভালো-মন্দ বলতে পারতাম। কিন্তু এখন আমি এই বিচার করতে পারি না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত